দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের খুঁটিনাটি
ভোটে আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি৷ আর বর্জনের ডাক দিয়েছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো৷ ভোটের আগে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে পুড়েছে যাত্রীবাহী ট্রেন, পুড়েছে ভোটকেন্দ্র, পুড়েছে ধর্মীয় উপাসনালয়ও৷
ভোট ২৯৯ আসনে
শঙ্কা আর আতংকের মধ্যেই বাংলাদেশের জনগণ নিজেদের ভোটাধিকার ক্ষমতার মধ্য দিয়ে নির্বাচিত করবে সরকার৷ নওগাঁ-২ আসনে একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে সেখানে ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন৷ সংসদীয় আসন ৩০০ হলেও রবিবার ভোট ২৯৯ আসনে৷
সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ১৫১টি আসন
সারা দেশকে জনসংখ্যার ভিত্তিতে তিনশটি আসনে ভাগ করা হয়েছে৷ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একদিনেই সবকটি আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়৷ ন্যূনতম ১৫১টি আসনে জয় পেলে এককভাবে অথবা অন্য দলের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে পারে রাজনৈতিক দলগুলো৷
ভোটার সংখ্যা
নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৯৯টি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার ১৫৭ জন৷ এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ছয় কোটি ৫ লাখ, ৯২ হাজার ১৬৯ জন৷ আর নারী হলেন পাঁচ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার ১৪০ জন৷ আর তৃতীয় লিঙ্গের ৮৪৮ জন৷ আর নওগাঁ-২সহ তিনশটি আসনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন৷
ভোটগ্রহণ
রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে একটানা ভোটগ্রহণ৷ নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোট যেহেতু ২৯৯টি আসনে হবে, তাই ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা কমে হয়েছে ৪২ হাজার ২৪টি৷ সবকটি কেন্দ্র মিলিয়ে ভোটকক্ষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৬০ হাজার ৮৫৮টি৷
প্রতিদ্বন্দ্বিতা
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৪৷ তবে এই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ২৮টি দল৷ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে থাকা বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো এই ভোট বর্জনের ডাক দিয়েছে৷ মোট ১৬টি নিবন্ধিত দল এই নির্বাচনে নেই৷ নওগাঁ-২ আসন বাদ দিয়ে ৪৩৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ভোটে আছেন এক হাজার ৯৬৯ জন প্রার্থী৷
নির্বাচনি কর্মকর্তা
দুই জন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন জেলা প্রশাসক মিলিয়ে মোট ৬৬ জন সরকারি কর্মকর্তা এই নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷ সহকারি রির্টানিং কর্মকর্তার সংখ্যা ৫৯০ জন৷ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে তিনশটি নির্বাচনি এলাকায় গঠন করা হয়েছে ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি৷
ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা
সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ—এই দু্ই ভাগে ভোটকেন্দ্রগুলোকে ভাগ করেছে নির্বাচন কমিশন৷ মেট্রোপলিটন ও বিশেষ এলাকার প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে অস্ত্রসহ পুলিশ সদস্য থাকবেন দুই জন, আনসার ১২ জন এবং দফাদার বা মহল্লাদার এক বা দুই জন৷ আর গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হলে অস্ত্রধারী পুলিশের সংখ্যা একজন বাড়ানো হবে৷ মেট্রোপলিটন এলাকার প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে অস্ত্রসহ তিন জন পুলিশের সঙ্গে থাকবেন ১২ জন আনসার সদস্য৷
মাঠে থাকছে স্ট্রাইকিং ফোর্স ‘সেনাবাহিনী’
‘স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে’ সহায়তা দিতে ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় ভোটের মাঠে সশস্ত্র বাহিনীকে নামিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ ৩ জানুয়ারি থেকে নামানো হয়েছে তাদের, থাকবেন ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত৷ ৬২টি জেলায় নেমেছেন ৩৮ হাজার ১৫৪ জন সেনা সদস্য৷ আর ভোলা ও কক্সবাজারসহ ১৯টি জেলায় নামানো হয়েছে দুই হাজার ৮২৭ জন নৌবাহিনীর সদস্য৷
মোবাইল টিম
মোবাইল টিম হিসেবে মাঠে রাখা হয়েছে বিজিবি, কোস্টগার্ড, .ব্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের৷ দেশজুড়ে নির্বাচনি পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে বিজিবির ৪৫ হাজার ১৮৫ জন, কোস্টগার্ডের দুই হাজার ৫২০ জন, পুলিশের ১০ হাজার ১৯২ জন এবং আনসারের ৪৪ হাজার ১২২ জন সদস্য কাজ করছেন৷ এছাড়া আছে র্যাবের ৬০টি টিম৷ আর রিজার্ভ রাখা হয়েছে বাহিনীটির ৯৫টি টিমকে৷
পর্যবেক্ষক ও বিদেশি সাংবাদিক
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন ২০ হাজার ৭৭৩ জন দেশি পর্যবেক্ষক৷ এদের মধ্যে ৫১৭ জন কেন্দ্রীয়ভাবে এবং ২০ হাজার ২৫৬ জন মাঠপর্যায়ে৷ আর বিদেশি পর্যবেক্ষক আছেন ১৫৮ জন৷ এদের মধ্যে ১২৬ জন এসেছেন স্বউদ্যোগে আর ৩২ জনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ এছাড়া, ৭৬ জন বিদেশি সাংবাদিক এবং বিভিন্ন দেশের নির্বাচন কমিশনার ও তাদের প্রতিনিধি মিলিয়ে মোট ১৮ জন ভোট পর্যবেক্ষণ ও সংবাদ সংগ্রহের কাজ করবেন৷
একনজরে তফসিল
১৫ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল৷ তফসিল অনুযায়ী মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল ৩০ নভেম্বর, মনোনয়ন যাচাই বাছাই করা হয় ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ছিল ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর৷ মনোনোয়ন প্রত্যাহার শেষ হয় ১৭ ডিসেম্বর এবং প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর৷ প্রার্থীদের নির্বাচনি প্রচারের জন্য ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছিল৷