দূরের গ্রহ সম্পর্কে আরও জানতে বিশেষ স্যাটেলাইট
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০বহুকাল ধরেই গ্রহের উৎপত্তি ও বিকাশ সম্পর্কে আমাদের ধারণার উৎস ছিল আমাদেরই সৌরজগত৷ কিন্তু সৌরজগতের বাইরে '৫১ পেগাসি বি' নামের প্রথম গ্রহ আবিষ্কারের সময়ই যাবতীয় তত্ত্ব নস্যাৎ হয়ে গেল৷
আমাদের বৃহস্পতির মতো গ্যাস ভিত্তিক গ্রহ সেটি৷ কিন্তু সেটির কক্ষপথ নক্ষত্রের এতই কাছে, যে মাত্র চার দিনেই বছর শেষ হয়ে যায়! অথচ আমাদের সৌরজগতে গ্যাসভিত্তিক গ্রহগুলি সূর্য থেকে অনেক দূরের কক্ষপথে বিচরণ করছে৷ কোনো গ্রহ যে দু-দুটি নক্ষত্র প্রদক্ষিণ করতে পারে, এমন দৃষ্টান্ত সম্পর্কেও আমরা জানতে পেরেছি৷
অকল্পনীয় দূরত্বের এই সব জগতের বৈচিত্র্য আমাদের কল্পনার ক্ষমতাও ম্লান করে দেয়৷ ৪,১০০টিরও বেশি গ্রহ এর মধ্যে আবিষ্কৃত হয়েছে৷
কিয়প্স নামের স্যাটেলাইট এই প্রথম এমন সব এক্সোপ্ল্যানেট পরীক্ষা করছে, যেগুলির আকার পৃথিবীর তুলনায় এক থেকে পাঁচ গুণ বেশি৷ সেটির মধ্যে এমন এক যন্ত্র রয়েছে, যেটি আলোর ক্ষুদ্রতম তারতম্যও পরিমাপ করতে পারে৷ ব্যার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো. ভিলি বেনৎস বলেন, ‘‘কিয়প্স আসলে এক ফলোআপ মিশন, আবিষ্কারের অভিযান নয়৷ অর্থাৎ লাখ লাখ নক্ষত্রের দিকে নজর দিয়ে আরও গ্রহ চিহ্নিত করা হচ্ছে না৷ কিয়প্স একটি করে নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করে৷''
কোনো এক্সোপ্ল্যানেট যখন নক্ষত্রের সামনে চলে আসে, কিয়প্স তখনই সেটি পর্যবেক্ষণ করে৷ এই কাজ করতে স্যাটেলাইটের দৃষ্টিপথে কোনো বাধা থাকলে চলবে না৷ আমাদের বায়ুমণ্ডল নক্ষত্র থেকে আসা আলো বিকৃত করে বলে সেগুলির ছবিও স্পষ্ট ওঠে না৷ সে কারণে রাশিয়ার সোয়ুজ রকেটে করে কিয়প্স মহাকাশে পাঠানো হয়েছে৷ পৃথিবী থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার উপরে একটি কক্ষপথে সেটি বিচরণ করছে৷ সেখান থেকে এই স্যাটেলাইট এমনভাবে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করতে পারে, যাতে সেটির টেলিস্কোপ সব সময় রাতের অন্ধকার পায়৷
মহাকাশের প্রায় সব অংশেই সেটি নজর দিতে পারে৷ কোনো গ্রহ সেটির নক্ষত্রের সামনে দিয়ে গেলে আলোর সামান্যতম পার্থক্যও শনাক্ত করতে পারে কিয়প্স৷ আমাদের পৃথিবীর মতো বড়ো কোনো মহাজাগতিক বস্তু নক্ষত্রের আলোর এক শতাংশেরও মাত্র একশো ভাগ ম্লান করে দেয়৷
কিয়প্স সেই মিটমিটে আলো এতটাই নিখুঁতভাবে পরিমাপ করতে পারে, যে গ্রহের আয়তন স্পষ্ট করে জানা যায়৷ জেনিভা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিদিয়ে কোয়েলস বলেন, ‘‘কিয়প্স গ্রহগুলি আবিষ্কারের পর ফলোআপ মিশন হিসেবে স্থির করা হয়েছে৷ অনেক গ্রহ পর্যবেক্ষণ করতে হবে৷ ভেবেচিন্তে লক্ষ্যবস্তুগুলি বেছে নিতে হবে৷ বেশিরভাগ কাজ ঠিকমতো করা হয়েছে৷''
ভূ-পৃষ্ঠ ও কক্ষপথের টেলিস্কোপের মাধ্যমে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ নক্ষত্র ও সেগুলির গ্রহ সম্পর্কে অনেক উল্লেখযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে৷
চিলির আটাকামা মরুভূমিকে একটি স্থাপনা প্রায় পাঁচ বছর ধরে মহাকাশে এক্সোপ্ল্যানেটের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে৷ কিয়প্স আরও নিখুঁতভাবে সেগুলি পর্যবেক্ষণ করবে৷
কর্নেলিয়া বরমান/এসবি