দল ভাঙিয়ে বিজেপি-র সুবিধা করছেন মমতা: কংগ্রেস
২৭ অক্টোবর ২০২১সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে আপাতত একটাই নীতি নিয়ে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। এককথায় সেই নীতি হলো, বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেস ভাঙাও, তৃণমূলে নেতা-নেত্রী ও কর্মীদের নিয়ে এসে ভোটে লড়াও। ত্রিপুরা, আসাম, গোয়া, উত্তরপ্রদেশে এই নীতি নিয়েই কংগ্রেস ভাঙিয়েছে তৃণমূল। ঝাড়খণ্ডেও চেষ্টা করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার গোয়া যাচ্ছেন নবগঠিত দলীয় সংগঠনের কাজে গতি দিতে এবং আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের জন্য প্রচার শুরু করে দিতে। দিন তিনেক সেখানে থাকবেন মমতা।
কংগ্রেস এতদিন চুপ থাকার পর এবার মমতার নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বুধবার দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের পর কংগ্রেস বলেছে, তৃণমূলের এই কাজের ফলে বিজেপি-র সুবিধা হবে। কংগ্রেসের মতে, তৃণমূলের আত্মসমীক্ষা করা দরকার। কিছুটা তির্যকভাবে কংগ্রেস বলেছে, ছোট বিরোধী দল বলে হয়তো সিবিআই-ইডি-র ভয় পাচ্ছে তারা। তবে কংগ্রেস সবসময়ই সিবিআই ও ইডি-র ব্যবহার নিয়ে তৃণমূলের পাশে থাকবে।
গোয়ায় কংগ্রেস নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরোকে দলে নিয়েছে তৃণমূল। তিনি তার দলবল নিয়েই তৃণমূলে এসেছেন। মমতার সফরের সময়েও বেশ কিছু নেতা ও কর্মী তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। উত্তর প্রদেশে প্রয়াত কংগ্রেস নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কমলাপতি ত্রিপাঠির নাতি ও প্রপৌত্র রাজেশপতি ও ললিতেশপতি ত্রিপাঠিকে দলে নিয়েছে তৃণমূল। তবে তাদের খুব বেশি প্রভাব নেই। মমতা জানিয়েছেন, তিনি বারাণসীতে গিয়ে পুজো দিতে চান।
আসামে সুস্মিতা দেবকে কংগ্রেস থেকে ভাঙিয়ে নিজের দলে এনেছেন মমতা। ত্রিপুরায় কংগ্রেসের অনেক নেতাই তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন।
লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী বেশ কিছুদিন ধরে বলছেন, তৃণমূল তো এভাবে কংগ্রেস ভাঙিয়ে বিজেপি-কে সুবিধা করে দিচ্ছে। এবার দলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র রণদীপ সূরযেওয়ালা বলেছেন, ‘‘সিবিআই-ইডির ডাক পড়ায় ছোট বিরোধী দলগুলি আপস করে নিচ্ছে। সবার তো সমান সাহস নেই! কংগ্রেস চায়, বিরোধী নেতা-নেত্রীরা নিজেদের বিবেকের কথা শুনুন।'' কংগ্রেসের কটাক্ষ, গোয়ায় তৃণমূল নেত্রীর সফর আসলে রাজনৈতিক পর্যটন ছাড়া আর কিছুই নয়। গোয়া থেকে মমতা পশ্চিমবঙ্গে ফেরার পরে রাহুল গান্ধী প্রচার করতে গোয়া যাবেন।
সূরজেওয়ালা বলেছেন, ‘‘নির্বাচন কোনো পর্যটন নয়। চার-পাঁচ মাস গোয়ায় সক্রিয় থাকব। তারপর সব ভুলে যাব এটা হয় না। তৃণমূল এবং সব রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে লড়তে পারে। কিন্তু কেন লড়ছেন, কাদের বিরুদ্ধে লড়ছেন, কী জন্য লড়ছেন সেই আত্মসমীক্ষাও জরুরি। নিজেদের বিবেক অনুসারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।'' এই প্রথম তৃণমূলের বিরুদ্ধে এরকম কড়া প্রতিক্রিয়া দিল কংগ্রেস। ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের পর এই প্রতিক্রিয়া আসায় বুঝতে হবে, সোনিয়া, রাহুলের সম্মতিতেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে এই আক্রমণ করা হয়েছে।
তৃণমূলের মুখপাত্র সুখেন্দু শেখর রায় বুধবার দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলনে তার জবাব দিয়ে বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় স্তরে জোট করার ডাক দেয়ার পর ছয় মাস কেটে গেছে। তৃণমূল তো অনন্ত সময় অপেক্ষা করে থাকতে পারে না। তাই পশ্চিমবঙ্গের বাইরে দলকে ছড়িয়ে দেয়ার কাজে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
তৃণমূলের এই নীতির ফলে কি বিরোধী ঐক্যের ক্ষতি হচ্ছে? প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য মনে করেন, অবশ্যই ক্ষতি হচ্ছে। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রী বিরোধী জোটের মুখ হতে চাইছেন। মমতা চেষ্টা করছেন। অন্যরাও করছেন।'' জয়ন্তের মতে, ''অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, এইভাবে দলগুলি খুব বেশি আসনে জিততে পারে না। তারা বরং বিরোধী ভোট কিছুটা ভাঙায়। ফলে সামগ্রিকভাবে বিরোধী দলের ক্ষতি হয়। বিজেপি-র মতো এখন অন্য বিরোধী দলগুলিও কংগ্রেস মুক্ত ভারত চাইছে।''
আরেক প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তার মতে, মমতা যেভাবে দলকে ছড়িয়ে দিতে চাইছেন, তাতে তৃণমূলের খুব বেশি লাভ হবে না। বরং কংগ্রেসের ক্ষতির পরিমাণটা অনেক বেশি। ডয়চে ভেলেকে শরদ বলেছেন, ''তৃণমূলের এভাবে দলকে বিস্তার করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কারণ, পশ্চিমবঙ্গের বাইরে তাদের কোনো নেতা নেই, ক্যাডার নেই। ফলে অন্য দল থেকে নেতা-কর্মী ভাঙানোটাই সহজ পথ।''
শরদের মতে, ''কংগ্রেস ভাঙানোর কাজটা সহজ। সেখানে নেতারা আছেন। তাদের সামান্য কিছু জনপ্রিয়তা আছে। অনেক নেতা দলের উপর ক্ষুব্ধ। ফলে তারা সহজেই দল ছাড়ছেন।'' শরদ মনে করেন, ''এতে কংগ্রেসের ভোট কমবে, কর্মীদের নিয়ে নেতারা চলে গেলে তাদের অবস্থা আরো খারাপ হবে। রাজনৈতিকভাবে লাভ হবে বিজেপি-র। ফলে নিজে জিততে না পারলেও কংগ্রেসের যাত্রাভঙ্গ করতে পারবেন মমতা।''
জিএইচ/এসজি (পিটিআই)