1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আলোর দিশারি ‘বাংলাব্রেইল’

জাহিদুল কবির১০ এপ্রিল ২০১৪

ডয়চে ভেলের পাঠক আর ‘দ্য বব্স’ প্রতিযোগিতার ভোটারদের কাছে কেবল ভোট নয়, বাংলাদেশের দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের জন্য সহযোগিতাও চান ফেইসবুকভিত্তক সংগঠন ‘বাংলাব্রেইল’-এর স্বেচ্ছাসেবীরা৷

https://p.dw.com/p/1BesB
The Bobs 2014 Screenshot banglabraille.org
ছবি: banglabraille.org

স্বেচ্ছাসেবীর দল বলছেন, দৃষ্টিহীনদের জন্য পাঠ্যবইয়ের ডিজিটাল সংস্করণ তৈরি ও অডিও বুক তৈরির কাজ আরো বেগবান করতে পারে আগ্রহীদের স্বেচ্ছাশ্রম৷ এছাড়া ব্রেইল বই ছাপানো এবং শিক্ষার্থীদের হাতে অডিও বুক পৌঁছে দেয়ার কাজটি অনেক সহজ করে দিতে পারে প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা৷

ডয়চে ভেলের ‘দ্য বব্স – বেস্ট অফ অনলাইন অ্যাক্টিভিজম অ্যাওয়ার্ড'-এর চূড়ান্ত পর্বে সেরা উদ্ভাবন বিভাগে লড়ছে বাংলাব্রেইল৷ ১৪টি ভাষার প্রতিযোগীদের এ লড়াইয়ে বাংলাব্রেইলই বাংলার একমাত্র প্রতিনিধি৷

বাংলাব্রেইলের স্বেচ্ছাসেবীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাগিব হাসান, যিনি ইউনিভার্সিটি অফ আলাবামা অ্যাট বার্মিংহামে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের একজন সহকারী অধ্যাপক৷

ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান, নতুন বই প্রণয়নসহ বিভিন্ন কারণে শিক্ষাবর্ষের ছয় মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও বাংলাদেশের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষারর্থীরা পাঠ্যবই পাচ্ছিল না৷ ২০১৩ সালের ২৬শে জুন বিষয়টি জানতে পেরে কিছু করার তাড়না থেকেই এগিয়ে আসেন রাগিব৷

Deutsche Welle The Bobs 2014
ছবি: DW

তাঁর কথায়, ‘‘খবরটা পড়ে আমার মন খুব খারাপ হয়ে গেল৷ আমাদের যাদের দৃষ্টিশক্তি আছে, তারা কোনোদিন কল্পনা করতে পারব না – পড়ালেখা বা কোনোকিছু জানা দৃষ্টিহীনদের জন কতটা কষ্টকর৷''

এ সমস্যার সমাধান খুঁজতে খুঁজতে দুটো বিষয় রাগিবের মাথায় আসে৷ তিনি ভাবলেন, পাঠ্যবইগুলোর ডিজিটাল সংস্করণ তৈরি করা গেলে পরে তা ব্রেইলে রূপান্তর করে ছাত্রছাত্রীদের হাতে পৌঁছে দেয়া সম্ভব৷ আর বইগুলো কণ্ঠে ধারণ করে ‘অডিও বুক' তৈরি করা গেলে সেগুলোও শিক্ষার্থীদের কাজে লাগবে৷

একার পক্ষে এ কাজ কঠিন, রাগিব তাই সহযোগিতা নিলেন ফেইসবুকের৷ তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রথম দিনই দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন ব্রেইল বই তৈরির ‘প্রোজেক্টে' শামিল হয়ে গেলেন প্রায় ৫০০ স্বেস্ছাসেবী৷

‘‘আমি ভেবেছিলাম, খুব বেশি হলে হয়ত ১০-২০ জন আসবে৷ কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম, ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে প্রায় শখানেক লোক ফেইসবুকে সাড়া দিলেন৷ তাঁরা জানালেন, সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে তারা এই প্রোজেক্টে কাজ করতে আগ্রহী৷''

এরপর ফেইসবুকে তৈরি হলো নতুন গ্রুপ বাংলাব্রেইল৷ দুই দিনের মাথায় সদস্য সংখ্যা হাজার পেরিয়ে গেল৷ বর্তমানে এর স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা প্রায় ২৮০০৷

এক বছরের অগ্রগতি

রাগিব বলেন, ‘‘কাজটা কীভাবে করব – তা ভেবে বের করতে প্রথম দিকে অনেকটা সময় লাগলেও গত প্রায় ১ বছরে আমরা যথেষ্ট এগিয়েছি৷ স্কুল পর্যায়ে ক্লাস ওয়ান থেকে নাইন-টেন পর্যন্ত প্রায় ১০০ বই আছে৷ আমরা এরই মধ্যে এর প্রায় এক চতুর্থাংশ, অর্থাৎ ২৫টি বইয়ের ডিজিটাল সংস্করণ এবং আরো ২৫টি বইয়ের অডিও সংস্করণ তৈরি করতে পেরেছি৷''

কেবল তরুণরাই নন, পেশাজীবী, গৃহিনীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নানা বয়সি মানুষ সাড়া দিয়েছেন বাংলাব্রেইলের ডাকে৷ তাঁরা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে পাঠ্যবইগুলোর টেক্সট প্রথমে ইউনিকোডে রূপান্তর করছেন৷ এভাবে সেগুলো ব্রেইল প্রিন্টারে ছাপার জন্য তৈরি করা হচ্ছে৷

