ধর্ম, কোভিড-১৯ ও ধরিত্রীর মুক্তি
৪ মে ২০২০বিশ্বাস মানুষকে আধ্যাত্মিক ও ব্যবহারিক দুইভাবেই সহযোগিতা করে, বিশেষ করে সংকটের সময়৷ ঠিক এখন যেমনটি দেখছি যে, চার্চ, মসজিদ, মন্দির ও সারাবিশ্বের অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সাহায্য, খাবার, আশ্রয়, অর্থ ও চিকিৎসাসেবা নিয়ে এগিয়ে এসেছে৷ যখন লাখ লাখ মানুষ করোনা মহামারীর স্বাস্থ্যগত, অর্থনৈতিক ও মানসিক পরিণতির শিকার হচ্ছেন, তখন এমন সহাবস্থান খুবই জরুরি৷
তবে ধর্মগুলো ও তাদের নেতাদের আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে: এর চেয়েও ভয়ঙ্কর সংকট থেকে তাদের মানুষের ওপর তাদের প্রভাব খাটিয়ে পৃথিবী নামক গ্রহটিকে বাঁচাতে পারেন৷
আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সেখানে বসবাসরত প্রাণি ও তাদের আবাসস্থল ধংস করার কারণে আজ কোভিড-১৯ ও পূর্ববর্তী আরো অনেক রোগ পশু থেকে মানুষের শরীরে এসেছে৷ এই মহামারী কিংবা অস্ট্রেলিয়ায় দাবানল, বহু বছর পর জানুয়ারি মাসে এত গরম অথবা আফ্রিকায় পঙ্গপালের এমন হানা- এর অর্থ ধরিত্রী আমাদের কাছে জরুরি বার্তা দিচ্ছে: আমরা আমাদের নিরাপদ রাখতে পারব না যদি না আমরা প্রকৃতিকে নিরাপদ রাখি৷
এই ডাকে সারা দেয়াই হবে এখন বুদ্ধিমত্তার পরিচয়৷ কী করে ধরিত্রীর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঠিক করা যায়, সেটাই হওয়া উচিত কোভিড-১৯ এর প্রতি দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়া৷ আর এই সম্পর্ক মেরামত করতে হবে জীবনধারণের প্রতিটি ক্ষেত্রে৷ এর অর্থ এই প্রতিক্রিয়ার নানা দিক রয়েছে৷
যেসব অর্থনৈতিক প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে তাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পরিবেশবান্ধব ভবন, অবকাঠামো ও যানবাহন যুক্ত করতে হবে৷
আমাদের উৎপাদন ও ভোগের ধরন পালটাতে হবে: কম কেনা, কম অপচয় ও পুণরায় ব্যবহার- যা লকডাউনের সময় অনেকেই করেছেন৷ আমাদের বনগুলোতে পুণরায় বনায়ন করতে হবে এবং সংরক্ষিত অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ করতে হবে৷ আর বন্যপ্রাণী ও বনজসম্পদের অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে এবং বৈধ বাণিজ্য পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে হবে৷
ধর্মীয় গুরুগণ ও তাদের অনুসারীদের ভূমিকা এই পরিবর্তন আনয়নে খুব গুরত্বপূর্ণ৷ কারণ:
তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যতম প্রাচীন ও সবচেয়ে পরম্পরাগত এবং কোটি কোটি মানুষকে গুরত্বপূর্ণ সেবা দিয়ে যাচ্ছে৷ এ কারণে শুধু স্বাভাবিক সময়েই নয়, জরুরি অবস্থাতেও তারা গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার৷
ধর্মীয় সংস্থাগুলোর অধীনে বিপুল সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে৷ তাই তারা মানুষের স্বাস্থ্য ও পৃথিবীর মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে পারে৷ পুরোবিশ্বে তাদের অধীনে অসংখ্য চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে যেগুলো চলমান মহামারীর বিরুদ্ধে শুধু লড়াই করছে তা নয়, স্বাভাবিকভাবে পৌঁছানো কঠিন এমন জনসমাজেও তারা সেবা দিতে পারে৷
যেমন, এমন একটি উদ্যোগ হল ইন্টারফেইথ রেইনফরেস্ট ইনিশিয়েটিভ, যেখানে জাতিসংঘ পরিবেশ প্রকল্প (ইউএনইপি) ও রিলিজিয়ন্স ফর পিস একসঙ্গে কাজ করছে৷
এমন উদ্যোগ শুরুর জন্য ভালো, কিন্তু আমরা আরো অনেক কিছু করতে পারি৷
আসল ব্যাপার হল, মানুষের ঔদ্ধত্য তার ঘর ধংস করছে, যেটা অনেকেই বিশ্বাস করেন সৃষ্টিকর্তা আমাদের জন্য তৈরি করেছেন৷ ধর্মীয় নেতারা একটি স্বাস্থ্যকর পৃথিবীর জন্য তাদের প্রভাব কাজে লাগাতে পারেন- একইসঙ্গে অনুসারীদের এসব ডাকে সারা দিয়ে সব ধর্মে সৃষ্টিকে রক্ষা করার যে বাণী ও ঐতিহ্য রয়েছে, তা মেনে চলা উচিত৷
কোভিড-১৯ এর প্রত্যুত্তর হল বিশ্বাসের ক্ষমতা৷ এখন আমাদের ও পৃথিবীর সব প্রজাতির প্রাণির জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যত গড়তে এই ক্ষমতা কাজে লাগাতে হবে৷
ইনগার অ্যান্ডারসেন, আজ্জা কারাম/জেডএ
ইনগার অ্যান্ডারসেন জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল ও ইউএনইপির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর৷ আজ্জা কারাম বিশ্বের ধর্ম ও বিশ্বাসগুলো নিয়ে সংস্থা রিলিজিয়ন্স ফর পিসের জেনারেল সেক্রেটারি ও আমস্টারডামে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক৷