বাসে গণধর্ষণ
১৯ ডিসেম্বর ২০১২গত রবিবার দিল্লিতে চলন্ত বাসে এক মেডিকাল ছাত্রীর ধর্ষণকাণ্ডের পর ‘‘ধর্ষণের রাজধানী দিল্লি'' – এই তকমাটা চেপে বসেছে শহরের গায়ে৷ বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে দিল্লিতে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে৷ এর বিরুদ্ধে পথে নেমেছে আমজনতা, ছাত্র সংগঠন, বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা৷ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে বুধবার পুলিশ লাঠি চালায়, জলকামান ব্যবহার করে৷ জনৈক বিক্ষুব্ধ ছাত্রী বলেন, ‘‘আমরা চুপ থাকবো না৷ আমরা চাই ধর্ষিতা তরুণীর প্রতি ন্যায়বিচার, যিনি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে যুজছে৷''
উল্লেখ্য, ধর্ষিতা তরুণীর অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন৷ তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে৷ প্রচণ্ড আঘাতে তাঁর শরীরের ভেতরে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে বুধবার৷ কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং আরো অনেকে তাঁকে দেখতে হাসপাতালে যান৷ তরুণীটির অবস্থার দিকে নজর রাখতে একজন আইপিএস মহিলা অফিসার মোতায়েন করেছে সরকার৷ তিনি নিয়মিতভাবে ডাক্তার ও মেয়েটির বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন৷
ধর্ষণকাণ্ড নিয়ে বুধবারও সংসদ উত্তাল৷ বিরোধীদের শান্ত করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই ধরণের ঘটনা রোধে এক গুচ্ছ সুপারিশের কথা ঘোষণা করেন৷ যার মধ্যে আছে, দিল্লির পাবলিক বাসে বা বাণিজ্যিক বাহনে কালো কাঁচ এবং পর্দা লাগানো চলবে না৷ ডিউটি শেষে বাস রাখতে হবে বাস মালিকের কাছে৷ ড্রাইভার বা কর্মচারিদের কাছে নয়৷ পারমিটের শর্তাদি লঙ্ঘন করলে বাস বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং পারমিট বাতিল করা হবে৷ ড্রাইভারের লাইসেন্স এবং ফটো ভালোভাবে টাঙিয়ে রাতে হবে বাসে৷ পুলিশ কন্ট্রোল ভ্যানের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে৷ সর্বোপরি, ধর্ষণের শাস্তি আরও কঠোর করতে ফৌজদারি আইনবিধি সংশোধনী প্রস্তাব সংসদের বিবেচনাধীনও আছে৷
বিজেপি এবং মহিলা সংগঠনগুলির দাবি, ধর্ষণের শাস্তি হওয়া উচিত ফাঁসি৷ কিন্তু এই নিয়ে বিতর্ক আছে৷ বিশিষ্ট আইনজীবী রামজেঠমালানির মতে, ‘‘এটা ধোপে টিকবে না৷ ফাঁসি মানে কয়েক সেকেন্ডেই শেষ, কিন্তু যাবজ্জীবন হলে তিল তিল করে শাস্তি সারা জীবন ধরে৷''
নাগরিক সমাজের একাংশের মতে, ফাঁসি যেখানে উঠে যাচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব দেশে, সেখানে ফাঁসির বদলে উপযুক্ত শাস্তি হলো ধর্ষককে খোজা করে দেয়া, যাতে ভবিষ্যতে সে তার যৌনাঙ্গ ব্যবহার করতে না পারে৷ তাঁদের মতে, বাসে কালো কাঁচ বা পর্দা ব্যবহার নিষিদ্ধ করে ধর্ষণ রোধ করা যাবে না৷