1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দেশে পর্যটন: অব্যবস্থাপনার কারণে ভোগান্তি বেশি

২৬ ডিসেম্বর ২০২২

বাংলাদেশে দেশের ভেতরে পর্যটন বাড়ছে৷ ছুটি বা উৎসবে অনেকেই এখন পরিবার পরিজন নিয়ে বের হয়ে যান দেশের ভেতরেই কোনো পর্যটন কেন্দ্রে৷ কিন্তু পরিকল্পনার অভাব এবং অব্যবস্থাপনার কারণে তাদের আনন্দ অনেক সময় চরম ভোগান্তিতে পরিণত হয়৷

https://p.dw.com/p/4LQ4A
এখানে মেঘ ছুঁয়ে দেখা যায়
এখানে মেঘ ছুঁয়ে দেখা যায়ছবি: DW/M.Mamun

বাংলাদেশের আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রাঙামাটির সাজেক ভ্যালি৷ সমুদ্রপৃষ্ট থেকে এক হাজার ৮০০ ফুট উঁচুতে সাজেকের প্রকৃতি ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলায়, এখানে মেঘ ছুঁয়ে দেখা যায়, আছে ট্রেকিং-এর ব্যবস্থা৷ কাছ থেকে দেখা যায় আদিবাসীদের জীবন ও সংস্কৃতি৷ সেনবাহিনীর তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা এই সাজেক ভ্যালিতে আছে ছোট-বড় ১২২টি বেসরকারি রিসোর্ট৷ যাতে সব মিলিয়ে থাকতে পারেন দুই থেকে আড়াই হাজার পর্যটক৷ কিন্তু এবার বড় দিন এবং সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে তিন দিনের ছুটি পাওয়ায় অনেকেই সেখানে ভিড় করেছেন৷ তাদের সংখ্যা ছয়-সাত হাজারের বেশি হবে৷ তাই অনেককেই রাস্তায় অথবা গাড়িতে রাতযাপন করতে হয়েছে৷ কেউ কেউ রাতে স্থানীয় স্কুলে থেকেছেন৷

সাজেক পর্যটন রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জেরি লুসাই ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বড়দিনকে সামনে রেখে আগেই আমাদের রিসোর্টগুলো বুকিং হয়ে যায়, তারপরও অনেকে এসেছেন বুকিং ছাড়া৷ তাদের তো আমরা আর থাকার জায়গা দিতে পারছি না৷ তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷

একই অবস্থা কক্সবাজারের৷ সেখান থেকে সায়মা সিদ্দিকা জানান, ‘‘সমুদ্র সৈকতে পা রাখার জায়গা নেই, রাস্তাগুলোতে এখন প্রচণ্ড যানজট, অনেকেই হোটেল বুকিং না দিয়ে চলে আসায় বিপাকে পড়ছেন৷''

তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি এমন যে হোটেল গুলোতে খাবার পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না৷ আর পাওয়া গেলেও দাম অনেক বেশি৷ পর্যটকদের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতির কারণে সুযোগ সন্ধানীরা হোটেলের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন, বাড়িয়ে দিয়েছেন খাবারের দামও৷ তাদের মধ্যে সেবার মানসিকতা নেই৷ আছে অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রবণতা৷

‘অনেকেই হোটেল বুকিং না দিয়ে চলে আসায় বিপাকে পড়ছেন’

আর সমুদ্র সৈকতে কয়েকটি মাত্র পর্যটন স্পট৷ যদি সুপরিকল্পিতভাবে আরো স্পট গড়ে তোলা হতো তাহলে এক জায়গায় এত লোক ভিড় করতো না বলে মনে করেন তিনি৷

একটি বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের এই কর্মকর্তা দেশে এবং দেশের বাইরে ঘুরতে পাছন্দ করেন৷ বেড়ানো তার নেশা৷ তিনি বলেন, ‘‘এখন দেশে র ভেতরে পর্যটন বাড়ছে৷ দেশের ভেতরে মানুষ ঘুরতে অনেকে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন৷ তবে সমস্যা হচ্ছে তারা সাধারণত ছুটির সময়ই সপরিবারে ঘুরতে বের হন৷ ফলে পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে ওই সময়ে প্রচণ্ড ভিড় হয়৷ কিন্তু পর্যটন কেন্দ্রগুলোর ব্যবস্থাপনায় এই বিষয়টি মাথায় নেই৷ আর মনে করা হয় পর্যটক মানেই মধ্যবিত্ত বা ধনী৷ কিন্তু আসলে তা নয়৷ ফলে এখানে বিদেশের চেয়েও হোটেল ভাড়া বেশি৷''