[No title]

এছাড়া পাঠ্য বইগুলোকে পড়ে অডিও রেকর্ড করে তৈরি হচ্ছে অডিও বুক৷ ফাইলগুলো ইন্টারনেটে আপলোড করে রাখা হচ্ছে, যাতে দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা মোবাইল ফোনে তা ডাউনলোড করে নিয়ে ব্রেইল বই হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত কাজ চালাতে পারেন৷

সামনে কঠিন পথ

এ পর্যন্ত স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ চালিয়ে এলেও রাগিবদের সামনের পথ বেশ কঠিন৷ ডিজিটাল বইগুলো ব্রেইল প্রিন্টারে ছেপে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে হবে৷ আর এ কাজে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ব্রেইল প্রিন্টার আর কাগজের দাম৷

রাগিব জানান, একটি মোটামুটি মানের ব্রেইল প্রিন্টার কিনতেও কমপক্ষে ৮০ হাজার ডলার প্রয়োজন৷ তার ওপর ব্রেইলে ছাপার খরচও অনেক বেশি৷

প্রথম দিকে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ব্রেইল প্রিন্টার থেকে এসব বই ছাপার পরিকল্পনা হয়৷ কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদশিও বাড়িয়ে দেন সহযোগিতার হাত৷ কিন্তু বাংলাব্রেইলের প্রয়োজন স্থায়ী সমাধান৷

রাগিব বলেন, ‘‘বই ছাপার খরচ বা কোথাও ছাপানোর সুবিধা যদি পাওয়া যেত, সেটা আমাদের অনেক কাজে আসতো৷ আর আমাদের তৈরি করা অডিও বইগুলোও খুব দ্রুত সবার কাছে পৌঁছে দিতে চাই৷....কিন্তু বহু শিক্ষার্থীর এখনো ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নেই৷ তাঁদের কাছে আমদের অডিও বইগুলো পৌঁছে দেয়ার কোনো ব্যবস্থা করা গেলে, প্রাতিষ্ঠানিক কোনো সাহায্য পাওয়া গেলে সটা আমাদের খুব কাজে দিত৷''

অডিও বুকে আসবে কালজয়ী সাহিত্য

কম্পিউটার বিজ্ঞানের এই শিক্ষক জানালেন, তাদের প্রথম লক্ষ্য স্কুল পর্যায়ের সবগুলো বই শেষ করে ফেলা৷ তারপর কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বইগুলোও তারা বাংলাব্রেইলে আনতে চান৷ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টহীন শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে যোগাযোগ করে তাঁদের সমস্যাগুলো জানিয়েছেন৷

‘‘তার পাশাপাশি আমাদের একটি লক্ষ্য হচ্ছে বিভিন্ন সাহিত্যকর্মের অডিও বুক তৈরি করা, যাতে দৃষ্টিহীনরাও ভালো সাহিত্যকর্মের রস নিতে পারেন, জানতে পারেন৷''

রাগিব জানান, বাংলা ব্রেইল প্রোজেক্ট চালু হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন৷ একজন অভিভাবক মেইল করে জানিয়েছেন যে, তাঁর ১১ বছরের মেয়েটি দৃষ্টিহীন৷ পড়ালেখায় খুব আগ্রহ থাকলেও পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণের অভাবে তা বন্ধ হতে বসেছে৷

‘‘এই অভিভাবক আমাদের খুব আকুতি জানিয়ে লিখেছেন, আমাদের এই প্রোজেক্ট যাতে চালিয় নিয়ে যাই৷ অডিও বুকসহ অন্যান্য মাধ্যমে যাতে জ্ঞানের আলোটুকু তার বাচ্চার কাছে পৌঁছে দিতে পারি৷ অভিভাবকদের এ ধরনের বার্তা আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দেয়৷''

দ্য বব্স-এ বাংলাব্রেইল

এ প্রতিযোগিতায় বাংলাব্রেইলকে এগিয়ে নিতে চাইলে প্রয়োজন বেশি বেশি ভোট৷ ভোট দিতে চাইলে ভিজিট করুন thebobs.com/bengali ওয়েবসাইট৷ এরপর সেখানে লগ-ইন করুন ফেসবুক, টুইটার, ভিকন্টাক্টে কিংবা ডয়চে ভেলের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে৷ তারপর ‘সেরা উদ্ভাবন' বিভাগ বাছাই করে বাংলাব্রেইল এর ঘরে বোতাম চেপে দিন আপনার ভোট৷

আগামী ৭ই মে পর্যন্ত প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একটি ক্যাটাগরিতে একটি করে ভোট দেয়া যাবে৷

বাংলাব্রেইলের প্রতিনিধি রাগিব বলেন, ‘‘ভোটে জিতি বা না জিতি সেটা বড় ব্যাপার না৷ আসলে আমাদের মূল লক্ষ্য দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের কাছে বইগুলো পৌঁছে দেয়া৷ ডয়চে ভেলের ‘দ্য বব্স' প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যদি আরো বেশি মানুষ আমাদের এই উদ্যোগের কথা জানতে পারেন, শামিল হতে পারেন – সেটাই হবে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি৷''

বাংলাব্রেইলের ওয়েবসাইট http://www.banglabraille.org/ অথবা ফেইসবুক পেইজ ভিজিট করে শিক্ষার আলো হাতে দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে পারেন যে কেউ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য