দার্জিলিংয়ে চাপে পড়েছেন গুরুং
১৩ জুন ২০১৭সোমবার থেকে দার্জিলিংয়ে শুরু হয়েছে এক বিচিত্র ‘বন্ধ'৷ একমাত্র সরকারি দপ্তর এবং গোর্খা স্বশাসিত পরিষদের দপ্তর রয়েছে এই বন্ধের আওতায়৷ বিভিন্ন ব্যাঙ্কের স্থানীয় শাখাগুলির প্রতি নির্দেশ, সপ্তাহে তিনদিন খোলা রাখার, বাকি তিনদিন বন্ধ থাকবে ব্যাঙ্ক৷ এর বাইরে, বাজার, দোকানপাট খোলা থাকবে, রাস্তাঘাটে যান চলাচল চালু থাকবে, পর্যটকদের যাতায়াতেও কোনও বাধা থাকবে না৷ এমন অদ্ভুত একটি বন্ধ চলবে, নাকি অনির্দিষ্ট কালের জন্য৷ বিব্রত গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতা বিমল গুরুং সাফাই দিয়েছেন, এ তাঁদের যুব মোর্চার ডাকা বন্ধ, যাতে তাঁরা নৈতিক সমর্থন দিচ্ছেন মাত্র৷ অর্থাৎ চাইলেই পাহাড়ে ফের সর্বাত্মক বন্ধ ডেকে দিতে পারে মোর্চা, কিন্তু দিচ্ছে না৷ কিন্তু সেটুকুও সফল করতে ব্যর্থ হলো মোর্চা৷ আতঙ্ক ছড়ানোর উদ্দেশ্যেই সরকারি পূর্ত দপ্তরের একটি অফিসে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল মোর্চা কর্মীরা৷ তার পরেও সোমবার দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে হাজিরার হার ছিল ৯০ শতাংশের বেশি৷ সেনা পাহারায় অফিস গেছেন কর্মীরা এবং নির্বিবাদে কাজ করেছেন৷
আসলে বিমল গুরুংয়ের দায়সারা ঘোষণাতেই পরিস্কার হয়ে গেছে, দার্জিলিংয়ের পর্যটন ব্যবসার আর কোনও ক্ষতি হোক, সেই ঝুঁকি তাঁরা নিতে চাইছেন না৷ কারণ, এর আগে মোর্চার হঠকারী আন্দোলন এবং এই হঠাৎ হঠাৎ ডাকা বন্ধের কারণে অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে দার্জিলিংয়ের হোটেল মালিক এবং পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষের৷ ফলে এঁরা সবাই গোপনে অথবা প্রকাশ্যে মোর্চার বন্ধ রাজনীতির বিরোধিতা করতে শুরু করেছেন৷ কাজেই বিমল গুরুং মোটেই চাইছেন না, যে পাহাড়ের অর্থনীতির ক্ষতি করার দায়ে তাঁর পাশ থেকে এই মানুষগুলো চলে যাক৷
হঠাৎ বন্ধ ডাকলে কী ব্যাপক অসুবিধে হয় পর্যটকদের, তা গত কয়েকদিনে টের পাওয়া গেছে দার্জিলিংয়ে৷ যদিও মাত্র ১২ ঘণ্টার বন্ধের ডাক ছিল, কিন্তু তার আগের অশান্তি এবং পরের উত্তেজনা আর আতঙ্কের কারণে বেড়াতে আসা লোকজনের ছুটির আনন্দ বিরক্তি আর বিষাদে বদলে গেছে৷ বন্ধের দিন যাঁদের দার্জিলিং আসার কথা, বা দার্জিলিং থেকে সমতলে নেমে বাড়ি ফেরার ট্রেন, প্লেন, ইত্যাদি ধরার কথা, তাঁরা চরম সমস্যায় পড়েছিলেন৷ বাস কিছু ছেড়েছে রাতভোরে, যা ধরার জন্য মরিয়া পর্যটকরা আগের রাত থেকে বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে বসেছিলেন৷ এদিকে বন্ধের মেয়াদ ফুরোবার পরও দোকান-বাজার কিছুই খোলেনি৷ জানালেন, দার্জিলিংয়ের এক বাঙালি হোটেল ম্যানেজারের স্ত্রী কৃষ্ণা৷
তাঁর সঙ্গে ডয়চে ভেলের যখন কথা হয়, তখন রাত নয়টা৷ কৃষ্ণা জানাচ্ছেন, অত রাতেও বহু পর্যটক হোটেল থেকে চেক আউট করে যাচ্ছিলেন, দার্জিলিংয়ে যেটা খুব অস্বাভাবিক একটা ঘটনা৷ কিন্তু এঁরা কেউ ফের আটকে যাওয়ার ঝামেলায় পড়তে রাজি ছিলেন না৷ অন্যদিকে যাঁরা দার্জিলিংয়ের কাছাকাছি নানা জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন, তাদেরও সব ভন্ডুল হয়ে হোটেলবন্দী হয়ে থাকতে হয়েছে গত কয়েকদিন৷
কলকাতার রাজশ্রী মুখার্জি এই সময় ছিলেন দার্জিলিং জেলার আরেক হিল স্টেশন কার্শিয়াংয়ে৷ তিনি জানালেন, যদিও বন্ধের কারণে স্বাভাবিক জনজীবন থমকে ছিল গোটা পাহাড়েই, যান যাতায়াত বন্ধ ছিল, কিন্তু গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার জঙ্গি আন্দোলন দার্জিলিং শহরের বাইরে বেরোয়নি৷ কার্শিয়াংয়ে বসে গত কয়েকদিনের হাঙ্গামা, উত্তেজনার কিছুই বোঝেননি রাজশ্রী৷ তাঁর মনে হয়েছে, বন্ধ ব্যাপারটা পাহাড়ের মানুষের এতটাই গা সওয়া হয়ে গেছে যে তাঁরা আর এসবকে খুব একটা পাত্তা দেন না৷ এবং বিমল গুরুং নিজেও লোকের এই নিরাসক্তি টের পাচ্ছেন৷ বিলক্ষণ বুঝছেন, যে যতই তিনি নিজেকে ‘পাহাড়ের মুখ্যমন্ত্রী' হিসেবে ঘোষণা করুন, নতুন করে লোক খেপিয়ে তোলার কাজটা আর অত সহজ হবে না৷