দায়িত্ববোধ ও মাত্রাজ্ঞানের অভাব
২৬ নভেম্বর ২০১৪সংশয় রয়ে গিয়েছিল, ফলে রায় অভিযুক্তের পক্ষেই গেল৷ জুরিমণ্ডলী শেষ পর্যন্ত মামলার বিরুদ্ধে অবস্থান নিল৷ বলা হয়েছে, সাক্ষীদের বয়ানের মধ্যে প্রচুর অসঙ্গতি ধরা পড়েছে৷ পুলিশ কর্মী ড্যারেন উইলসন কর্তব্যে গাফিলতি করেছেন বা আইন ভেঙেছেন, এমন কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণও পাওয়া যায়নি৷ উইলসন নিজে এক বিবৃতিতে ১৮ বছর বয়স্ক তরুণের হত্যার ক্ষেত্রে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন৷ বলেছেন, তাঁকে যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল, সেই অনুযায়ী তিনি পদক্ষেপ নিয়েছেন৷ শীতল কণ্ঠে সবজান্তা মনোভাব দেখিয়ে কথা বলেছেন তিনি৷ নিজেই গুলি চালিয়ে নিজেকেই শিকার হিসেবে তুলে ধরেছেন উইলসন৷ এর থেকে তিনি নীরব থাকলেই ভালো হতো!
দ্বিতীয় শ্রেণির পুলিশ
কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিয়ে উইলসন গোটা দেশে অ্যাফ্রো-অ্যামেরিকান সম্প্রদায়ের পক্ষে জুরিমণ্ডলীর রায় মেনে নেওয়া আরও কঠিন করে তুলেছেন৷ ড্যারেন উইলসন কোনো জনপ্রিয় চরিত্র নয়৷ গোটা বিশ্বে অ্যামেরিকান পুলিশ সম্পর্কে যে ধারণা চালু আছে, তিনি তারই প্রতিমূর্তি৷ তারা আগে গুলি চালায়, তারপর প্রশ্ন করে৷ সমস্যা হলো, এই ধারণা যে ভুল নয়, প্রায়ই তার প্রমাণ পাওয়া যায়৷
তথ্য-পরিসংখ্যান এক স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরছে৷ অ্যাফ্রো-অ্যামেরিকান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পুলিশের মাত্রাতিরিক্ত হিংসা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক বাস্তব সত্য, যদিও মার্কিন নাগরিকরা বিষয়টি ঢেকে রাখার চেষ্টা করেন৷ পুলিশের প্রশিক্ষণের মধ্যেও অনেক ত্রুটি রয়েছে৷ জার্মানিতে এক্ষেত্রে যে মানদণ্ড রয়েছে, তা সেখানে খাটে না৷ কোনো ব্যক্তিকে যদি ফ্রাংকফুর্ট শহরে পুলিশের কাজ করার জন্য উপযুক্ত বলে না মনে করা হয়, তিনি অন্য এক শহরে সেই কাজ পাবেন, এমনটা কল্পনাও করা যায় না৷ কিন্তু অ্যামেরিকার মিসুরি রাজ্যে সেটাই ঘটছে৷ ভালো পুলিশকর্মীরা সেন্ট লুইস শহরে টহল দিতে পারেন৷ তাঁদের ‘কম ভালো' সতীর্থদের ফার্গুসনের মতো সামাজিক সমস্যার কেন্দ্রে পরিস্থিতি সামলানোর জন্য পাঠানো হয়৷ সেখানে ‘দ্বিতীয় শ্রেণি'-র এই পুলিশকর্মীদের বেতনও কম৷ ফলে তাদের উদ্যমও যে কম, তাতে অবাক হবার কারণ আছে কি?
নতুন করে বর্ণবাদ-ভিত্তিক অশান্তি?
