পরিবেশ দূষণ
২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪বায়ুদূষণের দিক থেকে ভারত বিশ্বের সব থেকে নীচের দিকের পাঁচটি দেশের অন্যতম৷ ভারতের নীচে আছে চীন, পাকিস্তান, নেপাল ও বাংলাদেশ৷ ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় ১৭৮টি দেশের ওপর জলবায়ু, জীববৈচিত্র্য এবং নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে এক সমীক্ষা চালায়, তাতেই জানা যায় এ তথ্য৷ এক সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, দিল্লি দূষণ নিয়ন্ত্রণ কমিটি এবং কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে বেজিংয়ের পরিবেশ সুরক্ষা ব্যুরোর তথ্য-উপাত্তের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞান ও পরিবেশ কেন্দ্র দেখেছে যে, দূষণ মিয়ন্ত্রণে বেজিং যেভাবে ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়ে যতটা সফল হয়েছে, দিল্লি তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনি৷ তাই অনেক পিছিয়ে পড়েছে ভারত৷ বায়ুদূষণ উভয় শহরের পক্ষে এক বিরাট সমস্যা এখনও৷ তবে নিরন্তর কড়া পদক্ষেপ নেয়ার ফলে বেজিংয়ের বায়ুদূষণের মাত্রা অনেকটাই কমেছে, যেটা দিল্লির ক্ষেত্রে হয়নি আন্তরিক প্রচেষ্টার অভাবে৷
রাজধানী দিল্লির বায়ুতে ভাসমান ১০ মাইক্রোনের চেয়ে সূক্ষ্ম কণার মাত্রা ২০০২ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে বেড়েছে ৪৭ শতাংশ, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বেড়েছে ৫৭ শতাংশ, বেড়েছে কার্বন মনোক্সাইড, ওজোন, বেঞ্জিন, সালফেট ও ধুলিকণার মাত্রা৷ দিল্লিতে সম্প্রতি বলবৎ করা হয়েছে ইউরো-ফোর এমিশন মান৷ সব বাস, অটো-রিক্সা এবং ট্যাক্সি এখন চলে সিএনজি বা প্রাকৃতিক গ্যাসে৷ গণপরিবহনের চাহিদা মেটাতে দিল্লি শহরের ৭০ শতাংশ এলাকায় রয়েছে মেট্রো রেলের ব্যবস্থা৷ মেট্রো রেল ক্রমশই প্রসারিত করা হচ্ছে দিল্লির আশেপাশের রাজ্যগুলিতেও৷ কিন্তু দিল্লির বাতাসে ধোঁয়াশার একটা ক্ষতিকর ঝুঁকি ধরা পড়েছে৷ দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সাইন্স, বল্লভভাই প্যাটেল চেস্ট ইনস্টিটিউট এবং সেন্ট স্টিফেন হাসপাতালের চিকিৎসা গবেষণাকারীদের একাধিক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ক্রনিক শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা, শীতকালে হাঁপানির টান, ফুসফুসের ক্রনিক রোগ এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেড়ে গেছে অনেকগুণ৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, দূষিত এলাকার বাচ্চাদের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি৷ পরিণামে বাচ্চারা রিকেট ও দৃষ্টিহীনতার শিকার হচ্ছে৷ দিল্লির ৩৬টি স্কুলের প্রায় ১২ হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় দেখা গেছে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজনের ফুসফুস ঠিকমতো কাজ করছে না বিশেষ এক দূষণকণার ফলে৷
দিল্লির বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মধ্যে জলবায়ু দূষণের প্রধান কারণগুলি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হবে সময়-ভিত্তিকভাবে এবং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে৷ গণপরিবহন ব্যবস্থা করতে হবে, উৎসাহ দিতে হবে হাঁটা বা সাইকেল ব্যবহারে৷ পাশাপাশি মোটরযানের এমিশন মাত্রা রাখতে হবে ইউরো-৫ এবং ইউরো-৬'এ৷ ১৫ বছরের পুরানো গাড়ি বাতিল করতে হবে৷ পরিবেশ দূষণকারী শিল্প ইউনিটগুলি অন্যত্র সরিয়ে নেয়াটাও জরুরি৷
মোটরবাহনজনিত দূষণ নিয়ন্ত্রণে বেজিং বছরে নতুন গাড়ি বিক্রির সংখ্যা ২ লাখ ৪০ হাজারে নামিয়ে এনেছে৷ এই সংখ্যা আরো কম করে দেড় লাখ করা হবে৷ অথচ দিল্লিতে প্রতিদিন মোটরগাড়ির সংখ্যা বাড়ছে গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত দিল্লির কোনো সরকার বায়ু তথা অন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণে দৃঢ় পদক্ষেপ নেবার সৎসাহস দেখাতে পারেনি৷