বিদেশি হত্যার পর ‘পর্যটন বর্ষ’
২৮ অক্টোবর ২০১৫পর্যটন অনেক দেশের জন্যই আয়ের অন্যতম উৎস৷ যে দেশে বসে এই লেখা লিখছি, জার্মানি, দেশটিতে চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত ভ্রমণ করেছেন সাড়ে তিন কোটি মানুষ৷ গোটা বিশ্বের মধ্যে পর্যটকদের অন্যতম পছন্দ হচ্ছে জার্মানি৷ প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ ইউরোপে আসেন শুধু ঘুরতে৷ আর ইউরোপীয়রা ইউরোপ ছাড়াও ঘুরতে যান এশিয়ায়৷ বিশেষ করে থাইল্যান্ডে ইউরোপীয় পর্যটকের সংখ্যা অনেক৷ ভারতেও প্রতি বছর অনেক পর্যটক যান৷
পর্যটকরা একটি দেশে যাওয়ার আগে অনেক কিছু বিবেচনায় আনেন৷ নিরাপত্তা, স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা, স্বাধীন জীবনযাপন, তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ ইউরোপের দেশগুলো সেসব বিষয় নিশ্চিত করে, যদি কোন ব্যত্যয় ঘটে সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেয়৷
প্রশ্ন হচ্ছে, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ইতিবাচক ইমেজ কতটা আছে? আর ইমেজ উজ্জ্বল করতে দেশটি কতটা তৎপর?
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে অধিকাংশক্ষেত্রে ব্লগার হত্যা, জঙ্গি তৎপরতা, বিদেশি হত্যা আর শিয়াদের উপর হামলাকে কেন্দ্র করে৷ এসব শিরোনাম পর্যটকদের কাছে টানার ক্ষেত্রে একেবারেই বিপরীত৷ আর থাইল্যান্ড, ভারতের মতো দেশ যেখানে পর্যটকদের কাছে টানতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে, ইন্টারনেটে বিভিন্ন মনোমুগ্ধকর প্রচারণা চালায়, বাংলাদেশ সেখানে একেবারেই অনুপস্থিত৷ এখন পর্যন্ত আধুনিকমানের একটা সরকারি ওয়েবসাইট তৈরি হলো না, যেখানে বাংলাদেশে ভ্রমণের ‘এ টু জেড' ভালোভাবে আছে৷ পর্যটন বোর্ডের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন তথ্য থাকলেও তা আধুনিক নয়৷
বলছি না, অন্যান্য দেশে হামলা হয় না৷ ‘ধর্ষণের' কারণে ভারতের পর্যটন খাতের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, থাইল্যান্ডে কিছুদিন আগে বোমা হামলা হয়েছে, টিউনিশিয়ায় বিদেশিদের উপর হামলা হয়েছে৷ এসব ঘটনা, হামলা পর্যটনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে৷
ভারতে ‘দিল্লি গণধর্ষণের' পর বিদেশি পর্যটক আসার হার কমে গিয়েছিল প্রায় ২৫ শতাংশ৷ দেশটি এখন ইমেজ বৃদ্ধির চেষ্টা করছে৷ ব্যাংককে বোমা হামলার পর থাই এয়ারওয়েজ অস্বাভাবিক কম মূল্যে টিকিট অফার করেছিল ইউরোপীয় পর্যটকদের, যেন তারা আবারো থাইল্যান্ডের মুখী হয়৷ আর টিউনিশিয়া মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হলেও সেদেশের সমুদ্র সৈকতে বিকনি পরে স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারে বিদেশিরা৷ তারপরও বোমা হামলার পর ধস নেমেছে দেশটির পর্যটন খাতে৷ এখন নিজেদের ইমেজ ফেরাতে অনেক চেষ্টা করছে দেশটি৷ কিন্তু বাংলাদেশ কি করছে?
শুধুমাত্র মুখে ‘পর্যটন বর্ষ' ঘোষণা করলেই পর্যটকরা হুমড়ে পড়বে না বাংলাদেশে৷ এজন্য নির্দিষ্ট প্রচারণা দরকার৷ সেই সঙ্গে দরকার অবকাঠামো, বিদেশি পর্যটকদের উপযোগী পরিবেশ৷ বাংলাদেশের রয়েছে অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুর সমুদ্রসৈকত৷ সেসবের কথা সঠিক পথে গোটা বিশ্বকে জানাতে হবে৷ বিদেশিদের বিশ্বাস করাতে হবে মুসলিম অধ্যুষিত দেশটিতে তারা স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারবে, স্বাধীনভাবে পোশাক পরতে পারবে, পথে পথে ঠকবাজদের খপ্পরে পড়বে না৷ তাদের নিরাপত্তা থাকবে সর্বত্র৷ তবেই না তাদের আগ্রহ জন্মাবে৷
বাংলাদেশের প্রতি পর্যটকদের আগ্রহ বাড়াতে করণীয় কী? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