মাইকেল ব্রাউনের মৃত্যু শুধু একটা মর্মান্তিক ঘটনা নয়৷ পুলিশ ভাবনাচিন্তা না করেই তাড়াহুড়ো করে অস্ত্র ব্যবহার করছে, এমন ঘটনাও বিচ্ছিন্ন নয়৷ প্রায় প্রতিদিনই অ্যামেরিকায় কোথাও না কোথাও এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায়৷ সবকটি ঘটনা সংবাদ শিরোনাম পর্যন্ত পৌঁছয় না৷ মাইকেল ব্রাউনের ঘটনা গোটা দেশে বর্ণবাদ-ভিত্তিক অশান্তি ছড়িয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে৷ রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিষয়টিকে কীভাবে সামাল দেয়, তার উপর অনেকটা নির্ভর করবে৷ প্রেসিডেন্ট ওবামা ও ওয়াশিংটনের নেতাদের আচরণ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ৷
মিসুরির রাজ্য স্তরের রাজনীতিকরা যে একেবারেই পরিস্থিতি সামাল দেবার যোগ্য নন, সেটা তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছেন৷ যেমন গভর্নর জে নিক্সন৷ ফার্গুসন শহরে আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব কার, এক সাক্ষাৎকারে তিনি সেই প্রশ্নেরও জবাব দিতে পারেননি৷ তোতলামি করে তিনি এখন সারা দেশে পরিহাসের পাত্র হয়ে উঠেছেন৷ দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কৌঁসুলি রবার্ট পি ম্যাককোলো-ও এই ঘটনার ক্ষেত্রে দায়িত্ববোধের পরিচয় দেননি৷ মাইকেল ব্রাউনের মৃত্যুর পর অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ করেছেন৷ কারণ ম্যাককোলো-র বাবাও পুলিশ ছিলেন এবং এক অ্যাফ্রো-অ্যামেরিকানের গুলিতে প্রাণ হারান৷ তিনি সব তথ্য-প্রমাণ জুরিমণ্ডলীর হাতে তুলে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ ভালো হতো, যদি তিনি এই ‘কেস'-টি কোনো বিশেষ কৌঁসুলির হাতে তুলে দিতেন৷ সেই ব্যক্তি তখন জুরিমণ্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে বসে সে সব পরীক্ষা করে দেখতে পারতেন৷ ম্যাককোলো এমন প্রস্তাবে কান দেননি৷ অহংবোধ অথবা দায়িত্ববোধ সম্পর্কে ভুল ধারণা হয়ত তাঁকে এমন আচরণে উদ্বুদ্ধ করেছে৷ শেষ পর্যন্ত তিনি নিজের এলাকার প্রতি কোনো দায়িত্ব পালন করেননি৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছেন – মিসুরি রাজ্যে এমন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের তালিকা বেশ দীর্ঘ৷ যেমন ফার্গুসন শহরের মেয়র৷ রাজনীতির ক্ষেত্রে যোগ্যতার অভাবের বিরুদ্ধে অবশ্যই তেমন কিছু করার থাকে না৷ নাগরিকদের অন্য জনপ্রতিনিধি বেছে নিতে হবে৷
তবে অ্যামেরিকায় রাজনীতি ও বিচারব্যবস্থা ব্যবস্থা সম্পর্কে হতাশার মনোভাব হিংসাত্মক কার্যকলাপের অজুহাত হতে পারে না, যেমনটা বার বার দেখা যাচ্ছে৷ যারা দোকানে লুটপাট করছে ও গাড়িতে আগুন লাগাচ্ছে, তাদের জেলে পাঠানো উচিত৷ ফার্গুসনের বাসিন্দাদের ভাবতে হবে, কীভাবে উত্তেজনা কমানো সম্ভব৷ মাইকেল ব্রাউনের বাবা-মা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তুলে ধরছেন৷ তাঁরা শান্তি ও শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপের ডাক দিচ্ছেন৷ স্থানীয় গির্জা, শ্রমিক সংগঠন ও এনজিও-গুলিও একই সুরে আহ্বান জানাচ্ছে৷ অ্যামেরিকার জন্য এই কঠিন সময়ে তাঁদের সবার বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে৷