দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে স্বাধীনতার স্মৃতিসৌধ
১৯৪৫ সালের ৮ মে পরাজিত হয় আডলফ হিটলারের জার্মানি৷ আর এরই মাধ্যমে ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যবনিকাপাত হয়৷ সেই যুদ্ধে মিত্র বাহিনীর স্বাধীনতা অর্জনের নানা স্মৃতি আছে জার্মানিজুড়ে
ব্যাটল অফ হুর্টগেন ফরেস্ট
আখেনের অদূরে হুর্টগেন বাগানে জার্মান বাহিনীর সঙ্গে ভয়াবহ সব যুদ্ধ করে অ্যামেরিকান বাহিনী৷ ১৯৪৪ সালের শেষদিক থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত চলা সেই যুদ্ধ জার্মানিতে সংঘটিত বড় যুদ্ধগুলোর একটি৷ পশ্চিমা মিত্র শক্তির আগমনের পথ হিসাবে থাকা হুর্টগেন ফরেস্ট এখনো ‘লিবারেশন রুট ইউরোপ’ হিসাবে অবস্থান করছে৷
রেমাগেনের সেতু
১৯৪৫ সালের ৭ মার্চ কোলনের দক্ষিণে অবস্থিত রেমাগেনের রেলসেতু দখল করে মার্কিন বাহিনী৷ এর মাধ্যমে হাজার হাজার মার্কিন সৈন্য রাইন নদী পার হতে সক্ষম হয়৷ সে কারণে সেতুটি ‘মিরাকল অব রেমাগেন’ হিসাবে পরিচিত৷ অবশ্য মার্কিনিরা দখলের ১০দিন পর জার্মান বাহিনীর বোমা বর্ষণে সেতুটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল৷ এখন ব্রিজ টাওয়ারের ধ্বংসাবশেষ নিয়ে একটি জাদুঘর চালু আছে সেখানে৷
রাইখসভাল্ড ফরেস্ট ওয়ার সেমেট্রি
যুদ্ধে নিহত মার্কিন সৈন্যদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হলেও ব্রিটিশ সেনাদের কবর দেওয়া হয়েছিল জার্মানির ১৫টি সমাধিসৌধে৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ‘কমনওয়েলথ ওয়ার সেমেট্রি’ অবস্থিত রাইখসভাল্ডে৷
সেলোভ হাইটস মেমোরিয়াল
১৯৪৫ সালের ১৬ এপ্রিল জার্মানির পূর্বপ্রান্তে সর্বশেষ বড় আক্রমণ চালায় ‘সোভিয়েত রেড আর্মি’৷ বোমা বর্ষণের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল সেলোভ হাইটস যুদ্ধ, যাতে বার্লিনের দিকে সেনাদের এগিয়ে দেওয়া সহজ হয়৷ সেখানে ৯০ হাজার সেনার জার্মান বাহিনীর বিপরীতে ৯ লাখ সোভিয়েত সেনা যুদ্ধ করে৷ এটি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির মাটিতে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ, যাতে হাজার হাজার সেনা নিহত হয়েছিল৷ বর্তমানে সেখানে একটি স্মৃতিসৌধ রয়েছে৷
এলবে দিবস, টোরগাউ
১৯৪৫ সালের ২৫ এপ্রিল টোরগাউ এলাকায় এলবে নদীর তীরে মিলিত হয় সোভিয়েত ও মার্কিন বাহিনী৷ ফলে পূর্ব ও পশ্চিম ফ্রন্টের সঙ্গে থাকা ‘দূরত্ব’ দূর হয়৷ যুদ্ধে সেনাদের এমন হ্যান্ডশেকের ছবি তৈরি করেছে ঐতিহাসিক গুরুত্ব৷ প্রতিবছর এলবে দিবসে মিত্র সেনাদের সেই সাক্ষাতের বার্ষিকী পালন করা হয়ে থাকে৷
জার্মান-রুশ জাদুঘর, বার্লিন-কার্লহর্স্ট
বার্লিন-কার্লহর্স্টের অফিসার্স মেসে ১৯৪৫ সালের মে মাসের ৮ তারিখ রাতে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে জার্মান বাহিনী৷ বর্তমানে জাদুঘরের প্রধান আকর্ষণ সেই আত্মসমর্পণের মূল দলিল, যা লেখা হয়েছিল ইংরেজি, জার্মান ও রুশ ভাষায়৷ সেখানে ১৯৪১ সাল থেকে রাশিয়ায় জার্মান বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের বহু দলিলও রয়েছে৷
সোভিয়েত ওয়ার মেমোরিয়াল, ট্রেপটাওয়ার পার্ক
ট্রেপটাওয়ার পার্কের স্মৃতিসৌধের নিখাদ আকৃতি অভিভূত করার মতো৷ ১ লাখ বর্গমিটার এলাকা নিয়ে গড়া স্মৃতিসৌধে একটি সামরিক সমাধিসৌধও আছে৷ বার্লিন যুদ্ধে নিহত সোভিয়েত সেনাদের স্মরণে নির্মাণ করা হয়েছিল স্মৃতিসৌধটি৷ লাল গ্রানাইটের তৈরি দু’টি সোভিয়েত পতাকা সেখানকার অন্যতম আকর্ষণ৷
সিসিলিয়েনহপ প্যালেসের পটসডাম কনফারেন্স
নাৎসি জার্মানির আত্মসমর্পণের পর ১৯৪৫ সালের গ্রীষ্মে পটসডাম এলাকার সিসিলিয়েনহফ প্যালেসে মিলিত হন মিত্র তিন দেশের সরকার প্রধানরা৷ রাশিয়ার জোসেফ স্টালিন, অ্যামেরিকার হ্যারি এস. ট্রুম্যান এবং ব্রিটেনের উইনস্টন চার্চিল নিজেদের দেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন৷ ‘পটসডাম কনফারেন্স’ নামে পরিচিত ওই সম্মেলনে যুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা হয়৷ এতে জার্মানিকে চারটি ‘দখলীকৃত অঞ্চলে’ ভাগ করা হয়েছিল৷
অ্যালায়েড মিউজিয়াম
যুদ্ধের পর বার্লিনকেও চারটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল৷ ৎ্সেলেনডর্ফ জেলা হয় অ্যামেরিকান সেক্টর৷ মার্কিন সেনাবাহিনীকে তৈরি সিনেমা ‘আউটপোস্ট’কে এই অ্যালায়েড মিউজিয়ামে অন্তর্ভূক্ত করা হয়৷ এতে রাজনৈতিক ইতিহাসের পাশাপাশি বার্লিনে পশ্চিমা সেনাদের নিয়ে নানা দলিলও রয়েছে৷ এছাড়া ১৯৪৫ সালে পশ্চিম বার্লিন দখল এবং ১৯৯৪ সালে মার্কিন সেনাদের বার্লিন ত্যাগের নানা রকম দলিলও আছে সেখানে৷
শ্যোনহাউজেন প্যালেস, বার্লিন
১৯৯০ সালে ‘টু প্লাস ফোর এগ্রিমেন্ট’ আলোচনার স্থান ছিল এই প্রাসাদটি৷ দুই জার্মানির সঙ্গে সে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে৷ এই চুক্তির মাধ্যমে চারটি দেশ জার্মানি থেকে তাদের সব অধিকার তুলে নেয় এবং এর মাধ্যমে দুই জার্মানির একত্রীকরণের পথ তৈরি হয়৷ সেখানকার অনেক ফলক ‘শেষ পর্যন্ত’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার বিষয়টি জানান দেয়৷