ধরিত্রী বাঁচাতে এগিয়ে এলেন বিশিষ্টজনেরা
২৭ মে ২০১১১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম ধরিত্রী সম্মেলন৷ তারই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে সেখানেই অনুষ্ঠিত হবে জাতিসংঘ সম্মেলন৷ জাতিসংঘের উদ্যোগে অনুষ্ঠিতব্য টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক সেই সম্মেলন থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত ও ঐকমত্যের জন্য এরইমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা৷ তারই অংশ হিসেবে রয়াল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স এবং জার্মানির পটসডাম ইন্সটিটিউট অফ ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চ যৌথভাবে আয়োজন করল বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বৈঠক৷ যে বৈঠকের সুপারিশমালা জাতিসংঘের ধরিত্রী সম্মেলনে তুলে ধরা হবে৷
স্টকহোমে ‘বিশ্বের স্থায়িত্বের জন্য হুমকি জলবায়ু পরিবর্তন ও দারিদ্র্য' শীর্ষক ঐ বৈঠকে একটি স্মারকলিপিতে সই করলেন ২০ জন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানীসহ ৫০ জন বিভিন্ন পর্যায়ের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব৷ স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে যেমন আচেন রসায়নে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী মারিও মোলিনা এবং পল ক্রাৎসেন, তেমনি সাহিত্যে নোবেল পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকান লেখিকা নাদিন গর্ডিমার৷ তারা সহমত প্রকাশ করলেন এই বলে যে বৈশ্বিক পরিবর্তনের অন্যতম চালক হল মানুষ৷ তাই মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে পরিবেশ ব্যবস্থা রক্ষা করতে৷
বাংলাদেশের সেন্টার ফর কমিউনিকেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর পরিচালক জি এম মুর্তুজা বললেন, ‘‘উন্নত দেশগুলো অতিরিক্ত কার্বন নি:সরণ ও বায়ু দূষন করার ফলে আজকের এই বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে৷ উন্নয়নশীল দেশগুলো বরাবরই বলে আসছে উন্নত দেশগুলোর কারণে এটা হয়েছে৷ এবং এর ক্ষতিপূরণ উন্নত দেশগুলোকেই দিতে হবে৷''
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সুইডেনের প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়াও৷ তিনি আহ্বান জানালেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হুমকির মুখে থাকা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ‘৯১১ কোড নম্বরে' সাড়া দিতে৷ সবচেয়ে জরুরি সেবার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে ৯১১'র এই কোড৷ এখন পরিবেশবিদরা ধরিত্রী বাঁচাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জরুরি ডাককে সেই ৯১১ কোড দিয়ে আখ্যায়িত করছেন৷
১৭ মে'র বৈঠকে আয়োজন করা হয় ছদ্ম এক আদালত৷ সেখানে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের নিয়ে গঠিত বিচারক প্যানেলের সামনে মানবজাতিকে আসামি এবং ধরিত্রীকে বাদী হিসেবে হাজির করা হয়৷ ধরিত্রী এবং মানবজাতি নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির জন্য একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে৷ এই আদালতের শুনানি এবং বিজ্ঞানীদের আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রকাশ করা হয় ‘স্টকহোম স্মারকলিপি'৷ যেখানে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসেয়াসে নামিয়ে আনা এবং কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের সর্বোচ্চ মাত্রা ২০১৫ সালের মধ্যে কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে৷
জি এম মুর্তুজা বললেন, ‘‘বিশ্বের তাপমাত্রাকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে আনার ব্যাপারটিতে তাঁরা যে গুরুত্ব আরোপ করেছে তা বিশ্বব্যাপী একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা৷ এই বিষয়টিতে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ কাজ করে যাচ্ছে৷ তবে উন্নয়নশীল দেশগুলো আসলে চাচ্ছে যে, দুই ডিগ্রি নয়, কিয়োটো প্রটোকলের আলোকে কিভাবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ থেকে দেড় ডিগ্রি নামিয়ে আনা যায়৷ বিশেষ করে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মতো উন্নয়নশীল দেশ, যেদেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হতে যাচ্ছে তারা এটি চাইছে৷ আমরা দেখেছি কোপেনহেগেন এবং কানকুনের সম্মেলনে বিশ্বনেতারা এ বিষয়ে একমত হতে পারেননা৷ স্টকহোমের এ আলোচনার আলোকে বিশ্বনেতাদের মতামতকে মেনে নিয়ে যদি তাপমাতা ২ ডিগ্রি নামিয়ে আনতে পারি তা সবার জন্যই মঙ্গল হবে৷''
১৮ মে নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানীদের স্বাক্ষরিত এই স্মারকলিপি হস্তান্তর করা হয় জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের কাছে৷ ২০১২ সালের ধরিত্রী সম্মেলনের আলোচ্যসূচি তৈরি করছে জাতিসংঘ৷ সেখানে স্টকহোম বৈঠকের সুপারিশমালা কতটুকু প্রতিফলিত হয় এখন তাই দেখার বিষয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
জি এম মুর্তুজা বললেন, ‘‘কোপেনহেগেন ও কানকুনসহ বেশ কয়েকটি জলবায়ু সম্মেলনে আমার উপস্থিত হওয়ার সুযোগ হয়েছে৷ প্রথম থেকে যে জিনিসটি দেখা যাচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে উন্নত দেশগুলোর বিশাল একটি মতপার্থক্য৷ উন্নত দেশ ও উন্নয়নশীল দেশ এ ব্যাপারে এক জায়গায় হতে না পারার কারণে এইসব সম্মেলন ততটা সফল হচ্ছেনা এছাড়া দেখা যায়, আমরা এ বিষয়টিকে নিয়ে শুধু আলোচনা করি৷ কিন্তু সেসব আলোচনা থেকে এখনও আমরা সফলতার মুখ দেখতে পাইনি৷ এটা আমাদের জন্য খুবই আশাহত হবার মত একটি বিষয়৷''
প্রতিবেদন: জান্নাতুল ফেরদৌস
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক