ধানের শীষে ভোট দেয়ায় ধর্ষণ
১ জানুয়ারি ২০১৯ওই নারী এখন নোয়াখালী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ তাঁর অটোরিকশাচালক স্বামী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ধানের শীষে ভোট দেয়ায় ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত রবিবার দিবাগত রাত ১২টার পরে আমার বাড়িতে ঢুকে আমার স্ত্রী-কে ধর্ষণ করে৷'' তিনি জানান, ধর্ষকরা রুহুল আমীন নামে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার লোক৷ তিনি আরো বলেন, ‘‘রবিবার সকাল ১১টায় চর জুবিলী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান আমার স্ত্রী৷ সেখানে সে ব্যালট পেপার নিয়ে বুথে যেতে চায়৷ ওই সময় তারা তাকে নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য জোর করেন৷ কিন্তু, সে জানায়, সে ধানের শীষে ভোট দিয়েছে৷ তখন ব্যালট পেপারটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তারা৷ এর মধ্যে আমার স্ত্রী ব্যালটটি বাক্সে ঢুকিয়ে দেয়৷ তখন তারা বলে, এখন কিছু করবো না, রাতে হিসাব হবে৷''
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘‘রাত সাড়ে বারোটার দিকে তারা পুলিশ পরিচয়ে ঘরে ঢোকে৷ তারা বলে, আমরা থানা থেকে এসেছি৷ দরজা খুলে সালাউদ্দীন আর সোহেলকে দেখে আমার স্ত্রী তাদের বলে, আসেন, বসেন, পান খান৷তারা বলে ওঠে কিসের পান? তোর সঙ্গে কিসের সম্পর্ক?এ কথা বলেই তাকে বাড়ি দেয়৷’’এরপর তারা তাকে বাইরে নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করেবলে ধর্ষিতার স্বামী জানান৷
তিনি আরো জানান, প্রতিবেশী, আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনকে আগে এক নির্বাচনে ভোট না দিয়ে খলিল মেম্বারকে ভোট দেয়ায় রুহুল আমিন তাঁকে মারধর করেছিলেন৷
ধর্ষণের শিকার নারীর প্রতিবেশী এবং আত্মীয় মামুন জানান, ‘‘রুহুল আমীন সুবর্ণচর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক৷ ধর্ষণের শিকার নারীকে ধর্ষণের পর প্রথমে মাইজদী হাসপাতাল এবং পরে নোয়াখালী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ ঘটনার পর থানাকে জানালেও থানা তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাঁর স্বামী এবং ছেলেকে থানায় নিয়ে আটক রাখে৷ পরে সাদা কাগজে সই নিয়ে ছেড়ে দেয়৷''
এই ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর পুলিশ একটি ধর্ষণ মামলা নিয়েছে৷ কিন্তু ওই মামলায় রুহুল আমীনকে আসামি করা হয়নি৷ এ ব্যাপারে সুবর্ণচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ধর্ষণ মামলা হওয়ার পর আমরা একজনকে গ্রেপ্তার করেছি৷ আরো আসামি আছে৷ তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে৷'' তবে তিনি জানান, আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমীনকে আসামি করা হয়নি৷'' তাঁর দাবি, ‘‘মামলার বাদী ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামীই তাকে আসামি করেননি৷ আমরা কী করতে পারি! তবে তদন্ত চলছে৷''
তবে ওই নারীর স্বামী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঘটনা যেভাবে ঘটেছে, আমি পুলিশকে সেভাবেই বলেছি৷ এখন শুনছি, তাকে আসামি করা হয়নি৷ আমাকে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়৷ এখন আমি কী করব জানি না৷''
রুহুল আমীন ডয়চে ভেলের কাছে নিজেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক বলে দাবি করেন৷ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হনিফ চৌধুরীও বিষয়টি নিশ্চিত করেন৷ তিনি দাবি করেন, ‘‘ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে রুহুল জড়িত না৷ তার মানহানির জন্য একটি মহল তার নাম জড়াচ্ছে৷'' আর রুহুল আমীন দাবি করেন, ‘‘ভোট কোন্দ্রে ওই নারীর সঙ্গে আমার দেখাই হয়নি, হুমকি তো দূরের কথা৷ ধর্ষণের ঘটনায় আমার নাম ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়ানো হচ্ছে৷ তারা তো আমার দূর সম্পর্কের আত্মীয়৷ আমি জানি, ওই বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে৷''
ধর্ষণের শিকার ওই নারীর শারীরিক অবস্থা এখন খুব খারাপ৷ তাঁকে প্রচণ্ড মারধরও করা হয়েছে৷ ঘটনার পর তাঁর যে ছবি ও ভিডিও এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে, তাতে তাঁর শরীর রক্তাক্ত দেখা যায়৷ নোয়াখালী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সৈয়দ মহিউদ্দিন আব্দুল আজিম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘তাঁর শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ৷ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে৷ তাঁর প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা আমরা করেছি৷ প্রতিবেদন পাওয়ার পরই ধর্ষণের ব্যাপারে মন্তব্য করা যাবে৷''
তদন্ত করছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘নোয়াখালীতে ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে এক নারীর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনা আমরা সংবাদ মাধ্যম থেকে জানতে পেরেছে৷ আমরা এই ঘটনাটি তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ আমরা তদন্তের পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো৷''