নক্ষত্রের জগতে সূর্য বামনের মতো
২৬ ডিসেম্বর ২০১৯নক্ষত্র কাকে বলে? খালিচোখে আমরা প্রায় ছয় হাজার নক্ষত্র দেখতে পারি৷ অভাবনীয় দূরত্বের কারণে সেগুলি দেখতে ক্ষুদ্র বিন্দুর মতো লাগে৷
বাস্তবে নক্ষত্র আসলে উষ্ণ ও বৈদ্যুতিক চার্জভরা গ্যাসের বিশাল মহাজাগতিক বস্তু৷ সেগুলির মধ্যে বিশাল মাত্রার তাপ ও চাপ থাকায় হাইড্রোজেনের মতো হালকা পারমাণবিক নিউক্লিয়াস গলে হিলিয়ামের মতো ভারি পদার্থে রূপান্তরিত হয়৷ এই পারমাণবিক ফিউশনের কারণে তারাগুলি জ্বলজ্বল করে৷
একটি নক্ষত্র কার্যত আমাদের দোরগোড়ায় রয়েছে৷ অবশ্যই সূর্যের কথা হচ্ছে৷ নক্ষত্রের চরিত্র বুঝতে জ্যোতির্বিদেরা একমাত্র এই নক্ষত্রটিকেই ভালোভাবে পরীক্ষা করতে পারেন৷ পৃথিবীর তুলনায় সূর্যের আয়তন বিশাল৷ কিন্তু নক্ষত্রজগতে সূর্য আসলে বামনের পর্যায়ে পড়ে৷
ঔজ্জ্বল্য ও আলোর রংয়ের ভিত্তিতে জ্যোতির্বিদেরা নক্ষত্রগুলিকে বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত করেন৷ বেশিরভাগ নক্ষত্র এক কাল্পনিক রেখাকে ঘিরে রয়েছে৷ সেটির মাঝামাঝি অংশে আমাদের সূর্যও রয়েছে৷ এটি অত্যন্ত সাধারণ মানের এক নক্ষত্র৷
সবচেয়ে ক্ষুদ্র নক্ষত্রগুলিকে ‘লাল বামন' বলা হয়৷ সেগুলির মধ্যে হাইড্রোজেন ধীর গতিতে জ্বলতে থাকায় আয়ু দীর্ঘ হয়৷ এমনকি ১০ হাজার কোটি বা তারও বেশি বয়সও ছুঁতে পারে এমন তারা৷ সে তুলনায় আমাদের সূর্যের আয়ু ১,২০০ কোটি ছুঁতে পারে৷
কুয়াশাভরা একটি এলাকার মধ্যে জ্যোতির্বিদেরা এখনো পর্যন্ত জানা সবচেয়ে ভারি নক্ষত্র চিহ্নিত করেছেন৷ সেটির এত ভর হলো কীভাবে, সেই রহস্য এখনো উন্মোচিত হয় নি৷ সূর্যের তুলনায় এই নক্ষত্রের ভর ২৬০ গুণেরও বেশি এবং এক কোটি গুণ বেশি উজ্জ্বল!
এই নক্ষত্রের জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে সেটি সুপারনোভা হয়ে উঠবে এবং সঙ্কুচিত ‘লাশ' হিসেবে ধসে পড়বে৷ এমনকি ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বরও হয়ে উঠতে পারে৷ তখন সেটির মধ্যে জমা রাসায়নিক উপাদান মহাকাশে ছড়িয়ে পড়বে৷
সেগুলি আসলে গ্রহ ও প্রাণেরও উপাদান৷ রক্তের মধ্যে আয়রন-সহ আমাদের শরীরের সব উপাদানই নক্ষত্রের মাধ্যমে পৃথিবীতে এসেছিল৷ সূর্যের আলো ও উষ্ণতা ছাড়া পৃথিবী এক মৃত গ্রহ থেকে যেত৷ অর্থাৎ সূর্যই জীবনের চাবিকাঠি৷ খালি চোখে দেখলে সেটিকে শান্ত এক মহাজাগতিক বস্তু মনে হয়৷
সূর্যের মধ্যে তীব্র আলোড়ন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেখা যায়৷ প্রায়ই বৈদ্যুতিক চার্জে ভরা কণার মেঘ মহাকাশে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে৷ সৌর ঝড় পৃথিবীর উপরেও আছড়ে পড়ে৷ তারই এক নির্দোষ পরিণতি হলো মেরু প্রদেশে আলোকচ্ছটা৷ তবে প্রযুক্তি ও প্রাণের জন্য এই ঝড় বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে৷
বিশাল আকারের টেলিস্কোপের মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দূরের নক্ষত্রের চৌম্বক ক্ষেত্র নিয়ে গবেষণা করছেন৷ শুধু নক্ষত্রের আলোর ভিত্তিতেই সেই কাজ করতে হয়৷ চৌম্বক ক্ষেত্র সংক্রান্ত আলোর ভিত্তিতে সেই সব নক্ষত্রের চারিপাশের পরিবেশ সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাওয়া যায়৷ কাছেপিঠে পৃথিবীর মতো বাসযোগ্য গ্রহ থাকতে পারে কিনা, সেই আভাসও পাওয়া যায়৷
কর্নেলিয়া বরমান/এসবি