ধারাভিতে বস্তি সরিয়ে ফ্ল্যাট, বাণিজ্যিক এলাকা
২৪ জানুয়ারি ২০২৩পাঁচ হাজার ৩৯ কোটি টাকা দিয়ে ধারাভি রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের বরাত পেয়েছে আদানি গোষ্ঠী। মুম্বইয়ে ২৬৯ হেক্টর জমির উপর গড়ে ওঠা এই বস্তিতে বসবাস করেন ১০ লাখ মানুষ। যারা ধারাভি গেছেন, তারা দেখেছেন এখানে কী অবস্থায় মানুষ থাকে। আর যারা সেখানে যাননি, কিন্তু স্লামডগ মিলিওনেয়ার সিনেমাটি দেখেছেন, তারাও আঁচ করতে পারবেন ধারাভির অবস্থা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ধারাভির বাসিন্দাদের আধুনিক ফ্ল্যাট দেয়া হবে। আর তারা চলে যাওয়ার পর মুম্বইয়ের প্রাইম জায়গায় থাকা এই ধারাভির জমি ঠিক করে তা বিক্রি করবে আদানি গোষ্ঠী। আর এখানকার জমি, বাড়ি বা ফ্ল্যাটের দাম আকাশছোঁয়া হবে, তা বলে দেয়ার অপেক্ষা রাখে না। খালি জায়গার খানিকটা বাণিজ্যিক কাজকর্মের জন্য রাখা হবে। বাকিটায় আবাসিক ফ্ল্যাট হবে এবং সবকিছুই বর্তমান বাজারদরে বিক্রি করা হবে।
তবে ধারাভির সব বাসিন্দা এই পরিকল্পনায় উৎসাহিত নয়। যেমন ৫১ বছর বয়সি কুমোর শরিফা হুসেন। ৭০ বছর আগে তার পরিবার গুজরাট থেকে ধারাভিতে এসেছিল। তিনটে বাড়ি ছাড়াও তাদের একটি গুদাম ও একটি কাজ করার জায়গা আছে। শরিফার মনে হচ্ছে, তাদের যে নতুন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে, সেখানে কাজ করার ও তা গুদামে রাখার জায়গা পাওয়া যাবে না।
আলজাজিরাকে হুসেন জানিয়েছেন, তাদের ৩০০-৩৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট দেয়া হবে। তাতে তার কী করে চলবে? তিনি চান, তিন ছেলেকে আলাদা ফ্ল্যাট দেয়া হোক। তাছাড়া তার জিনিস তৈরি ও শুকানোর জায়গা দেয়া হোক। মাসে পাঁচ হাজার টাকার কাঁচামাল কেনেন তিনি। আর মাসে জিনিস বিক্রি করে পান ৪০ হাজার টাকা। এই টাকায় সংসার চালাতে রীতিমতো কষ্ট হয়। তবে দেওয়ালির সময় দুই মাস তারা দুই লাখ টাকা করে লাভ করেন।
আফজল খানের চারটি গুদাম আছে ধারাভিতে। তিনি সেগুলি ভাড়ায় দিয়ে রেখেছেন। বলা হয়েছে, যারা ধারাভিতে থাকেন ও কাজ করেন, তাদের ফ্ল্যাট ও কাজের জায়গা দেয়া হবে। কিন্তু তাকে কী দেয়া হবে, আদৌ কিছু দেয়া হবে কি না, তানিয়ে রীতিমতো চিন্তিত আফজল।
জয়েশ জৈন ধারাভিতে প্লাস্টিক রিসাইকেল করার ব্যবসা করেন। তিনি ৩০ জনকে কর্মসংস্থান দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, সরকারের তরফে কেউ তাদের সঙ্গে কথা বলেনি। তারা কী চান সেটা কেউ জানতে চায়নি। এই অবস্থায় তার ব্যবসা ও ৩০ জন কর্মচারীর কী হবে তানিয়ে চিন্তায় ঘুম হচ্ছে না তার।
ধারাভির মানুষদের জন্য কাজ করে উর্বজ। এই সংগঠনের অন্যতম অংশীদার সমিধা পাটিল বলেছেন, ধারাভির মানুষকে সাহায্য করা দরকার। তাদের যেন দুর্গত করা না হয়। ধারাভির প্রায় প্রতিটি বাসিন্দা তাদের ওই বাড়ির জন্য পয়সা খরচ করেছে। খুব কষ্টে থাকছে। তাই তাদের দিকটা দেখতে হবে।
আবার হাউসিং রাইটস কর্মী রমেশ প্রভুর মতে, ২০ বছর আগেই ধারাভির পুনর্নিমাণ হওয়া উচিত ছিল। অনেকগুলি এনজিও এখানে সমীক্ষা করেছে। সরকারের উচিত তাদের কাছ থেকে তথ্য জোগাড় করা।
আদানি গোষ্ঠীর এক মুখপাত্র বলেছেন, তারা সরকারের কাছ থেকে লেটার অফ ইনটেন্স না পেলে এই বিষয়ে কিছু বলবেন না।
সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিটি ফ্ল্যাটে নিজস্ব টয়লেট থাকবে। প্রতিটি মানুষের জীবীকার বিষয়টি মাথায় রাখা হবে এবং সেইমতো ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারি কাজ শেষ হওয়ার পর প্রকল্পের বিস্তারিত রূপরেখা প্রকাশ করা হবে।
জিএইচ/এসজি (আলজাজিরা, মিন্ট)