দাড়িভিটের ছাত্র মৃত্যুর তদন্ত এনআইএ-র হাতে
১১ মে ২০২৩উত্তর দিনাজপুরের দাড়িভিট হাই স্কুলের ঘটনায় রাজ্য জুড়ে প্রবল হইচই হয়েছিল। পাঁচ বছর আগে ২০ সেপ্টেম্বর স্কুলের শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। স্কুল চত্বরেই হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। গন্ডগোলের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান স্কুলের দুই সাবেক ছাত্র তাপস বর্মণ ও রাজেশ সরকার।
অভিযোগ, পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় এই দুই তরুণের। ঘটনাস্থলে বিস্ফোরণও হয়েছিল বলে শোনা যায়। এই মামলায় সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছিল নিহতদের পরিবার। এমনকী দু'টি মৃতদেহ সৎকার না করে নদীর চরে কবর দিয়ে রাখা হয়। এতদিন রাজ্য পুলিশের সিআইডির হাতে তদন্তভার ছিল। তাদের তদন্তে খুশি হয়নি কলকাতা হাইকোর্ট।
দাড়িভিটের ঘটনায় শক্তিশালী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু পাঁচ বছর কেটে গেলেও এই আগ্নেয়াস্ত্র চিহ্নিত করতে পারেনি সিআইডি। গুলি চালানোর অভিযোগও পুলিশ অস্বীকার করে। তদন্তের এই গতিপ্রকৃতি দেখে আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে, এমনটা অনুমান করা হচ্ছিল। যদিও বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা এনআইএ-কে দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালতে নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছে নিহতদের পরিবার। তাপসের মা মঞ্জু বর্মণ বলেন, "আমি জানতাম বিচার একদিন পাবই। এবার দোষীরা সাজা পাবে।" রাজেশের বাবা নীলকমল সরকারের বক্তব্য, "রাজ্য পুলিশে আস্থা ছিল না বলেই সিবিআই চেয়েছিলাম। এনআইএ অপরাধীদের ধরবেই।"
এনআইএ তদন্ত নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূলের তরজা শুরু হয়েছে। তাপস ও রাজেশকে আগেই ভাষা শহিদের মর্যাদা দিয়েছে বিজেপি। তাদের দাবি, স্কুলে উর্দু পড়ানোর প্রতিবাদ করছিলেন এই দুই তরুণ। বুধবার আদালতের নির্দেশের পর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর টুইট বার্তা, "সত্য সামনে আসবে। বাংলা ভাষা শহিদ রাজেশ ও তাপস বিচার পাবেন।"
আদালতের নির্দেশ নিয়ে মন্তব্য করেনি তৃণমূল কংগ্রেস দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, "দাড়িভিটের অশান্তি ছিল পরিকল্পিত। সিবিআই বা এনআইএ তদন্ত নিয়ে বিজেপি যে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে, তাতে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হচ্ছে।" শিবপুর, রিষড়া, শ্রীরামপুর, ডালখোলার অশান্তির ঘটনায় বৃহস্পতিবার ছটি মামলা রুজু করেছে এনআইএ।
সিআইডির কাছ থেকে তদন্তভার হস্তান্তরিত হওয়ায় রাজ্য পুলিশের ব্যর্থতা সামনে এসেছে বলে মত বিরোধীদের। এ বিষয়ে রাজ্যের সাবেক পুলিশকর্তা নজরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "পুলিশ ব্যর্থ বা অপদার্থ নয়। পুলিশ তদন্ত করে দোষীদের ধরতে পারে না, সেটাও নয়। আসলে পুলিশ শাসক দলের নেতাদের কথায় কাজ করে, পক্ষপাতিত্ব করে। তাই তারা ঠিকঠাক তদন্ত করতে পারে না।"
সম্প্রতি রাজ্যের একাধিক ঘটনার তদন্তভার পেয়েছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা। একবালপুর- মোমিনপুরে অশান্তি, শিবপুর, রিষড়া, ডালখোলায় গন্ডগোলের ঘটনা তদন্ত করছে তারা। পুলিশের হাতে থেকে দাড়িভিটের তদন্ত এনআইএ-র হাতে গেলেও সংশয়ে মানবাধিকার কর্মীরা। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি বা এপিডিআর-এর রাজ্য সম্পাদক রঞ্জিত শূর ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এনআইএ তদন্ত অনেক ক্ষেত্রে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে চালিত হতে দেখা যায়। তাই পরিবার যখন সিবিআই চেয়েছিল, তাদের দায়িত্ব দিলেই ভাল হত।"
দাড়িভিটের ঘটনার তদন্ত করছিল মানবাধিকার কমিশনও। তাদের ভূমিকাও সমালোচিত হয়েছে আদালতে। এই সমালোচনাকে সঙ্গত বলে মনে করছেন রঞ্জিত। তার বক্তব্য, "রাজ্য বা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নিজেরা তদন্ত করে না। পুলিশের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠায়। পুলিশ অভিযুক্ত হলে অন্য পুলিশকে রিপোর্ট পাঠানোর দায়িত্ব দেয়। দাড়িভিটের ক্ষেত্রে কমিশন তাদের ন্যূনতম দায়িত্ব পালন করেনি।"
শুধু মানবাধিকার কমিশন নয়, অন্যান্য সংস্থাও রাজ্যে সক্রিয় নয় বলেই মত ড. ইসলামের। তিনি বলেন, "মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন, ভিজিল্যান্স কমিশন, পুলিশের ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ, এ সব কিছুকেই অকেজো করে রেখেছে রাজ্য সরকার। যেহেতু শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীরা দুর্নীতিতে যুক্ত। তাহলে কী করে এ সব সংস্থা কাজ করবে?"