দিল্লির আন্দোলনে কলকাতার লোক কেন?
১ অক্টোবর ২০২৩সোমবার রাজধানীতে বিরাট আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তৃণমূলের অঘোষিত দুই নম্বর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও শেষ মুহূর্তে তাকে পরিকল্পনায় কিছু বদল আনতে হচ্ছে। কারণ আস্ত একটি ট্রেন ভাড়া করে কর্মীদের দিল্লিতে আনার কথা ভেবেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে রেল তৃণমূলকে সেই স্পেশাল ট্রেন দিচ্ছে না। যা নিয়ে রেলের সঙ্গে নতুন করে বিবাদ শুরু হয়েছে তৃণমূলের। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, রাজ্যের সমস্ত এমপি, এমএলএ এবং পঞ্চায়েত প্রধানেরা এই আন্দোলনে অংশ নেবেন। ২ এবং ৩ অক্টোবর দিল্লির রাজপথে এই আন্দোলন হবে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে। কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গকে ন্যায্য টাকা দেয় না, অভিযোগ এমনই।
অভিযোগ নতুন নয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের প্রায় সমস্ত পর্যায়ের নেতা-মন্ত্রীরাই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলেন। বস্তুত, এর আগে পশ্চিমবঙ্গে যখন বামেদের শাসন ছিল, তখনো কেন্দ্রের তৎকালীন সরকারগুলির বিরুদ্ধে একই অভিযোগ বারংবার তুলেছে রাজ্য। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, দেশের অন্য রাজ্যগুলিও মাঝেমধ্যেই এমন অভিযোগ তোলে।
কেন্দ্র আবার অভিযোগ করে, রাজ্য কেন্দ্রীয় প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে দেয় না। কেন্দ্রের টাকা ফেরত যায়। চক্রবৎ এই অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগ ইতিহাসের কালস্রোত বেয়ে চলতে থাকে।
তৃণমূলের নেতারা, এমপি-রা আগেও দিল্লিতে এই অভিযোগ নিয়ে আন্দোলন করেছেন। অবস্থান বিক্ষোভ করেছেন। তাদের করার অধিকার আছে, কারণ, তারা পার্লামেন্টের সদস্য। কিন্তু আগামী আন্দোলনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে পরিকল্পনা করেছেন, তা অভূতপূর্ব। রাজ্যের সমস্ত এমএলএ এবং পঞ্চায়েত প্রধানদেরও তিনি দিল্লিতে নিয়ে আসছেন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে আরো মানুষকে নিয়ে আসার পরিকল্পনা তাদের ছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত পরিকল্পনা কিছুটা ছোট করতে হয়েছে। অভিষেককে ৩ অক্টোবর ইডি ফের তলব করেছে। অভিষেককে ৩ অক্টোবর ইডি ফের তলব করেছে। ২ তারিখ দিল্লি থাকলেও ৩ তারিখ তিনি দিল্লিতে বিক্ষোভে না-ও থাকতে পারেন। উপরন্তু ট্রেন না পাওয়ায় সকলকে দিল্লি আনা যাবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে অভিষেকের দিল্লিতে এসে এই আন্দোলন যে একটি রাজনৈতিক চমক, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন আন্দোলনের সম্পূর্ণ অধিকার আছে তার এবং তার দলের। কিন্তু প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, 'ইন্ডিয়া'র শরিকদের তিনি এই আন্দোলনে শামিল করতে পারছেন না কেন? এখনো পর্যন্ত যা খবর পাওয়া গেছে, ইন্ডিয়া জোটের কোনো দলই তৃণমূলের এই আন্দোলনে থাকছে না। স্বয়ং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীও নন। কংগ্রেসের জাতীয় নেতারাও নন। সেই শূন্যস্থান পূর্ণ করতেই কি রাজ্য থেকে লোক 'ভাড়া' করে আনতে হচ্ছে অভিষেককে?
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে এমনই এক বিরোধী জোট তৈরি হয়েছিল। অ-কংগ্রেসি ও অ-বিজেপি সেই জোটের অন্যতম নেত্রী ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লির কুর্সি দখলের ডাক দিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় দিল্লির রামলীলা ময়দানে আন্না হাজারের ঐতিহাসিক আন্দোলন চলছিল। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সেই আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সেখান থেকেই তার রাজনীতিতে উত্থান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই মঞ্চে বক্তৃতা দিতে এসেছিলেন। মনে করা হয়েছিল, ওই মঞ্চ থেকেই জাতীয় নির্বাচনের মুখ হয়ে উঠবেন মমতা। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছিল, মমতার সভায় মাছি তাড়ানোরও লোক ছিল না। সভার পরিস্থিতি দেখে আন্না হাজারেও শেষপর্যন্ত সভায় আসেননি।
ইতিহাসের সেই পাঠ মনে রেখেই কি ঠিক দশ বছর পর ট্রেন ভাড়া করে লোক এনে দিল্লির মঞ্চ ভরাতে চাইছেন অভিষেক? এত কিছুর পরেও ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের ভরসা করতে পারছেন না? প্রশ্নগুলো সহজ, উত্তর তত সহজ নয়।