পাঁচ বছর জেল খাটবেন সাবেক ডিআইজি প্রিজন্স
৯ জানুয়ারি ২০২২রোববার ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারকরা এ রায় দেন৷ অপরাধমূলক অসদাচারণ ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুটি ধারায় পার্থ গোপাল বণিককে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় পাঁচ বছর ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫ (২) ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত৷ পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে৷ অনাদায়ে, তাকে আরো ৩ মাস জেল খাটতে হবে এমনটি জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো৷
ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টি ফোর ডটকম জানায়, দুই ধারার সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে বলে তাকে সব মিলিয়ে পাঁচ বছর সাজা খাটতে হবে৷ এর মধ্যে থেকে হাজতবাসকালীন সময় বাদ যাবে৷
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০১৯ সালে পার্থ গোপাল বণিকের বাসা থেকে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধারের পর তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে৷
মামলায় অভিযোগ করা হয় যে, সরকারি দায়িত্ব পালনকালে ‘ঘুস, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে’ ওই অর্থ তিনি পকেটে ভরেছেন এবং নিজের বাসায় লুকিয়ে রেখেছেন৷
সাবেক এই কারা কর্মকর্তার বাসা থেকে জব্দ করা ৮০ লাখ টাকার মধ্যে ৬৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা ‘অবৈধ উপার্জন’ হিসেবে বিবেচনা করে তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে বলা হয়েছে রায়ে৷ বাকি ১৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ‘বৈধ উপার্জন’ হিসেবে বিবেচনা করে পার্থকে তা ফেরত দিতে বলা হয়েছে৷
দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷
অন্যদিকে পার্থ গোপালের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে৷
রায়ের পর পার্থর জন্য কারাগারে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা (ডিভিশন) চেয়ে আবেদন করেন তার আইনজীবী৷ বিচারক কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেন৷
যেভাবে অবৈধ আয়ের সন্ধান পায় দুদক
২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর নগদ ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, দুই কোটি ৫০ লাখ টাকার এফডিআর, এক কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক ও ফেনসিডিলসহ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ট্রেন থেকে গ্রেপ্তার হন চট্টগ্রামের তখনকার জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস৷
সে সময় তিনি গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে নিজের ঘুষ বাণিজ্যের পেছনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সেখানকার তৎকালীন ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিকের নাম বলেন৷
ওই তথ্যের সূত্র ধরে দুদকের অনুসন্ধানী দল পার্থ গোপালকে সেগুনবাগিচার কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে৷
পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই তার ভূতেরগলির ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করার কথা জানায় দুদক৷
দুদকের কর্মকর্তারা সে সময় বলেছিলেন, উদ্ধার হওয়া টাকার মধ্যে পার্থের ফ্ল্যাটের দেয়াল কেবিনেটে গেঞ্জিতে মোড়ানো ছিল ৫০ লাখ টাকা৷ একটি স্কুল ব্যাগ থেকে উদ্ধার করা হয় বাকি ৩০ লাখ টাকা৷
আটকের সময় পার্থ সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন, এই ৮০ লাখ টাকা তার বৈধ আয় থেকে অর্জিত৷ এর মধ্যে ৩০ লাখ টাকা তার শাশুড়ি দিয়েছেন, বাকি ৫০ লাখ টাকা তার সারা জীবনের জমানো টাকা৷ ফ্ল্যাটের নিচে থাকা তার ব্যবহারের গাড়িটির মালিকও তিনি নন, তার বন্ধুর গাড়ি ব্যবহার করেন৷ যে ফ্ল্যাটে থাকেন তাও তার শাশুড়ির বলে দাবি করেছিলেন তিনি৷
পরদিন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন৷ পার্থ গোপাল বণিককে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ এক বছরের বেশি সময় তদন্তের পর ২০২০ সালের অগাস্ট মাসে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন৷
২০২০ সালের ৪ নভেম্বর পার্থ গোপালের বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত৷
আরআর/জেডএ (বিডিনিউজ টোয়েন্টি ফোর ডটকম)