দৃক্’কে একটা আন্দোলন হিসেবেই দেখি - আলোকচিত্রী শহিদুল আলম
১১ জানুয়ারি ২০১১দৃক্ মানে দৃষ্টি৷ এ দেখা ভাসাভাসা নয়, অনেক গভীরে গিয়ে দেখা৷ শহিদুল আলমের দৃকপাত শুধুই চোখ দিয়ে দেখা নয়, মন দিয়ে দেখা, মস্তিষ্ক দিয়ে দেখা৷ এই দেখারই প্রকাশ তাঁর ছবিতে, লেখায়, তাঁর কর্মদ্যোগে৷ রসায়ন পড়েছেন লন্ডনে, পড়িয়েছেন৷ লন্ডন ইউনিভার্সিটির ডক্টরেট উপাধি পকেটে পুরে চলে যান ফোটোগ্রাফির ভিন্ন এক জগতে৷ সেটা ছিল ১৯৮০ সাল৷ কিন্তু রসায়নবিদ শহিদুল আলম কেন ফোটোগ্রাফিতে এলেন?
‘‘যেদেশের অনেক মানুষ লিখতে পড়তে পারেনা সেখানে শুধুমাত্র আক্ষরিক জ্ঞানকেই যদি শিক্ষা বলা হয়, তাহলে কিন্তু অনেক মানুষকে বঞ্চিত করার একটা জায়গা দাঁড়িয়ে যায়৷ কাজেই আলোকচিত্র বেছে নেয়াটা তেমন অস্বাভাবিক ছিল না রাজনৈতিক কারণেই৷ পারব কি পারব না সেটা ভিন্ন জিনিস ছিল৷ এবং যখন দেশে ফিরি কাজ শুরু করি তখন ফোটো সাংবাদিকতা, যে জায়গায় আমার প্রধান আগ্রহ, সেটা কিন্তু খুব বেশি করার সুযোগ ছিল না৷ কাজেই তখন অ্যাডভার্টাইজিং, ফ্যাশন এই ধরনের কাজ করেছি৷ এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে রাস্তায় নিজের আন্দোলনের ছবি তুলতে গিয়েই কিন্তু সত্যিকার অর্থে এটার শুরু৷''
ছবি তুলে দেশে বিদেশে পুরস্কৃত হয়েছেন শহিদুল আলম৷ আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে জুরির আসন অলঙ্কৃত করেছেন৷ গড়ে তুলেছেন ‘দৃক্', দক্ষিণ এশিয়া ফোটোগ্রাফি ইনস্টিটিউট ‘পাঠশালা'৷ রয়াল ফোটোগ্রাফিক সোসাইটির এই অনারারি ফেলো একই সঙ্গে সোচ্চার হয়েছেন সমাজের নানা অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে৷ দৃক্ তাঁর অহিংস হাতিয়ার৷
‘‘দৃক্ ফোটোগ্রাফির প্রতিষ্ঠান সেটা যেমন ঠিক৷ আমি এটাকে ভিন্নভাবে দেখি৷ এটাকে একটা আন্দোলন হিসেবে দেখি৷ এবং সমাজ পরিবর্তন করার আন্দোলন৷ সেটার ক্ষেত্রে আমরা খুব শক্তিশালী একটি হাতিয়ার আলোকচিত্রকে আমরা বেছে নিয়েছি৷ কিন্তু নিজেকে আমি গল্পকার হিসেবে দেখি৷ ছবি তুলি, লিখি৷ রাস্তায় নামি, আন্দোলন করি৷ সবগুলি ওটার সাথে সম্পৃক্ত৷ এই গল্পের মাধ্যমে পরিবর্তন আনা যায় এই বিশ্বাসটা আছে বলেই করি৷''
বাংলাদেশের গার্মেন্টস কর্মীদের দাবিদাওয়ার পক্ষেও সোচ্চার দৃক্৷ প্রদর্শনী, ব্লগিং, সিগনেচার ক্যাম্পেন নানাভাবে সক্রিয় এই প্রতিষ্ঠান৷ কেন?
‘‘যেখানে তারা মাসিক ন্যূনতম আয় পাওয়ার জন্য রাস্তায় নামে তখন তাদের ওপর বন্দুক চালানো হয়৷ এবং যে মানুষগুলো তাদের প্রতিনিধিত্ব করেছে তাদেরকে যখন সরকার হেনস্থা করে৷ শ্রমিক সংগঠনগুলো যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদেরকে বিভিন্নভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে তখন এটার ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিবাদ রাখা তো খুব স্বাভাবিক একটা ভূমিকা৷''
দৃক্ প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক মাপের একটি বড় উদ্যোগ ছবিমেলা৷ এটাই এশিয়ায় প্রথম ফোটোগ্রাফি উৎসব৷ দু'বছর পর পর হয় এই উৎসব৷ ২০০০ সালে প্রথম৷ এবারকার ছবিমেলার কথা উল্লেখ করলেন শহিদুল আলম৷
‘‘এখন ঢাকা শহর আলোকচিত্রীদের জন্য একটি তীর্থস্থান৷ সারা পৃথিবীর আলোকচিত্রীরা বসে থাকে ঢাকায় কী হবে ছবিমেলা কবে হবে৷ বাংলাদেশের মত একটি দেশ সারা পৃথিবীতে এখন নির্দেশনা দেয় আলোকচিত্রের জগতে৷ এবং এটার একটা বড় অংশ এই ছবিমেলার মাধ্যমে৷ গত ছবিমেলায় ৬৩টা প্রদর্শনী হয়েছিল ৩৩টা দেশ থেকে৷ এবারও অনেক দেশ থেকে অনেক শিল্পীরা আসছে, অনেক ধরনের কাজ আসছে৷ পাশ্চাত্যের বাইরে এটাই পৃথিবীর সবচাইতে বড় আলোকচিত্র ফেস্টটিভ্যাল, মেলা যদি বলা হয়৷ জানুয়ারির একুশ তারিখে শুরু হবে৷ প্রধান সবগুলো গ্যালারিতেই হবে৷ শুধু যে আলোকচিত্র প্রদর্শনী হবে তা নয়৷ এক সপ্তাহ ধরে বিশ্লেষণ, বিভিন্ন ধরনের আদান প্রদানও হবে৷''
প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