দূরে থেকো পুষ্পরেণু
পুষ্পমঞ্জরিত প্রকৃতির মাঝে আপনার নাক বন্ধ হয়ে আসছে? চোখ দিয়ে জল ঝরছে? হাঁচির পর হাঁচিতে কেঁপে উঠছেন? তাহলে এ বসন্ত আপনার নয়৷ আপনি পোলেন অ্যালার্জিতে আক্রান্ত, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার অতি সক্রিয় আচরণই যার কারণ৷
কারো সুখ, কারোবা অসুখ
বসন্ত এখন জার্মানিতে উষ্ণতা ছড়াচ্ছে৷ দীর্ঘ সময় আকাশে থাকছে সূর্য, সবুজ নিসর্গে ফুলের শোভা আকুল করছে মন! কিন্তু পুষ্পরেণুতে যাদের অ্যালার্জি, এই সুখের বসন্ত তাদের জন্য অসুখের কারণ৷ ঘাস, গুল্ম, বৃক্ষরাজি বসন্তের শুরু থেকে পরাগ ছড়াতে শুরু করেছে যে!
পরাগায়ন
বহু গাছ পরাগ ছড়িয়েই বংশবৃদ্ধির কাজটি করে৷ এক গাছ থেকে ফুলের পরাগ বাতাসে ভেসে ভেসে পৌঁছে যায় বহু দূরে সমগোত্রীয় কোনো গাছের ফুলে৷ সেখানেই ঘটে নিষিক্তকরণ৷ খালি চোখে দেখা না গেলে কি হবে, অনুকূল আবহাওয়ায় এসব গাছের পরাগ বাতাসের পিঠে চেপে ৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে৷
বাড়ছে রোগীর সংখ্যা
জার্মান অ্যালার্জি অ্যান্ড অ্যাজমা সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, জার্মানির ১৬ শতাংশ মানুষেরই পরাগে অ্যালার্জি৷ আর এই হার খুব দ্রুত বাড়ছে৷ এ ধরনের রোগীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ পরবর্তীতে হাঁপানিতে আক্রান্ত হন৷
এগিয়ে আসছে পরাগের মৌসুম
পঁচিশ বছর আগেও বাতাসে পুষ্পরেণুর ওড়াওড়ি শুরু হতো ফেব্রুয়ারিতে৷ আর এখন এই সময় এগিয়ে এসেছে ১০ থেকে ১১ দিন৷ পরাগায়নের ঋতুও দীর্ঘায়িত হচ্ছে৷ বিজ্ঞানীরা এর জন্য পরিবেশ দূষণকে দায়ী করছেন৷ তারা বলছেন, গাড়ির ধোঁয়াও এই পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে৷
ভাল থাকতে ‘অ্যাপ’
যারা পোলেন অ্যালার্জি বা হে ফিভারে ভোগেন, তাদের সতর্ক করতে পোলেন ক্যালেন্ডার একটি ভাল ব্যবস্থা৷ বছরের কোন সময়টায় কোন এলাকায় কোন গাছের পরাগ রেণুর ‘উৎপাত’ চলবে- ছক কেটে সে সব তথ্য দেয়া থাকে এ ক্যালেন্ডারে৷ আর স্মার্ট ফোনের এই যুগে পোলেন ক্যালেন্ডার চলে এসেছে ‘অ্যাপ’ আকারেও৷
পরীক্ষা হয় যেভাবে
পোলেন অ্যালার্জি আছে কি না – তা বুঝতে চিকিৎসকরা সাধারণত ত্বক পরীক্ষা করেন৷ অ্যালার্জির জন্য দায়ী রাসায়নিক রোগীর চামড়ায় দিয়ে দেখা হয়, ত্বক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে কি না৷
কোন ফুলে কি বিপদ
ইউরোপে যারা পোলেন অ্যালার্জিতে ভোগেন, তাদের ৫২ শতাংশের ক্ষেত্রে বিপদ ঘটায় ঘাষফুলের রেণু৷ ৩৩ শতাংশ রোগী বিভিন্ন বৃক্ষের পরাগে অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হন৷ আর ২৭ শতাংশের সমস্যা হয় গুল্মজাতীয় গাছের ফুলে৷
রেহাই নেই
ফ্রান্স, ইটালি, স্পেন ও পর্তুগালের মতো কিছু ইউরোপীয় দেশে কয়েকটি গাছও অ্যালার্জির কারণ ঘটায়৷ পরাগে সমস্যা না হলেও সিকামোর ও জলপাই গাছের কারণে কারো কারো মধ্যে অ্যালার্জির উপসর্গ দেখা যায়৷
‘ক্রস অ্যালার্জি’
পরাগ যখন ভোগাচ্ছে, সেই যন্ত্রণা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে ‘ক্রস অ্যালার্জি’৷ এ ক্ষেত্রে সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো ফুলের পরাগ কোনো কেনো খাবারে অ্যালার্জিক উপসর্গ যোগ করতে পারে৷ যেমন বার্চ ফুলের পরাগ আর আপেল মিলে হতে পারে তীব্র শ্বাসকষ্টের কারণ৷
শান্তি পাব কোথা
যারা পোলেন অ্যালার্জিতে ভোগেন, বসন্তে তাদের জন্য শান্তির জায়গা হতে পারে উঁচু পাহাড়ি এলাকা৷ সাগরপৃষ্ঠ থেকে দুই হাজার ফুট উচ্চতায় বাতাসে বিপজ্জনক পরাগরেণু সাধারণত থাকে না৷ কাজেই বসন্তে হে ফিভার থেকে মুক্তি পেতে আল্পস হতে পারে আদর্শ স্থান৷
অথবা সাগরে...
সাগরের মুক্ত বাতাসেও পুষ্পরেণু্র উৎপাত সাধারণত থাকে না৷ যাদের হাঁপানি বা অ্যালার্জির ধাত আছে, তাদের এ কারণই উত্তর সাগরের তীরে বেড়াতে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়৷