1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুর্ভোগ বাড়িয়ে এবার বাড়ছে ওষুধের দাম

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৩ এপ্রিল ২০২২

দুর্ভোগের আশঙ্কা বাড়িয়ে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত ওষুধের দাম বাড়তে চলেছে৷ এমনিতেই জ্বালানি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামের জেরে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের৷ তার উপর ওষুধের দাম বৃদ্ধি কতটা যুক্তিযুক্ত?

https://p.dw.com/p/49Ob1
ছবি: Payel Samanta/DW

কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দাম বাড়ছে ওষুধের৷ পয়লা এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে ওষুধের দাম বৃদ্ধির নয়া সিদ্ধান্ত৷ প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের পাশাপাশি বাড়ছে হৃদরোগ, শুগার, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের নিত্যপ্রয়োজনীয় ওষুধের দাম৷ ভিটামিন জাতীয় ওষুধের পাশাপাশি রক্তাল্পতা ও চর্মরোগের ওষুধও বেশি দামে কিনতে হবে এ বার৷ ওষুধের দাম ১০.৮ শতাংশ বাড়ানোর ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্র৷ সেই অনুযায়ী গত সপ্তাহেই দাম বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেছিল ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি৷ মোট ৮০০টি ওষুধের দাম বৃদ্ধির ঘোষণায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ

কোভিডের একের পর এক ঢেউয়ের ধাক্কা এখনো সামলে উঠতে পারেনি দেশ৷ এরই মধ্যে কী কারণে দাম বাড়ল ওষুধের? ওষুধ নির্মাতা সংস্থাগুলির প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এই বৃদ্ধি৷ তাদের দাবি, ওষুধ তৈরির কাঁচামালের দাম বেড়েছে৷ চিন থেকে ভারতে ওষুধের কাঁচামাল আমদানি করা হয়৷ কাঁচামাল আমদানির খরচ বেড়েছে৷ এর সঙ্গে ওষুধ বাজারজাত করা থেকে পরিবহণের খরচও ক্রমবর্ধ্বমান৷ ২০ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি৷ কেন্দ্র ১০.৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর ছাড়পত্র দিয়েছে৷

কেন এত দাম বাড়বে, প্রশ্ন তুলছে চিকিৎসক সংগঠনগুলিও৷ ওষুধের দাম ১০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধিতে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন প্রবীণ মানুষেরা৷ এমনটাই মনে করেন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের চিকিৎসক ডা. অর্জুন দাশগুপ্ত৷ তিনি বলেন, ‘‘ওষুধ মূলত বেশি লাগে বয়স্ক মানুষদের৷ এমনিতে তাঁদের ফিক্সড ডিপোজিটের ওপর সুদের হার কমছে, তারপরে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে৷ ইদানীং প্রবীণদের মেডিক্লমের প্রিমিয়ামও বেড়েছে৷ ওষুধের দাম বাড়লে এই অতিরিক্ত চাপটা ভয়াবহ জায়গায় যেতে চলেছে৷''

ওষুধের দাম বাড়লে অতিরিক্ত চাপটা ভয়াবহ জায়গায় যেতে চলেছে: ডা. অর্জুন দাশগুপ্ত

কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে আঙ্গুল তুলছেন চিকিৎসকেরা৷ কেন্দ্রীয় সরকার কর্পোরেট ওষুধ ব্যবসায়ীদের অত্যধিক মুনাফা সুনিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে তাঁদের দাবি৷ সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার ড্রাগ প্রাইস কন্ট্রোল অর্ডার প্রতি বছরই পরিবর্তন করে৷

এর মধ্য দিয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলি ওষুধের দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়৷ এই নির্দেশিকা অনুষায়ী অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন ওষুধের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারের হাতে আর নেই৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে এতদিন সরকারের একটা নিয়ন্ত্রণ ছিল৷ ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটির মাধ্যমে সরকার এবার সে নিয়ন্ত্রণটুকু তুলে নিল৷ ফলে ওষুধের দাম বেড়েছে এবং আরও বাড়বে৷''

পরিবার মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মানুষ সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যখাতে যতটা খরচ করে, তার ৪০ শতাংশ স্বাস্থ্যবিমা সংস্থা দেয়, ৬০ শতাংশ পকেট থেকে দিতে হয়৷ এর ফলে বেশি সংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে চলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত৷ ওষুধের দাম বাড়লে এই প্রবণতা আরও বাড়বে৷ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘প্রান্তিক মানুষদের এ বার বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে৷ ওষুধের দাম বাড়লে হাসপাতালে চিকিৎসার খরচও ক্রমশ নিম্নবিত্তদের সাধ্যের বাইরে চলে যাবে৷ তাঁদের আমরা খাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছি৷''

এমনিতেই করোনা পরবর্তী সময়ে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন৷ অনেকের ব্যবসায় ক্ষতি হয়েছে৷ কিন্তু সংসার খরচ কমেনি৷ রান্নার গ্যাস বা ভোজ্য তেলে দাম বাড়ছে প্রতিদিন৷ বাজার-দোকানের খরচ সামলে ওষুধ কিনতেও যদি বাড়তি টাকা গুনতে হয়, তাহলে কী করে জীবন চলবে? প্রশ্ন তুলছেন আমজনতা থেকে ওষুধশিল্পের কর্মীরা৷ বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সজল ঘোষ বলেন, ‘‘কোভিডের পরে মানুষের উপার্জন কমে গিয়েছে৷ অন্যদিকে, ওষুধের দাম বৃদ্ধি মানুষের ওপর চাপ আরও বাড়াবে৷ এই দাম বৃদ্ধির তীব্র প্রতিবাদ করছি৷''

কোভিডের পরে মানুষের উপার্জন কমে গিয়েছে: সজল ঘোষ

অনেকেই বলছেন, এই দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে কম মূল্যের জেনেরিক ওষুধ বিক্রির পরিষেবা৷ কেন্দ্রীয় রসায়ন ও সার মন্ত্রকের অধীন জন-ঔষধী প্রকল্পে বাজারচলতি ব্র্যান্ডের বদলে একই ওষুধ অনেক কম দামে মেলে৷ গত জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের ৭৩৯টি জেলায় মোট ৮,৬৭৫ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে৷ আগামী তিন বছরে এই সংখ্যা সাড়ে ১০ হাজারে নিয়ে যেতে চায় কেন্দ্র৷ কিন্তু এত বড় দেশে সব মানুষের নাগালের মধ্যে কম দামের ওষুধ নিয়ে আসা দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার৷ তাই জন-ঔষধী প্রকল্প এখনো বহুল প্রচারিত হয়নি৷

তবে কি অনতিবিলম্বে বেশি টাকা গুনতে হবে জনতাকে? একটু আশার কথা শুনিয়েছেন প্রথম সারির ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা বায়োকন বায়োটেক-এর রিজিওনাল ম্যানেজার স্বস্তিক মিত্র৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এমনিতে কাঁচামালের দাম বেড়েছে৷ তবে সেজন্য সব কোম্পানিই যে ওষুধের দাম বাড়াবে এমন কোনো ব্যাপার নেই৷ সরকারের তরফে বলা হয়েছে দাম বাড়তে পারে৷ তার মানে এখনই যে দাম বেড়ে যাচ্ছে, এমনটা নয়৷ ধীরে ধীরে বাড়তে পারে৷''