‘ধর্ষণের শিকার অনেকে ফোন করে প্রতিকার পেয়েছেন’
৯ অক্টোবর ২০২০ডয়চে ভেলে : ৯৯৯ নম্বরটি কি পুলিশের কাছে সহযোগিতার জন্য , নাকি জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন?
তবারক উল্ল্যাহ : এটা মূলত জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন৷ এটি আইসিটি উপদেষ্টার নির্দেশক্রমে ২০১৭ সালে পুলিশের মাধ্যমে শুরু হয়েছে৷ এটি জাতীয় জরুরি সেবা৷ এটি পরিচালনার মূল ভূমিকা পালন করছে পুলিশ৷ সরকার এখন চিন্তা ভাবনা করছে এটি পরিচালনার জন্য পুলিশের আলাদা একটা ইউনিট করে এটি পরিচালনা করা হবে৷
এখনো তো অনেক ঘটনায় অনেকে ৯৯৯-এ ফোন করে সহযোগিতা চান না৷ কেন চান না? তারা কি আসলে জানেন না?
আমাদের দেশে এখন জনসংখ্যা ১৭/১৮ কোটি৷ সবাই তো আমাদের কাছে ফোন করে সেবা নেন না৷ না নেওয়ার বড় কারণ, তারা আসলে এই সেবা সম্পর্কে জানেন না৷ আমাদের দেশে যারা শহরে বসবাস করে, তারা হয়ত সবসময় মিডিয়া বা পেপার পত্রিকার রিপোর্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকেন৷ এ কারণে তারা হয়তো এই সেবা সম্পর্কে জানেন৷ কিন্তু যারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, তারা হয়ত সবসময় মিডিয়ার খবর সম্পর্কে জানেন না৷ তাদের অনেকেই এখনো এই সেবা সম্পর্কে জানেন না৷
সবাইকে এই সেবা সম্পর্কে অবহিত করতে আপনারা কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন?
২০১৭ সালে চালু হওয়ার পর মিডিয়ার মাধ্যমে এ সেবা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করেছি৷ আসলে এটির ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য বা জনগণের দোরগোড়ায় নেওয়ার জন্য এখনো আমরা বড় ধরনের কোনো প্রোগ্রাম করতে পারিনি৷ বলতে পারেন, এটি আমাদের এক ধরনের দুর্বলতা৷ সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আসলে এটির সঙ্গে বাজেট বরাদ্দ থেকে শুরু করে অনেক কিছুই জড়িত৷ চাইলেই সবসময় সবকিছু সম্ভব হয় না৷ তবে এটিকে সব ধরনের মানুষের কর্ণগোচরে নেওয়ার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে৷ আপনি যদি বিভাগওয়ারী কল দেখেন, তাহলে দেখবেন, সবচেয়ে বেশি কল আসে ঢাকা বিভাগ থেকে৷ ৪৬ শতাংশ৷ আপনি যদি অন্য বিভাগের সঙ্গে তুলনা করেন, তাহলে দেখবেন, সিলেট বিভাগ থেকে কল এসেছে ৩ শতাংশ৷ বরিশাল বিভাগ থেকেও এসেছে ৩ শতাংশ কল৷ এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায়. সকল মানুষের কাছে এই সেবা পরিচিত না৷
নোয়াখালীর ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী বা অন্য কেউ কি ৯৯৯-এ ফোন করেছিলেন?
আপনি তো একটি সুনির্দিষ্ট ঘটনার কথা বললেন৷ আসলে আমরা প্রতিদিন ৩০ হাজারের মতো কল রিসিভ করে থাকি৷ নারীর প্রতি সহিংসতার অনেক কলই কিন্তু আমরা রিসিভ করি৷ করোনার সময়েও আমরা নারীর প্রতি সহিংসতা বা গৃহনির্যাতনের প্রচুর কল রিসিভ করেছি৷ অনেক নারী আসলে এই সেবা সম্পর্কে জানেন না৷ আবার অনেক নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে আমাদের কাছে ফোন করে প্রতিকার চেয়েছেন৷ আমরা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পাঠিয়ে তাকে উদ্ধার করেছি৷ এমনকি ধর্ষকদেরও গ্রেপ্তার করেছি৷ নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় এ বছরের জানুয়ারিতে আমরা ৯৬৬টি কল রিসিভ করেছি৷ ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৬৯টি, মার্চে এক হাজার ১৬৪টি, এপ্রিলে ৯৩১টি, মে মাসে ৯৩৪টি, জুনে ৭৫১টি, জুলাইয়ে ৩৫০টি কল পেয়েছি৷ এই কলের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে৷
আপনারা কি সবসময় সবার সব ফোন অ্যাটেন্ড করতে পারেন?
