টিম্বাকটু'র ঐতিহ্য
২ জুলাই ২০১২যুদ্ধবিগ্রহের সময়ে কোনো দেশের প্রাচীন ঐতিহ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা বিরল নয়৷ কিন্তু আফগানিস্তানের বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি ধ্বংস বা বাগদাদের জাদুঘর লুটপাটের মতো ইচ্ছাকৃত ঘটনার ফলে সমগ্র মানবজাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়৷ আফ্রিকার দেশ মালি'র উত্তরাঞ্চলে গত প্রায় তিন মাস ধরে উগ্র ইসলামপন্থী বিদ্রোহীরা যে তাণ্ডব চালাচ্ছে, তার ফলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে একের পর এক নিদর্শন৷ আন্তর্জাতিক ফৌজদারী আদালত তাদের এই ধ্বংসলীলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য করছে৷ মালি'র সরকারও বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে৷
টিম্বাকটু শহরের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিশ্ববিখ্যাত৷ বিশাল ইমারত বা স্থাপনা নয়, মাটির বাড়ি ও সাধারণ কাঠামোর মধ্যেই কয়েক'শো বছর ধরে সংরক্ষিত আছে দুর্লভ পুঁথিপত্র ও অন্যান্য দুষ্প্রাপ্য বস্তু৷ জ্ঞান ও শিক্ষার কেন্দ্র বলে পরিচিত মরুশহর টিম্বাকটু ‘৩৩৩ জন সন্তের নগর' বলেও পরিচিত৷ সেখানে ইসলামি ধর্মীয় নেতাদের সমাধিক্ষেত্রও অত্যন্ত সুন্দর করে সাজানো ছিল৷ শহরের ১৬টি ঐতিহাসিক নিদর্শন ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে৷ বিদ্রোহীরা সেগুলি তছনছ করে শহরের একের পর এক সম্পদ নষ্ট করে দিচ্ছে৷
শনিবার বিদ্রোহীরা সিদি মাহমুদ, সিদি মোক্তার ও আলফা মোয়া'র সমাধিস্থল ধ্বংস করে দিয়েছে৷ রবিবার তারা আরও চারটি সমাধি ধ্বংস করে দেয়৷ শহরের মানুষ অসহায় অবস্থায় সশস্ত্র এই দলের ধ্বংসলীলা দেখে চলেছে৷ ১৩২৭ সালে মাটি দিয়ে তৈরি জিঙ্গারেবার মসজিদের সঙ্গে লাগোয়া সমাধিক্ষেত্রের আর প্রায় কিছুই অবশিষ্ট নেই৷ বিদ্রোহীরা শহরের আরও প্রাচীন মসজিদ ধ্বংস করার হুমকি দিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে৷
আন্তর্জাতিক ফৌজদারী আদালতের প্রধান কৌঁসুলি ফাতু বেনসুদা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘যারা এই সব অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িত, তাদের প্রতি আমার বার্তা হলো, এখনই ধর্মীয় ভবনগুলির ধ্বংসলীলা বন্ধ করো৷ এগুলি যুদ্ধাপরাধের ঘটনা এবং এর তদন্ত করার পূর্ণ অধিকার ও কর্তৃত্ব আমার দপ্তরের হাতে রয়েছে৷''
গত মার্চ মাসে মালি'তে এক সামরিক অভ্যুত্থানের ফলে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়, তার জের ধরে উত্তরাঞ্চল দখল করে ফেলেছে আল কায়েদার মদতপুষ্ট বলে পরিচিত ‘আনসার দিন' বা ধর্মের রক্ষাকারী নামের সশস্ত্র গোষ্ঠী৷ তাদের কট্টর ভাবধারা অনুযায়ী ইসলাম ধর্মের ছত্রছায়ায় কোনো রকম মূর্তি বা স্মারকের স্থান থাকতে পারে না৷
এসবি / ডিজি (এএফপি, ডিপিএ)