ধূমকেতুর রহস্য উন্মোচন
২১ এপ্রিল ২০১৫‘চুরি'-র মতো অন্য কোনো ধূমকেতু নিয়ে এত গবেষণা হয়নি৷ রোসেটা নামের একটি মহাকাশযান সেটিকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে৷ ‘চুরি'-র ভূপৃষ্ঠ গর্তে ভরা, উত্তাপ-নিরোধক একটি স্তরে ঢাকা৷ সূর্যের আলোর মাত্র ৬ শতাংশ প্রতিফলন ঘটায় ‘চুরি'৷ ফলে এই মহাজাগতিক বস্তুটি খুবই অন্ধকার৷
এখনো পর্যন্ত গবেষকরা এই অসাধারণ মহাজাগতিক বস্তুর সৃষ্টির রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করছেন৷ ‘চুরি' কি আসলে কোনো বড় বস্তু ছিল, যা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে করতে অনেকটা অংশ হারিয়ে ফেলেছে? নাকি দু'টি ভিন্ন বস্তুর ধাক্কার ফলে এটি সৃষ্টি হয়েছিল? মাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউটের ড. হলগার সিয়র্কস বলেন, ‘‘গত কয়েক মাসে যে এই দু'টি অংশের মধ্যে যে কোনো বড় পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায়নি, তা বেশ বিস্ময়কর৷ আমরা ধূমকেতুর উপরিভাগ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করেছি, দু'টির উপরেই গর্তে ভরা, ফোলা স্তর রয়েছে৷ আছে খাড়া খাদও৷''
‘চুরি'-র উপর ১৯ রকমের ভূখণ্ড খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা৷ মিশরের দেব-দেবীর নামে সেগুলির নামকরণ করা হয়েছে৷ এই ধূমকেতুর মধ্যে বৈচিত্র্যের অভাব নেই৷ আছে অদ্ভুত দেখতে পাহাড় ও গর্তে ভরা এলাকা এবং চড়াই-উতরাই৷ ভূ-পৃষ্ঠ সম্ভবত প্রায় এক মিটার উঁচু ধুলার স্তর দিয়ে ঢাকা৷ চারিদিকে পড়ে আছে বিশাল সব পাথর৷ বালির টিলাও দেখা যায়৷ তবে বিস্ময়কর ঘটনা হলো, ধূমকেতুর উপর কোনো বাতাস বয় না৷ বিষয়টি বেশ রহস্যজনক৷
রহস্য গোল গর্তগুলিকে ঘিরেও, যেগুলি ১৮০ মিটার পর্যন্ত গভীর হতে পারে৷ তাতে ধুলা জমা হয়৷ সেগুলির দেয়ালে রয়েছে তথাকথিত ‘গুজ বাম্প'
, গায়ে কাঁটা দিলে যেমনটা দেখা যায়৷ গবেষকরা জানতে চান, সেগুলি ধূমকেতুর অক্ষত মৌলিক অংশ কিনা৷ ড. সিয়র্কস বলেন, ‘‘এই ‘গুজ বাম্প' কি সত্যি আদি লগ্নে অনেকগুলি আলাদা টুকরোর সমষ্টির লক্ষণ? গ্যাস ও ধূলিকণার মেঘের মধ্যে যখন প্রথম ভূ-খণ্ড সৃষ্টি হচ্ছিল, তখনই কি এই দানাগুলি জমাট বেঁধেছিল?''
সেটা প্রমাণিত হলে বিজ্ঞান জগতে হইচই পড়ে যাবে৷ রোসেটা যানের মধ্যে ধূলিকণার নমুনা নিয়ে বিশ্লেষণেরও ব্যবস্থা আছে৷ গবেষকরা প্রায় ৩,০০০ ধূলিকণা সংগ্রহ করেছেন৷ মানুষের চুলের অর্ধেক মাপের কণাগুলি নথিভুক্ত করা হয় ও প্রত্যেকটির আলাদা নামকরণ করা হয়৷ তবে ধুলার মধ্যে বরফ পাওয়া যায়নি, সেগুলি অত্যন্ত শুকনো৷ এগুলি তুষারের মতো হালকা ও পাতলা৷ পার্টিকেলগুলির মধ্যে অনেক ন্যাট্রিয়াম রয়েছে এবং সেগুলি জড়ো করলেই ভেঙে পড়ে৷ নমুনায় জল থাকলে গবেষণাগারের পরীক্ষায় এমন দাগ দেখা যায়৷ কিন্তু ‘চুরি' ধূমকেতুর ধূলিকণায় তা পাওয়া যায়নি৷
এই ধূমকেতুর গলার দিকটাই বেশি সক্রিয়৷ সেখান থেকেই ‘চুরি' বিশাল মাত্রার গ্যাস ও ধূলিকণা মহাকাশে ঠেলে দিয়েছে৷ মাস দুয়েক ধরে ধূমকেতুর শরীরে বেশি করে জেট স্রোত দেখা গেছে৷ আলোর ছটাও বদলে যাচ্ছে৷ অদূর ভবিষ্যতে গলার অংশটি ছায়ার আড়ালে চলে যাবে৷
অন্যদিকে দক্ষিণ দিকে সূর্যের রশ্মির ছটা বেড়ে যাবে৷ ড. সিয়র্কস বলেন, ‘‘এই অংশটি বিশেষভাবে সক্রিয় হয়ে উঠবে৷ দক্ষিণ গোলার্ধে যে অংশে সবচেয়ে বেশি সূর্যের আলো পড়বে, আমরা সেটি এখনো পর্যবেক্ষণ করতে পারিনি৷ আমরা গভীর আগ্রহে তার জন্য অপেক্ষা করছি৷''
‘চুরি' ধূমকেতু তার দক্ষিণে ২০ মিটার পর্যন্ত জায়গা হারাতে পারে৷ এমনটা হলে গবেষকরা তার গভীরে আরও প্রাচীন অংশ দেখতে পাবেন বলে আশা করছেন৷
কর্নেলিয়া বর্মান/এসবি
দেবারতি গুহ