1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দেবর ভাবির দ্বন্দ্বে কোন পথে জাতীয় পার্টি?

৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

এরশাদহীন জাতীয় পার্টিতে এখন গৃহবিবাদ তুঙ্গে৷ দলটি এখন কার্যত দুই ভাগ হয়ে গেছে৷ আর এই দুইভাগের নেতৃত্বে আছেন যে দুইজন তারা সম্পর্কে দেবর এবং ভাবি৷ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ এবং এরশাদের ভাই জিএম কাদের৷

https://p.dw.com/p/3P5gH
Bangladesch Dhaka Hussain Muhammad Ershad
ছবি: Reuters/R. Rahman

গত ১৪ জুলাই মারা যান এরশাদ৷ তিনি মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত দলে নানা ধারা উপধারা সামাল দেন৷ তবে তিনি জীবিত থাকা অবস্থায়ই তার স্ত্রী রওশন এরশাদ দলে তার প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হন৷ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে রওশন অনেকটা কোনঠাসা করে ফেলেন এরশাদকে৷ আর সেটা বুঝতে পেরে এরশাদ তার ভাই জিএম কাদেরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেন৷ রওশন থেকে যান কো-চেয়ারম্যান৷ তিনি বর্তমান সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা৷

এর আগে এরশাদের মৃত্যুতে রংপুর-৩ আসন শূন্য হওয়ায় ওই আসনের প্রার্থীতা নিয়ে কাদের ও রওশনের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে৷ এরপর ৩ সেপ্টেম্বর জিএম কাদের দলের প্যাডে নিজেকে বিরোধী দলীয় নেতার পদে নিয়োগ দিতে স্পিকারকে চিঠি দেন৷ এরশাদ ছিলেন বিরোধী দলীয় নেতা৷ কিন্তু পরদিন ৪ সেপ্টেম্বর রওশন এরশাদ স্পিকারকে দেয়া চিঠিতে জিএম কাদেরের চিঠি নিয়ে বৈধতার প্রশ্ন তুলে তা গ্রহণ না করার অনুরোধ জানান৷

বৃহস্পতিবার সকালে রওশন এরশাদকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ  রওশনকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন৷ ফলে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে৷ এরপর জিএম কাদের পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে দলের নেতৃত্ব তার হাতেই থাকার দাবি করেন৷ তিনি দলের গঠনতন্ত্রের বরাত দিয়ে বলেন,‘ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের চেয়ারম্যান তাকে দলের নেতৃত্বে দিয়ে গেছেন৷'

ফখরুল ইমাম

এদিকে এই ঘটনায় দলের মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা এখনো নীরব আছেন৷ তিনি সংবাদ মাধ্যমে আপাতত কথা বলছেন না৷ কোনো অংশের সংবাদ সম্মেলনেও ছিলেন না৷ দুই অংশই তাকে দলের মহাসচিব মনে করে৷

জাতীয় পার্টি থেকে এবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ২২ জন৷ সংরক্ষিত নারী আসনে  তিন জন৷ এই দলটির প্রধান দুর্গ এরশাদের বাড়ি রংপুর৷ রংপুর বিভাগে জাতীয় পার্টির আসন সাতটি৷ এখন এই ২৫ সংসদ সদস্যের  কতজন কার দিকে আছে আর রংপুরে কার অবস্থান শক্ত তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ৷ এর সঙ্গে সরকারের সমর্থন কোন দিকে শেষ পর্যন্ত যায় তাও দেখার বিষয়৷ বিশ্লেষকেরা বলছেন প্রতিষ্ঠাতা এরশাদ না থাকায় এখন দলটিতে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে৷ ফলে দলটির একক অস্তিত্ব হুমকির মুখে৷ দলটি আরো খণ্ড বিখণ্ড হয়ে  বিভিন্ন দলে বিলীন হয়ে যাবে৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. শান্তনু মজুমদার বলেন,‘‘জাতীয় পার্টির এই গৃহবিবাদে আমি বিস্মিত নই৷ এরশাদ থাকা অবস্থায়ই এটা ছিলো৷ এখন আরো প্রকাশ্যে এলো৷ আসলে স্বৈরাচারের পকেট থেকে জন্ম নেয়া একটি দল যারা সরকারের সাথে সম্পর্ক রেখে চলে তাদের এটাই পরিণতি হয়৷ আর এই দলটি ভবিষ্যতে টিকে থাকবে কিনা তা নির্ভর করবে সরকারের সাথে তাদের সম্পর্কের ওপর৷ রংপুরেরর মানুষের ওপর৷''

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন,‘‘জাতীয় পার্টিকে রাজনৈতিক দল বলা যায়না৷ একটি রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক আদর্শ থাকে৷ জাতীয় পার্টির তা নেই৷ একটা রাজনৈতিক দল সরকারে থাকে আবার বিরোধী দলেও থাকে এটা হয়না৷ পৃথিবীর কোথাও এটা নেই৷ এই দলতো ভেঙ্গে গেছে৷ আরো খন্ড খন্ড হয়ে  আওয়ামী লীগে বিলীন হয়ে যাবে৷''

জিএম কাদের

তবে জিএম কাদের বলেন,‘‘দল ভাঙবে না৷ চার-পাঁচজন লোক একটা কিছু বলতে তাতে কিছু এসে যায়না৷ রওশন এরশাদ নিজে কিছু বলেননি৷'' এই দ্বন্দ্বে জাতীয় পার্টি বিলীন হয়ে যাবে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘‘এটা কিভাবে সম্ভব৷ এতবড় দল৷ তারা হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমর্থক৷ দল বিলীন হবে কিভাবে! দল আরো শক্তিশালী হবে৷'' জিএম কাদের দাবি করেন তার সাথে ২৫ জন এমপির ১৫ জন রয়েছেন৷

আর রওশনপন্থী নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম এমপি বলেন,‘‘আমরা রওশন এরশাদকে দলের চেয়ারম্যান করেছি দলের গঠনতন্ত্র মেনে৷ ফলে দল ভাঙার কোনো কারণ নেই৷ যারা বিপথে গেছেন তাদের আমরা ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি৷ আমাদের দল কোনেভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বা ভেঙে টুকরো টুকরো হবে না৷'' দলের এমপিরা কার দিকে বেশি জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘‘সেটা জানি না৷ এমপিরাতো আর দলের প্রধান নির্বাচন করবেন না৷ তারা সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচন করবেন৷ আমরা ৮ সেপ্টেম্বর সংসদীয় দলের বৈঠক ডেকেছি৷ দেখা যাক কী হয়৷''

প্রসঙ্গত, ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন৷ ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করে পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশের  রাষ্ট্রপতি হন৷

এরশাদ জীবিত থাকতেই জাতীয় পার্টিতে বেশ কয়েবার ভাঙন হয়৷ এরশাদের জাতীয় পার্টির বাইরেও এখন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নাজিউর রহমান মঞ্জুর( প্রয়াত) এবং কাজী জাফর আহমেদের(প্রয়াত)  নামে জাতীয় পার্টির আরো তিনটি অংশ আছে৷