দলিত নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা
২৪ নভেম্বর ২০১৪এ ঘটনার পর এ বছরই উত্তর প্রদেশের একটি গ্রামে ১৪ ও ১৫ বছরের দুই কিশোরী মাঠে প্রস্রাব করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়৷ বাড়িতে শৌচাগার না থাকায় তারা সেখানে যেতে বাধ্য হয়৷ টিভি ফুটেজে দেখা যায় গ্রামবাসীরা নিহত একটি মেয়ের মরদেহ নিয়ে বসে আছে, যতক্ষণ না হত্যার বিচার হবে তারা লাশ সৎকার করবে না৷ এ ঘটনায় দুই পুলিশসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ মেয়ে দুটি নিখোঁজ হওয়ার পর তাদের বাবা মা থানায় গিয়ে রিপোর্ট লেখাতে চাইলেও তারা দলিত বলে রিপোর্ট নেয়নি পুলিশ৷ ভারতে নিম্ন শ্রেণির দলিতরা বরাবরই এমন বৈষম্যের শিকার হয়৷ এ বিষয়েই ডয়চে ভেলের মুখোমুখি আইন বিশেষজ্ঞ ইন্দিরা জয়সিং৷
ডয়চে ভেলে: নারীদের বিরুদ্ধে এমন সহিংস আচরণের কারণটা কি?
ইন্দিরা জয়সিং: ভারতে নারীদের যতটুকু সম্মান বা মর্যাদা দেয়া হয়, দলিতরা তার একটুকুও পায়না৷ আর গ্রামে মেয়েদের জন্য কোন শৌচাগার নেই৷ তাই তারা মাঠে যেতে বাধ্য হয়৷ সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো এই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো বরাবরই এড়িয়ে যায় কর্তৃপক্ষ৷ এছাড়া এসব গ্রামে কিছু অপরাধী চক্র আছে যারা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রতিপালিত হয় এবং এদের উপর কর্তৃপক্ষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই৷ আর যখন তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে তখন ঐ প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব বলেন, ‘‘ছেলেরা তো এমন করতেই পারে৷'' তাই এদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা রাজনীতিবিদরা, যাদের এ বিষয়ে কোনো দায়বদ্ধতা নেই৷
দলিতদের অবস্থানটা সমাজে কেমন?
ভারতে সমাজের সব থেকে নীচু জাতি, যারা দলিত নামে চিহ্নিত, তাদের সংখ্যা ১৬ কোটির মতো৷ মহাত্মা গান্ধী দলিতদের হরিজন বা ঈশ্বরের সন্তান নাম দিলেও, তাতে এদের অবস্থার ইতর বিশেষ কিছু হয়নি৷ আজও এরা অচ্ছুত৷ এদের মন্দিরে যাবার অধিকার নেই, উচ্চবর্ণের স্কুলে যাবার অধিকার নেই, উঁচু জাতের সঙ্গে এক কুঁয়ো থেকে জল নেবার অধিকার নেই৷ এমন কী একই শশ্মানে দাহ করারও অধিকার নেই৷ তাই জাতিভেদ দলিত নারীদের সহিংসতার অন্যতম প্রধান কারণ৷
যে পুলিশদের আটক করা হয়েছে তাদের যৌন সহিংসতার নতুন আইনে কী ধরনের শাস্তি হওয়ার কথা?
নতুন আইনে ভারতীয় পেনাল কোডের ১৬৬এ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা কোনো মামলা রিপোর্ট করতে রাজি না হয়, তবে তার শাস্তি ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড৷ আর যদি সে ধর্ষণের জন্য অভিযুক্ত প্রমাণিত হয়, তবে তার জন্য শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং গণধর্ষণে অংশ নিলে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে৷
এ ধরনের ঘটনা রোধে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
এখন ভারতের জন্য আসলেই দুঃখের সময়৷ তবে আশার বিষয় হলো, নারী অধিকার কর্মীরা তাঁদের আন্দোলন বন্ধ করছেন না৷ এমনকি প্রতিটি শ্রেণি পেশার মানুষ এখন এ ধরনের বর্বর নৃশংস আচরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে৷ এখন প্রয়োজন রাজনীতিক ও কর্তৃপক্ষকে দায়বদ্ধতার ব্যাপারটি স্পষ্ট করা৷
ইন্দিরা জয়সিং ভারতের সুপ্রিমকোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং ল'য়ারস কালেকটিভ এর প্রতিষ্ঠাতা৷ তিনি ভারতের প্রথম নারী ‘এডিশনাল সলিসিটার জেনারেল'৷