আত্মহত্যা!
৩০ নভেম্বর ২০১৪ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন সিবিআই বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, মে মাসে যে দু'জন মেয়েকে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল, তারা আত্মহত্যা করেছিল এবং আগে যা ভাবা হয়েছিল যে তাদের গণধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে, তা সঠিক নয়৷ গত কয়েক মাস ধরে তদন্ত করার পর তারা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন৷
সংস্থাটি একটি বিবৃতিতে জানায়, ‘‘৪০টি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে৷''
সিবিআই-এর মুখপাত্র কাঞ্চন প্রসাদ সংবাদ সংস্থা এপি-কে বলেছেন, ‘‘স্থানীয় পুলিশ এবং ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ভুল ছিল এবং যে পাঁচ ব্যক্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তারা নির্দোষ৷''
কাঞ্চন আরো বলেন, ‘‘বড় মেয়েটির একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল৷ যেদিন রাতে তারা নিখোঁজ হয়, সেই রাতে ঐ দুই বোন ছেলেটির সাথে মেলায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল৷ রাতে খাওয়ার পর ওরা তিনজন একসাথে বাইরে বের হয়৷ পরে বড় মেয়েটি একটা মাঠে ছেলেটির সাথে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হলে, এক আত্মীয় তাদের দেখে ফেলেন৷'' ঐ আত্মীয় পরিবারকে জানালে কী হবে সেই ভয়ে মেয়ে দুটি আত্মহত্যা করে বলে জানান কাঞ্চন৷
তিনি আরো বলেন, মেয়ে দুটির পরিবার থানায় ধর্ষণ ও হত্যা সংক্রান্ত ভুল রিপোর্ট লিখিয়েছিল৷ এখন আদালতে এই প্রতিবেদন জমা দেবে সিবিআই৷ তারপর আদালত মেয়েদের পরিবারের দায়ের করা মামলার রায় দেবে৷
ঘটনাটি ঘটেছিল চলতি বছরের ২৮শে মে৷ উত্তর প্রদেশের কাটরা গ্রামে ঐ দুই মেয়ের মৃতদেহ আমগাছে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়৷ মেয়ে দুটি সম্পর্কে আত্মীয়৷ একজনের বয়স ১৫ বছর আর একজনের ১৪৷ এর ক'দিন আগে মাঠে টয়লেট করতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি মেয়ে দুটি৷ তখন থেকে নিখোঁজ ছিল তারা৷
এ ঘটনার পর পুরো ভারত জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷ প্রাথমিক মেডিকেল পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়ার পর, সেই ছেলেসহ পাঁচ ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন মেয়ে দুটির পরিবার৷ তবে সেপ্টেম্বরে জামিনে ছাড়া পায় ঐ পাঁচজন৷
নারী অধিকার কর্মীরা এ তদন্তে মোটেও সন্তুষ্ট হননি৷ তাঁরা এর পুনঃতদন্ত দাবি করেছেন৷ দিল্লির কমিশন ফর উইমেন-এর প্রধান সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘সিবিআই-এর উচিত পুনরায় তদন্ত করা এবং তারপর সিদ্ধান্তে পৌঁছানো৷ দোষীদের অবশ্যই শাস্তি পাওয়া দরকার৷''
মেয়ে দুটির প্রতিবেশী প্রেমবতী দেবী সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, ‘‘এ তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্বাসযোগ্য নয়৷ সিবিআই সত্য লুকানোর চেষ্টা করছে, কারণ সত্য খোঁজার জন্য যে পরিশ্রম করা প্রয়োজন তারা তা করতে চায় না৷''
২০১২ সালের ডিসেম্বরে দিল্লিতে চলন্তবাসে এক নারী গণধর্ষণের শিকার হওয়ার পর মারা গেলে পুরো ভারত জুরে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে এবং ভারতে নারীদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি প্রকট হয়ে ওঠে৷
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)