‘শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে সরকারের মাথা ব্যথা নেই’
১৪ মার্চ ২০১৭ডয়চে ভেলে: আপনি দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত আছেন৷ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠ্যসূচি কেমন দেখতে চান আপনি?
হায়াৎ মামুদ: পাঠ্যসূচি বা পাঠ্য পুস্তক আসলে মূল সমস্যা না৷ মূল সমস্যাটা হলো যাঁরা পড়ান, তাঁদের নিয়ে৷ আমরা স্কুলে যেমন শিক্ষক পেয়েছি এখন তেমন শিক্ষক নেই৷ আমাদের শিক্ষকরা শিক্ষকতা ভালোবাসতেন, শিশুদের ভালোবাসতেন বলে পড়াতেন৷ কিন্তু এখন সেটা নেই৷ শিক্ষকদের মান নিম্নমানের৷ পাঠ্যবই নিয়ে তাঁদের কোনো চিন্তা নেই৷ শিশুদের নিয়েও চিন্তা নেই৷ পাঠ্যসূচি যতটা না শিক্ষার্থীদের উপর প্রভাব ফেলে৷ তার চেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে শিক্ষকের পড়ানোটা৷
এবারের পাঠ্যবই বা পাঠ্যসূচি নিয়ে তো অনেক বিতর্ক হয়েছে, অনেক অমুসলিম কবির কবিতা বাদ দেয়া হয়েছে৷ এটা কেন হলো?
দেখুন পাঠ্যসূচি তৈরির বিষয়টাতে আমি ছিলাম৷ কিন্তু আমাদের না জানিয়েই এ পরিবর্তনগুলো করা হয়েছে৷ শিক্ষাবোর্ড বা মূল যাঁরা কর্তাব্যক্তি, যাঁরা বইটা ছাপবেন, তাঁরা যদি কিছু পাল্টাতে চান, যাঁরা বইটা তৈরি করেছেন তাঁদের সঙ্গে আলাপ করে করবেন তো? সেটা করেনি তাঁরা৷ কাদের পরামর্শে কী করে এমনটা হয়েছে কারু জানা নেই৷ তবে এর মধ্যে রাজনীতি আছে৷ আমরা কিন্তু রাজনীতি মাথায় রাখিনি৷ বিশুদ্ধ চিন্তার দিক থেকে যা শিক্ষা দেয়া উচিত আমরা সেভাবেই পাঠ্যপুস্তক করেছিলাম৷ কিন্তু পরে যাঁরা পরিবর্তন করলেন, তাঁরা কিন্তু বিষয়টি এভাবে না করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করলেন৷ যেটা করলে তাঁদের সুবিধা হয়৷ তাঁদের কী সুবিধা হয় তাঁরাই জানেন! কিন্তু ছেলেমেয়েদের খুব সুবিধা হচ্ছে বলে আমি মনে করি না৷
তাঁরা একবারও আপনাদের মতামত নেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি?
না মনে করেনি৷ এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে তো৷ আমি সেখানেও এটা বলেছি৷
আপনার কী মনে হয়, সরকার একটা বিশেষ গোষ্ঠীর চাওয়া পাওয়ার ভিত্তিতে এটা তৈরি করেছে? সরকার কি একটা সমঝোতার দিকে যাচ্ছে?
এটা বললে খুব খারাপ শোনাবে৷ সরকার নিজেদের তালে ব্যস্ত৷ কিসে তাদের ভোট বাড়ে সেটা নিয়েই তারা চিন্তিত৷ পড়াশোনা নিয়ে রাষ্ট্রের কোনো মাথাব্যথা নেই৷ যাঁরা রাষ্ট্র চালাচ্ছেন বিদ্যাশিক্ষা নিয়ে তাঁদের কোনো চিন্তা আছে বলে আমি মনে করি না৷ আমার মনে হয় না যে রাষ্ট্র এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে৷
এবারের পাঠ্যপুস্তকে প্রচুর ভুলও তো ছিল৷ এই যে পরিবর্তনগুলো হয়েছে এর প্রতিবাদ জানাননি আপনারা?
না....না এ নিয়ে আমরা বলেছি৷ খবরের কাগজে প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছি৷ আমরা সেখানে বলেছি এর সঙ্গে আমরা জড়িত নই৷ এগুলো আমাদের অনুমতি না নিয়ে, আমাদের সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ না করে করা হয়েছে৷
শিক্ষা ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করেই তো আজকের ছেলেমেয়েরা ভবিষ্যতের নাগরিক হয়ে উঠবে? তাহলে এ নিয়ে রাষ্ট্রের মাথাব্যথা নেই কেন? আপনার কী মনে হয়?
সরকার বলবে যে, এটা তোমাদের মনের কথা৷ শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে এই ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত জড়িয়ে আছে, এটা কে বলেছে? আমরা দেশ যেভাবে চালাচ্ছি, সেভাবেই চালাবো, আমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী৷ তারা শিক্ষকদের কাছ থেকে বা বিজ্ঞ সমাজের কাছ থেকে কোনোরকম পরামর্শ নিতে চায় না৷ এ নিয়ে তাদের কোনো চিন্তা নেই৷
সাক্ষাৎকারটি নিয়ে আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