না৷ অনেক সময় এমন ফোন আমাদের কাছে আসে, সেখানে সেবা দেওয়ার কোনো সুযোগ আমাদের থাকে না৷ গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমরা ২ কোটি ৩৯ লাখের বেশি কল রিসিভ করেছি৷ আমরা কিন্তু এই বিশাল সংখ্যক কলের সেবা দিতে পারিনি৷ দিতে পেরেছি মাত্র ২১ শতাংশ, অর্থাৎ ৫০ লাখ কলের সেবা৷ ৭৯ শতাংশ কলের সেবা কিন্তু দেওয়া যায়নি৷ আমাদের নির্ধারিত সেবা হচ্ছে তিনটি৷ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং অ্যাম্বুলেন্স৷ আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু জরুরি সেবা কোনটি সেটা ডিফাইন করতে পারে না৷ সে যখন বিপদে পড়ে, তখন তার জন্য সেটা কিন্তু জরুরি৷ আমার জন্য হয়ত সেটা জরুরি না৷ ফলে সে তার যখনই প্রয়োজন, তখনই ফোন দিচ্ছে৷
আপনাদের বর্তমানে জনবল কত? এটা কি যথেষ্ট?
বর্তমানে ১০০টি ওয়ার্ক স্টেশনে সাড়ে ৪শ' জনবল বর্তমানে কাজ করছে৷ প্রথম মাত্র ১০০ জন দিয়ে এটা শুরু করেছিলাম৷ এই যে ১০০ থেকে সাড়ে ৪শ'তে আসা, সেটা কিন্তু একদিনে হয়নি৷ গত তিন বছরে হয়েছে৷ দিন দিন আমার সেবার চাহিদা বাড়ছে৷ এই চাহিদার প্রেক্ষিতেই কিন্তু আমার সেবার জনবল বাড়াতে হচ্ছে৷ আমরাও চেষ্টা করছি, চাহিদার পাশাপাশি জনবল বাড়াতে৷
এ পর্যন্ত কতজন মানুষকে সেবা দিয়েছেন আপনারা?
আমি যদি সুনির্দিষ্ট করে বলি, তাহলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৯ লাখ ৮২ হাজার ৯৬৩ জনকে আমরা সেবা দিতে পেরেছি৷
এ পর্যন্ত কত মানুষ আপনাদের কাছে সেবা চেয়েছেন?
আমরা ধরে নেব যে, যারা আমাদের কাছে কল দিয়েছেন, তারা সবাই সেবা পাওয়ার জন্যই করেছেন৷ আসলে এটি পৃথক করা কঠিন যে, আমাদের কাছে কতজন সেবা চেয়েছেন৷ আমরা যে ২ কোটি ৪০ লাখ ফোন রিসিভ করেছি, এর মধ্যে সবাই তো সেবা পাওয়ার জন্য ফোন দেননি৷
কোন ধরনের সহযোগিতা মানুষ বেশি চান?
আমরা সবচেয়ে বেশি কল পেয়েছি, ব্যাক্তি, সম্পদ বা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক বিভিন্ন ধরনের মারামারি, হামলা, আক্রমণ- এই ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে৷ এরপর বিভিন্ন দূর্ঘটনাজনিত সমস্যার জন্য৷ চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, হুমকি, মাদক, চুরি, শব্দ দূষণ, গৃহনির্যাতন, বাল্যবিবাহ, জুয়াসহ অনেক ধরনের সমস্যা নিয়ে মানুষ আমাদের ফোন করেন৷
আপনারা কী ধরনের সেবা সবচেয়ে বেশি দিয়েছেন?
আমরা যে সেবা দিয়েছি, এর মধ্যে ৭৭ শতাংশ সেবাই হচ্ছে পুলিশি সেবা৷ এরপর ১২ শতাংশ ফায়ার সার্ভিস এবং সর্বশেষ ১১ শতাংশ অ্যাম্বুলেন্স সেবা৷
কারা বেশি সহযোগিতা চান? নারী, না পুরুষ?
এ পর্যন্ত আমরা যে কল পেয়েছি, তার মধ্যে শতকরা ৮১ ভাগ পুরুষ আর ১৯ ভাগ নারী৷
অভিযোগ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট থানায় ফোন করলে কি যথেষ্ট সাড়া পান?
ধরুন, একজন মিরপুর থেকে ফোন করে সহযোগিতা চাইলেন৷ আমি কনফারেন্স কলে হয়তো মিরপুর থানায় ধরলাম৷ তারা যখন ফোর্স পাঠাতে যাবে, তখন দেখা গেল তাদের যে টহল ভেহিকেল আছে সেটা অন্য জায়গায়৷ ফলে আসলে আমরা যে সেবাটা দিতে চাই, বাস্তব পরিস্থিতির কারণে সেটার তারতম্য ঘটে৷ কোথাও হয়ত দ্রুতই দিতে পারছি, আবার কোথাও হয়ত ৩০ থেকে ৪০ মিনিট লেগে যাচ্ছে৷ ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি কল পাই, এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে সবচেয়ে বেশি৷ এখানে সেবা দিতে গিয়ে আমাদের সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়৷
যেসব কর্মকর্তা ঠিকমতো কাজটি করেন না, তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়? এখন পর্যন্ত কি কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
অবশ্যই নিয়েছি৷ আমাদের কল পাওয়ার পর রেসপন্স করেনি বা ওই নাগরিককে যে সময়ের মধ্যে সেবাটা দেওয়া দরকার, সেটি যথাযথ দিতে পারেননি, এই কারণে থানার অফিসার ইনচার্জ প্রত্যাহার হয়েছেন৷ এমন উদাহরণ একটি না, একাধিক রয়েছে৷