সামরিক বাহিনী
২৪ আগস্ট ২০১২আগস্টের ১৭ তারিখে দেয়া এই রায়ে বলা হয়, কেবলমাত্র ‘অতি জরুরি অবস্থা' সামাল দিতে দেশের ভেতর সামরিক বাহিনী ব্যবহার করা যেতে পারে৷ অর্থাৎ দেশে যদি এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যাতে বহু মানুষ হতাহতের সম্ভাবনা রয়েছে, তাহলেই কেবল সামরিক বাহিনী ডাকা যেতে পারে৷ কোনো ধরণের বিক্ষোভ দমাতে তাদের ব্যবহার করা যাবে না বলেও রায়ে বলা হয়েছে৷
এছাড়া সাংবিধানিক আদালত বলেছে, সামরিক বাহিনী ব্যবহারের জন্য শুধু প্রতিরক্ষামন্ত্রী আদেশ করলেই হবে না৷ এজন্য পুরো সরকারপক্ষকে বসে একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷
সর্বোচ্চ আদালতের রায় ঘোষণার পরপরই বিতর্ক শুরু হয়৷ সামাজিক যোগাযোগের সাইট থেকে শুরু করে টেলিভিশন ও পত্রপত্রিকায় শুরু হয় আলোচনা৷ রাজনীতিবিদরাও হয়ে পড়েন দ্বিধাবিভক্ত৷ কেউ কেউ এই রায়কে ‘স্বৈরশাসনের দিকে একধাপ অগ্রসর' বলে মনে করছেন৷ কেউ আবার ‘ভাইমার' আমল, যার বিস্তৃতি ছিল ১৯১৮ থেকে ১৯৩৩ সাল, তার কথা স্মরণ করেছেন৷ কেননা সেসময় কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী ব্যবহার করা হয়েছিল৷ এবং যার ফলশ্রুতিতে হিটলারের আগমন ঘটে৷ এরপর হিটলারও তাঁর এসএস আধাসামরিক বাহিনীকে জনগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছিল৷
সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়কে অনেক জার্মান, শিক্ষার্থীদের বিদ্রোহ দমনে ১৯৬৮ সালে পাস করা ‘জরুরি আইন'এর সঙ্গে তুলনা করছেন৷
রায় ঘোষণার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রায়কে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দেয়া হয়৷ তাতে বলা হয়, এই রায় এটাই প্রমাণ করে যে, জার্মান নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধান রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ৷
তবে স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা যেন রায়কে অন্যভাবে ব্যাখ্যা না করেন, সে ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছেন বিচারমন্ত্রী সাবিনে লয়েটহয়েরজার৷ তিনি বলেন, ‘‘অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা ও বাইরের শত্রুর হাত থেকে দেশকে রক্ষা - এই দুটি আলাদা বিষয় এবং এটা থাকবে৷ আইন দ্বারা কোনোকিছু করা সম্ভব মানে এই নয় যে, সেটা রাজনৈতিকভাবেও ঠিক৷''
বিতর্কের শুরুর দিককার কাহিনি
২০০৩ সালে জানুয়ারি মাসের কোনো এক বিকেলে ফ্রাঙ্কফুর্টের উঁচু ভবনগুলোর মাত্র ৫০ মিটার উপরে গ্লাইডার বিমান চক্কর কাটছিল৷ যে কোনো সময় বিমানটি উঁচু ভবনগুলোতে আঘাত করতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল৷ তাই জার্মান বিমানবাহিনী দুটি জেট বিমান পাঠিয়ে ঐ গ্লাইডার বিমানটিকে মাটিতে নামিয়ে আনে৷
এই ঘটনার পরই দেশের ভেতরে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়৷ কেননা গ্লাইডারের ঐ ঘটনার পর সবাই চিন্তা করে দেখলো যে, যদি আল-কায়েদার মতো জঙ্গি সংগঠনগুলো ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দর থেকে বিমান ছিনতাই করে শহরের উঁচু ভবনগুলোতে আঘাত করার চেষ্টা করে তাহলে কী হবে? সেক্ষেত্রে ঐ বিমানটিকে আটকাতে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে?
এই প্রেক্ষিতে সেসময় সরকার একটা আইন তৈরি করেছিল৷ এর ফলে ছিনতাই হওয়া বিমানকে গুলি করে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছিল৷ কিন্তু ২০০৬ সালে সর্বোচ্চ আদালত তাদের দেয়া রায়ে বলেছিল যে, সরকারের ঐ আইনটি অবৈধ৷ কেননা ভবনগুলোতে থাকা মানুষদের বাঁচাতে বিমানে থাকা যাত্রীদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা ঠিক নয়৷ তাই আদালত বলেছিল যে, সামরিক বাহিনী পুলিশকে তাদের কাজে সহায়তা করতে পারবে৷ কিন্তু তাই বলে যুদ্ধকালীন যে যন্ত্রপাতি, যেমন ট্যাঙ্ক, ফাইটার জেট এগুলো ব্যবহার করতে পারবে না৷
তবে সর্বোচ্চ আদালতের ঐ রায়ের সঙ্গে একমত ছিল না ঐ আদালতেরই দুটি চেম্বার৷ ফলে সেটা নিয়ে আবারও আলোচনা হয়৷ এবং এর ফল হচ্ছে, ক'দিন আগে দেয়া সর্বোচ্চ আদালতের নতুন রায়৷ এই রায়ে ২০০৬ সালে দেয়া রায় থেকে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ ফলে এখন থেকে দেশের ভেতরেও কাজ করতে পারবে সামরিক বাহিনী৷ প্রয়োজনে যুদ্ধকালীন অস্ত্রও ব্যবহার করতে পারবে৷ তবে তা অবশ্যই ‘অতি জরুরি' পরিস্থিতিতে, অন্য কোনো সময় নয়৷
প্রতিবেদন: ক্লাউস ডাহমান / জেডএইচ
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