দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে ভয় কেন?
১১ আগস্ট ২০১৬জার্মানিতে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে৷ এর বিরোধীরা বলে থাকেন, দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে নাগরিকরা দুই দেশের জন্য সমানভাবে ভাবতে বা কাজ করতে পারে না৷ তাই এক্ষেত্রে এক ধরনের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়৷ বলা বাহুল্য, দ্বৈত নাগরিকত্বের বিরোধীরা বরাবরই আতঙ্ক তৈরিতে ব্যস্ত৷ এটা যেন এক ধরনের স্বৈরশাসন৷ তাঁরা দ্বৈত পার্সপোর্টধারীদের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলে মনে করেন৷
তবে এই বিরোধ যাঁরা মার্কিন বংশোদ্ভূত জার্মান এবং ট্রাম্পের সমর্থক, তাঁদের নিয়ে নয়৷ ফরাসি-জার্মানদের মধ্যে যাঁরা মারিন ল্য পেন বা ‘ন্যাশানাল ফ্রন্ট'-এর সমর্থক, তাঁদের নিয়েও নয়৷ এমনকি ৬ লাখ ৯০ হাজার ডানপন্থি পোলিশ-জার্মান বা কাসিনস্কি-ভক্ত অথবা ৫ লাখ ৭০ হাজার রুশ-জার্মান যাঁরা পুটিনকে পছন্দ করেন, তাঁদের নিয়েও কোনো সমস্যা নেই৷ মূল সমস্যা হলো ৫ লাখ ৩০ হাজার তুর্কি-জার্মানদের নিয়ে, যাঁরা এর্দোয়ানকে সমর্থন করে৷
তাঁকে নিয়েই এ মুহূর্তে মেতে আছে জার্মানি৷ সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার রেশ ধরে জার্মানদের একটা বড় অংশ মনে করে যে, ইউরোপের গণতন্ত্রের জন্য এর্দোয়ান হুমকিসরূপ এবং তাঁকে সবার ভয় পাওয়া উচিত৷ আর শুধু তাঁকেই নয়, তাঁর বাহিনী বা সমর্থক, অর্থাৎ তুর্কি-জার্মানদের থেকেও দূরে থাকা ভালো৷
অথচ বর্তমান ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনে দ্বৈত নাগরিকত্ব বৈধ৷ যার অর্থ, ইইউ নাগরিকদের এ থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়৷
অবশ্য তুর্কি-জার্মানদের দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে সমস্যা বা আলোচনার প্রধান কারণ তুর্কিরাই৷ এই যেমন, ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জার্মানির ৪৩ লাখ মানুষের দু'টি পাসপোর্ট আছে৷ এরা প্রধানত জার্মানির নাগরিক, তবে পাশাপাশি অন্য আর একটি দেশেরও নাগরিক৷ দেখা যাচ্ছে, এঁদের মধ্যে ৫ লাখ তুর্কি৷ এর বাইরে ১৫ লাখ তুর্কি জার্মানিতে জার্মান পাসপোর্ট ছাড়াই বসবাস করছে৷ বাকি ৮ লাখ তুর্কির কেবলমাত্র জার্মান পাসপোর্ট রয়েছে৷ অর্থাৎ শতকরা মাত্র ২০ ভাগ তুর্কির দু'টি পাসপোর্ট রয়েছে৷ তাহলে এ অবস্থা জার্মানির গণতন্ত্রের জন্য কীভাবে হুমকি হয়ে উঠবে?
দু'সপ্তাহ আগে কোলনে এর্দোয়ান সমর্থকদের সমাবেশের পরই এই আলোচনাকে উসকে দিয়েছে জার্মানরা৷ ঐ সমাবেশে ৩০ থেকে ৪০ হাজার তুর্কি যোগ দিয়েছিল৷ আর সেই ৪০ হাজার তুর্কির যদি দ্বৈত নাগরিকত্ব থেকে থাকে, তাতে জার্মানির গণতন্ত্রের কি এমন ক্ষতি হবে?
আসলে জার্মানিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতেই মূলত এই প্রশ্নগুলো উঠছে৷ ভিন্ন ভাষাভাষি, ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের কাছে স্বস্তির জায়গাটা হলো দ্বৈত নাগরিকত্ব৷ কিন্তু সেটা পাওয়া না গেলে, অর্থাৎ কাউকে যদি শুধুমাত্র জার্মান নাগরিকত্ব দেওয়া হয়, তার মানে এই নয় যে, তাঁকে জোর করে জার্মানিকে ভালোবাসতে হবে৷ নিজের দেশপ্রেমকে বিসর্জন দিয়ে অন্য দেশের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য দেখাতে হবে৷ দ্বৈত নাগরিকত্ব পেলেও কাউকে জোর করা যাবে না জার্মানির একজন হয়ে ওঠার জন্য৷ আমার তো মনে হয়, তুমি জোর করে কাউকে ধর্ষণ হয়ত করতে পারো, কিন্তু ভালোবাসা পেতে পারো না৷
আধুনিক গণতন্ত্রের মতবাদ হলো মুক্ত সমাজ৷ নাগরিকরা মুক্তভাবে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারলে, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারলে, সেটাই হবে গণতন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ৷ আর সেজন্য যদি দ্বৈত নাগরিকত্বের প্রয়োজন হয়, তবে তা দেওয়া হবে না কেন?
বন্ধু, আপনি কি লেখকের সঙ্গে একমত? এ বিষয়ে আপনার মতামত লিখুন নীচের ঘরে৷