জয়ললিতার জেল-জরিমানা
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে. জয়ললিতার বিরুদ্ধে সঙ্গতিহীন আয় মামলায় বেঙ্গালুরুর এক বিশেষ আদালত জয়ললিতাকে দোষী সাব্যস্ত করে চার বছরের জেল এবং ১০০ কোটি টাকা জরিমানার আদেশ দেয়৷ জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে জেলে যেতে হয়৷ এই রায় অনুযায়ী, আগামী ১০ বছর তিনি সাংসদ বা বিধায়ক পদে দাঁড়াতে পারবেন না৷
রায়ের বিরুদ্ধে জয়ললিতা কর্নাটক হাইকোর্টে আপিল করতে চলেছেন৷ জামিনও চেয়েছেন৷ তাঁর হয়ে মামলা লড়বেন বিশিষ্ট আইনজীবী রাম জেঠমালানি৷ জয়ললিতার জায়গায় তামিলনাড়ুর নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন জয়ললিতার একান্ত অনুগত, রাজ্যের অর্থমন্ত্রী পান্নিরসেলভাম৷ জয়ললিতা এর আগে তানসি জমি কেলেঙ্কারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েও ২০০১ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন৷
দুর্নীতি-বিরোধী আইনে বর্তমান মামলাটি দায়ের করেছিলেন সাবেক জনতা পার্টি সভাপতি, বর্তমানে বিজেপি নেতা সুব্রামনিয়াম স্বামী৷ ১৮ বছর আগে করা এই মামলার বিচার পর্বে ছিলেন সাতজন বিচারক৷ বিভিন্ন কারণে শুনানি মুলতুবি রাখতে হয় ১৩০ বার৷ জয়ললিতা যে বিপুল সম্পত্তি করেছিলেন, তার মধ্যে আছে দু-তিনটি প্রাসাদোপম বাড়ি আর কয়েক কোটি টাকার অলঙ্কার৷
এছাড়াও এর মধ্যে আছে ৩০ কেজি সোনার তৈরি ৪০০ জোড়া হাতের বালাসমেত অন্যান্য অলঙ্কার৷ আরো আছে দেড় কেজি হিরে বসানো কোমরবন্ধনি, ৫০০ কেজি রুপা৷ ১০ হাজার শাড়ি, সাড়ে সাতশ জোড়া জুতা এবং শ-খানেক হাত ঘড়িও আছে জয়ললিতার সম্পত্তির তালিকায়৷
প্রথম দু'দিনের কারাবাস কেমন কেটেছে জয়ললিতার? সারা রাত ঘুমাতে পারেননি, রাতে কিছু মুখে তোলেননি৷ পরের দিন বিকেলে কিছুটা পায়চারি করেন৷ সেই রাতে খেয়েছেন রুটি, দুধ আর আপেল৷ জেল কর্তৃপক্ষ তাঁকে জেলের কিছু কাজ দিতে চান৷ কিন্তু তাঁর কারাবাস সশ্রম নয় বলে জয়ললিতা ইচ্ছা করলে না-ও করতে পারেন৷ আপত্তি না করলে ধূপকাঠি রোল করা, তরকারি কোটা, কাপড় সেলাই করার মতো কাজ করতে হবে জয়ললিতাকে৷
জয়ললিতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায়ের ফলে অন্য যেসব নেতা-নেত্রীর মাথার ওপর এমন মামলার খাঁড়া ঝুলছে তাঁরাও শঙ্কিত, তা সে ছত্তিশগড়ের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মধু কোড়া হন, বা টু-জি স্পেকট্রাম মামলার এ. রাজা ও কানি মোড়ি কিংবা তাজ করিডর মামলায় বহুজন সমাজ পার্টির মায়াবতি হন বা সমাজবাতি পার্টির মুলায়েম সিং কিংবা কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বি. এস ইয়েদুরাপ্পা৷
পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদের জেল হলেও জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসেছেন৷ তাঁর সাংসদ বা বিধায়ক পদ ১০ বছরের জন্য খারিজ হয়ে যায়৷ তাঁর বিরুদ্ধে সব মামলা শেষ হয়নি৷ কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর তদন্তের গতি প্রকৃতি দেখে সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের তাবড় তাবড় নেতাদের জড়িত থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না৷
দুর্নীতির অভিযোগে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছিল মনমোহন সিং সরকার৷ জনমানসের ক্ষোভের প্রতিফলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিচার বিভাগের সক্রিয়তায়৷ জনগণের ক্ষোভ মোদী সরকারও৷ দুর্নীতি দূর করার অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী৷ তবু ভারতের ভোটারদের মন বোঝা ভার৷ দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও আঞ্চলিক দলগুলির অবশ্য এখনো ভোটব্যাংক হাতছাড়া হয়নি৷