1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দিল্লি পুলিশের বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে ফের বিতর্ক

স্যমন্তক ঘোষ নতুন দিল্লি
২১ জানুয়ারি ২০২০

প্রতিবাদীদের গ্রেফতারের বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে দিল্লি পুলিশকে। এ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজধানীতে।

https://p.dw.com/p/3WWye
ছবি: Reuters/D. Siddiqui

বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না দ্বিতীয় বিজেপি সরকারের। এনআরসি, সিএএ নিয়ে দেশ জোড়া বিতর্ক এবং বিক্ষোভের পর এ বার রাজধানী দিল্লিতে নয়া আলোচনা এনএসএ বা জাতীয় নিরাপত্তা আইন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের নির্দেশে সম্প্রতি দিল্লির লেফটন্যান্ট জেনারেল পুলিশের হাতে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করেছেন। যার সাহায্যে আগামী ৩ মাস গ্রেফতারি পরোয়ানা বা কোনও কাগজ ছাড়া যে কাউকে আটক করতে পারবে পুলিশ। আটক ব্যক্তিকে জেলে রাখতে পারবে এক বছর। সন্দেহ হলে কাউকে জেরা করার অধিকার পুলিশের থাকবে৷ বিরোধীদের বক্তব্য, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজধানীতে যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের ভয় দেখাতেই এই 'কালা কানুন' ব্যবহার করছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। যদিও বিজেপি তা মানতে নারাজ।

বিতর্কে ঢোকার আগে এক নজরে বুঝে নেওয়া যাক এনএসএ বা জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অর্থ কী? ১৯৮০ সালে কংগ্রেস সরকারের আমলে জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রথম তৈরি হয়। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে ব্রিটিশ ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একই ধরনের আইনের প্রয়োগ করা হত। ১৯৮০ সালে জরুরি অবস্থার ঠিক পরে কংগ্রেস এই আইন নিয়ে এসে আসলে বিরোধীদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিল। যদিও এই মতের পাল্টা যুক্তিও আছে। কংগ্রেস বরাবরই দাবি করে, সাধারণ মানুষের উপরে কখনওই তারা এই আইন প্রয়োগ করেনি। সমাজ বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই এই আইন তৈরি হয়েছিল।

বর্তমান পরিস্থিতিতে দিল্লি পুলিশের হাতে এই আইন তুলে দেওয়া নিয়ে যে বিতর্ক হচ্ছে, সেখানে একটি কথা মনে রাখা জরুরি। এই প্রথম দিল্লি পুলিশকে এই বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হল না। এর আগেও বহু সময়ে দিল্লি পুলিশ তথা দেশের বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ এই আইন ব্যবহার করেছে। তবুও বর্তমান পরিস্থিতিতে দিল্লি জুড়ে যেখানে রোজ প্রতিবাদ হচ্ছে, বিক্ষেোভ হচ্ছে, পুলিশের হাতে তখন এই ক্ষমতা দেওয়া রাজনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

দিল্লিবাসী এবং জাতীয় স্তরের বিশিষ্ট সমাজকর্মী শবনম হাসমি ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''এনএসএ প্রাথমিক ভাবে একটি অগণতান্ত্রিক আইন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকার এই আইনের অপপ্রয়োগ করেছে। দেশ জুড়ে বিজেপি এখন কোণঠাসা। বিক্ষোভ হচ্ছে সর্বত্র। দিল্লির দিকে দিকে আন্দোলন হচ্ছে। তারই মধ্যে নির্বাচন আসন্ন। এমন পরিস্থিতিতে বিজেপি যেনতেনপ্রকারেণ আন্দোলনকারীদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে এবং গ্রেফতার করার ব্যবস্থা করছে। সে জন্যই পুলিশকে ৩ মাসের জন্য এই ক্ষমতা দেওয়া হল। তবে এ ভাবে বিক্ষোভ বন্ধ করা যাবে না।''

