দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে দ্বিধা
১৭ নভেম্বর ২০১৩জার্মানিতে জন্ম, এমন অভিবাসী সন্তানদের ২৩ বছর বয়স পর্যন্ত দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকতে পারে৷ কিন্তু ২৩ বছর হবার মধ্যে তাঁদের জার্মান অথবা বাবা-মায়ের সাবেক দেশের নাগরিকত্ব, এই দু'টোর মধ্যে একটাকে বেছে নিতে হবে৷ এ না করলে তাঁদের জার্মান পাসপোর্ট তলব করে ‘‘নাগরিকত্ব খারিজের নোটিশ'' জারি করা যেতে পারে – এবং হয়েও থাকে!
কোনো একটি দেশের নাগরিকত্ব বেছে নেওয়ার এই ‘‘অপশান মডেল''-টি ২০০০ সালে চালু করা হয়৷ সে যাবৎ জার্মানিতে জন্ম, এমন অভিবাসী সন্তানদের ঐ দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে – তবে ২৩ বছর বয়স অবধি৷ ২৩তম জন্মদিনের মধ্যে নিজের পছন্দ-অপছন্দ না জানালে সংশ্লিষ্টের অজান্তেই তাঁর জার্মান নাগরিকত্ব খারিজ হয়ে যায়৷
দ্বৈত নাগরিকত্ব
অপরদিকে এই ‘‘অপশান মডেল'' বাস্তবিক দ্বৈত নাগরিকত্বের বিকল্প হতে পারে না৷ বলতে কি, আইনের নানা ফাঁকফোকর দিয়ে জার্মানিতে ইতিমধ্যেই দ্বৈত নাগরিকত্ব ঢুকে পড়েছে: যেমন মরোক্কান, ইরানি, আলজিরীয়, সিরীয় এবং ল্যাটিন অ্যামেরিকা থেকে আসা অধিকাংশ বহিরাগতদের ক্ষেত্রে ‘‘অপশান মডেল''-টি চলে না, কেননা তাদের সাবেক দেশগুলি ‘‘এক্সপ্যাট্রিয়েশন'' বা নাগরিকত্ব বাতিল মেনে নেয় না৷ ফলে জার্মান-সিরীয় বা জার্মান-আলজিরীয় নাগরিকত্বের মানুষরা জার্মানিতে দু'ধরনের পাসপোর্ট রাখতে পারে৷
তবে দ্বৈত নাগরিকত্বের প্রশ্নটি যে বহিরাগত গোষ্ঠীর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাঁরা হলেন জার্মানিতে বসবাসকারী তুর্কিরা, যাঁদের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ৷ এঁদের মধ্যে প্রায় দশ লক্ষের জন্ম আবার এই জার্মানিতেই৷ জার্মানির তুর্কি সম্প্রদায় নামধারী সমিতির ফেডারাল সভাপতি কেনান কোলাৎ ‘‘অপশান মডেলের'' অবসান দাবি করেছেন৷ তিনি চান, জার্মান নাগরিকত্ব আহরণের সহজ এবং সরলতর প্রক্রিয়া৷ এছাড়া দ্বৈত নাগরিকত্ব রাখার সুবিধাও তাঁর কাম্য৷ কোলাতের বক্তব্য: ‘‘যুগপৎ দু'জন প্রভুর সেবা করা যে সম্ভব নয়, এই আদর্শগত বিতর্কের অবসান ঘটা প্রয়োজন৷'' দ্বৈত নাগরিকত্বের অর্থ, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ‘‘সংস্কৃতিকে স্বীকৃতি দেওয়া''৷
কার কোথায় অবস্থান
সংসদীয় নির্বাচনের পর জোট সরকার গঠন নিয়ে যে আলাপ-আলোচনা চলেছে, তা-তেও দ্বৈত নাগরিকত্বের প্রশ্নটি মাথা চাড়া দিয়েছে৷ এসপিডি দল ‘‘অপশান মডেল'' তুলে দিতে চায় এবং নীতিগতভাবে দ্বৈত নাগরিকত্ব চালু করতে চায়৷ অপরদিকে খ্রিষ্টীয় সামাজিক সিএসইউ দল তার বিরোধী: জার্মানির সিএসইউ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হান্স-পেটার ফ্রিডরিশ যেমন বলেছেন, ‘‘টক বিয়ারের মতো করে জার্মান নাগরিকত্ব অফার করার কোনো প্রয়োজন নেই''৷
অপরদিকে ফ্রিডরিশ অপশান মডেলের সময়সীমা ২৩ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করতে রাজি৷ এছাড়া ফ্রিডরিশের সিএসইউ দলের নেতা হর্স্ট জেহোফার স্বয়ং একটি ‘‘সুপ্ত নাগরিকত্ব'' মডেলের প্রস্তাব দিয়েছেন, যার জন্য একক দেশগুলির সম্মতির প্রয়োজন পড়বে৷ তা সত্ত্বেও জেহোফারের এই প্রস্তাবকে দ্বৈত নাগরিকত্ব মেনে নেওয়া পথে সিডিইউ-সিএসইউ দলের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে৷