ট্যুর অপারেটরসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে সারা বছরে এখন অভ্যন্তরীণ পর্যটক দুই কোটিরও বেশি৷ আর দেশের বাইরে থেকে স্বাভাবিক সময়ে ২০ লাখেরও বেশি পর্যটক আসেন৷ তাদের মধ্যে আবার অধিকাংশই প্রবাসী বাংলাদেশি৷ বিদেশি ছয়-সাত লাখের মতো৷ তাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটন দিন দিন বড়ো হচ্ছে৷ কিন্তু সেদিকে নজর নেই কর্তৃপক্ষের৷

এখনো পর্যটনের শীর্ষে আছে কক্সবাজার৷ অনেক পর্যটন স্পট আছে যা মানুষকে ব্যাপক আকর্ষণ করতে পারে৷ কিন্তু ঠিকভাবে উপস্থাপন না করতে পারা, যোগাযোগ ও সুযোগসুবিধার অভাবে তা পর্যটক আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে৷

‘যেসব টুরিস্ট স্পট আছে সেখানে অবকাঠামো নেই’

বাংলাদেশে এখন ছোট বড় মিলিয়ে এক হাজারের মতো ট্যুর অপারেটর আছেন৷ তারা অভ্যন্তরীণ ও দেশের বাইরে ট্যুর অপারেট করেন৷ তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ ট্যুরিজম বাড়লেও পরিকল্পনার অভাব আছে৷ প্রচার না থাকায় পর্যটকরা কক্সবাজার, রাঙামাটি, সেন্টমার্টিন, সুন্দরবন এই কয়েকটি এলাকাকেই ভ্রমণের জায়গা হিসেবে বেছে নেন৷ ফলে ওইসব এলাকায় প্রচণ্ড ভিড় হয়৷ ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি স্কিল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন হেলাল বলেন, ‘‘এর কারণ হলো আরো যেসব টুরিস্ট স্পট আছে সেখানে অবকাঠামো নেই৷ ফলে মানুষ সেখানে যেতে চান না৷ আর প্রচার না থাকায় ওইসব এলাকার কথা পর্যটকরা জানেনই না৷ কয়েকটি এলাকায় ভিড় করেন৷ আরেকটি সমস্যা হলো যারা দেশের পর্যটক তারা বছর জুড়ে ট্যুর প্ল্যান করেন না৷ কোন ঋতুতে কোথায় যাবেন তা জানেন না৷ ফলে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় যেমন শীতকালে তারা এক যোগে ঘুরতে বের হন৷'' তার মতে, ‘‘এর জন্য পর্যটন কর্পোরেশন ও মিডিয়াকে ভূমিকা নিতে হবে৷''

বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের সারাদেশে মোট ৪৭টি হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ, ক্যাফেটেরিয়া ও বার আছে৷ এরমধ্যে ১৩টি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়৷ কিন্তু তাদের সেবার মান তেমন ভালো নয়৷ আবার যেখানে হোটেল, মোটেল দরকার সেখানে নেই, যেখানে দরকার নেই সেখানে আছে৷ যেমন পুরো রাঙামাটিতে আছে মাত্র একটি পর্যটন কমপ্লেক্স৷ সবচেয়ে আকর্ষণীয় সাজেকে তাদের কোনো মোটেল বা হোটেল নেই৷ রাঙামাটির মোটেলে ডিসেম্বর মাসের বুকিং এক মাস আগেই শেষ হয়ে গেছে৷

বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক(বিক্রয়, উন্নয়ন ও জনসংযোগ) মো. জিয়াউল হক হাওলাদার জানান, ‘‘বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ পর্যটক এখন দুই কোটিরও বেশি৷ মানুষের আয় বেড়েছে৷ দেশকে ঘুরে দেখার প্রবণতাও বাড়ছে৷ এটা ধরে রাখতে এবং আরো বাড়াতে আমরা বড় ধরনের পকিল্পনা নিয়েছি৷ আমরা দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে আরো হোটেল, মোটেল এবং বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছি৷ এখন আমাদের কাজ হচ্ছে হাতিয়া, নিঝুম দ্বীপ, কর্ণফুলি টানেল এলাকা, তেঁতুলিয়া, আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ, হাওড় এলাকাসহ আরো কয়েকটি এলাকায়৷ এছাড়া রাঙামাটিতে আরো অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে৷'' কমিউনিটি ট্যুরিজম গড়ে তোলার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘‘আমরা বাংলাদেশে এক হাজার ৪০০ পর্যটন স্পট চিহ্নিত করেছি৷ এগুলো সবার কাছে তুলে ধরার ব্যবস্থা করছি৷ এখন পর্যটনের আরো নানা দিক উন্মোচিত হচ্ছে, তরুনদেরও আমরা কাজে লাগাচ্ছি৷''

বিশ্লেষকরা বলছেন, পর্যটন কর্পোরেশন বড় উদ্যোগ নিলে বেসরকারি খাতেরও সুবিধা হবে৷ পর্যটকরাও সুবিধা পাবেন৷ আর তাতে বেসরকারি হোটেল মোটেলে গলাকাটা দাম নেয়ার প্রবণতা কমে আসবে৷