বিজেপি অবশ্য বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তার দিক থেকে দেখানোর চেষ্টা করছে। বিজেপির মুখপাত্র সুদেশ বর্মা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''জাতীয় স্বার্থে এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে৷ এ নিয়ে হইচইয়ের কোনও অর্থ নেই৷ সরকার কারও অদিকার হরণ করে না৷ তার ওপর সজাগ আদালত রয়েছে৷'' দিল্লি বিজেপির নেতা তথা বিজেপি যুব মোর্চার সম্পাদক সৌরভ সিকদারের বক্তব্য, সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানোর প্রশ্নই ওঠে না। তবে একই সঙ্গে মনে রাখা দরকার, দিল্লি দেশের রাজধানী। এখানে দিনের পর দিন রাজপথ বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখানো যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ভিতরে একদল ছাত্র দেশ বিরোধী কার্যকলাপ করছেন। যখন তখন রাস্তা বন্ধ করে প্রতিবাদ দেখানো হচ্ছে। পুলিশকে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে।

বিজেপি যা-ই বলুক, এনএসএ নিয়ে বিতর্ক বন্ধ হচ্ছে না। দিল্লির শাসক দল আপের বক্তব্য, বিজেপি ভয় পেয়ে গিয়েছে। সে জন্য নির্বাচনের আগে সাধারণ মানুষকে এবং প্রতিবাদীদের ভয় দেখানোর জন্যই এই আইনের ব্যবহার করার পরিকল্পনা হচ্ছে। পুলিশকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দিয়ে প্রশাসনকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহারের চেষ্টা হচ্ছে। বিরোধীদের জেলে ভরার পরিকল্পনা হচ্ছে। আপ নেতা অনুপ ঠাকুরের মন্তব্য, ''বিজেপি এ ভাবে বিরোধী কণ্ঠ বন্ধ করতে পারবে না। ওরা যত আইনের অপব্যবহার করবে, মানুষ ততই ওদের থেকে দূরে চলে যাবেন।'' কার্যত একই কথা বলছেন কংগ্রেস নেতারাও। শুভঙ্কর সরকারের মতে, ''বিজেপি মরিয়া হয়ে গিয়েছে। গণতান্ত্রিক পথ থেকে ওরা অনেক আগেই সরে গিয়েছে। স্বৈরাচারীর মতো প্রশাসনকে ব্যবহার করতে শুরু করেছে।'' কিন্তু এনএসএ তো কংগ্রেস আমলের আইন? শুভঙ্করের উত্তর, ''সেটা সাধারণ মানুষকে সমস্যায় ফেলার জন্য নয়, সমাজ বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। বিজেপি এই আইনটাকে নিয়ে যে ভাবে প্রচার করছে তাতেই বোঝা যায় যে, তারা মানুষকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে।'' দিল্লি পুলিশ অবশ্য এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চায়নি।

তবে প্রাক্তন উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্মচারীরা এনএসএ নিয়ে নতুন এই আলোচনায় পুরনো বিতর্ক ফিরিয়ে আনতে চাইছেন। প্রাক্তন আইপিএস অফিসার সন্ধি মুখোপাধ্যায় মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ১৯৭৯ সালে পুলিশ বিভাগের সংস্কারের দাবি উঠেছিল পুলিশের ভিতরেই। যার জেরে ধরমবীর কমিশন তৈরি হয়েছিল। ১৯৮০ সালে সেই কমিশন বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছিল। পুলিশ বিভাগকে সরাসরি সরকারি হস্তক্ষেপের বাইরে আনার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু কোনও সরকারই তা মেনে নেয়নি। বস্তুত, ধরমবীর কমিশনের সেই প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করে সুপ্রিম কোর্টেও পৌঁছে গিয়েছিলেন কিছু প্রাক্তন উচ্চ পদস্থ আইপিএস। তাঁদের মামলার উপর ভিত্তি করে ২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্ট পুলিশ বিভাগের সংস্কারের বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও সরকার তা কার্যকর করেনি। সন্ধিবাবুর বক্তব্য, বিজেপি সরকার দিল্লি নির্বাচনের আগে যে ভাবে পুলিশের হাতে এই ক্ষমতা তুলে দিল তাতে বোঝাই যাচ্ছে, পুলিশকে সরাসরি রাজনীতির ঢাল হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হওয়া উচিত, এবং হচ্ছেও। তবে সাময়িক প্রতিবাদ না করে ফের ধরমবীর কমিশনের প্রস্তাবগুলি নিয়ে আলোচনা হলে বিতর্কটি আরও প্রাসঙ্গিক হবে।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলে, দিল্লি ব্যুরো