‘নতুন বছর আরও কঠিন হবে’
১ জানুয়ারি ২০১৩বছর শেষে জার্মানির নাগরিকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে দেশের অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি, ইউরোপের আর্থিক মন্দা এবং আগামী বছরের লক্ষ্য তুলে ধরেন জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল৷ গত কয়েক বছর ধরে ইউরোপের দেশগুলোতে যে ধরণের মন্দা চলছে, তাতে জার্মানি ইতিবাচক ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছে৷ গ্রিসকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য যে ‘বেল আউট' দেওয়া হয়েছে তার সিংহভাগ গেছে জার্মানির পকেট থেকে৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই ইউরোপের আর্থিক মন্দা ও তার পরিপ্রেক্ষিতে নেওয়া সংস্কার কার্যক্রম বেশ গুরুত্ব পায় জার্মান চ্যান্সেলরের ভাষণে৷ তিনি মনে করিয়ে দেন, সংস্কার কার্যক্রমের চূড়ান্ত ফল পাওয়ার জন্য জনগণকে আরও কিছুদিন ধৈর্য্য ধরতে হবে৷ ম্যার্কেল বলেন, ‘‘আমরা যেসব সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলাম তার ফলাফল আসতে শুরু করেছে৷ তবে আমাদের আরও ধৈর্য্য ধরতে হবে৷ সংকট এখনও পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি৷ এই কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও করণীয় রয়েছে যাতে করে আর্থিক বাজার চাঙ্গা হয়ে ওঠে৷ ২০০৮ সাল থেকে যে ভয়াবহ মন্দা শুরু হয়েছে তা থেকে বিশ্ব এখনও উপযুক্ত শিক্ষাটি নিতে পারেনি৷ এবং এই ধরণের দায়িত্বহীনতাকে কোনোভাবে সুযোগ দেওয়া যাবে না৷ বাজার অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের ওপর, যার ওপর জনগণের আস্থার দায়িত্ব অর্পিত হয়৷''
ইউরোপে আর্থিক মন্দা সত্ত্বেও জার্মানি তা থেকে মোটামুটি দূরে ছিলো বলতে হয়৷ জার্মানির শক্ত শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির ওপর দাঁড়িয়ে ম্যার্কেল সরকার বিপদ থেকে দেশকে দূরে রাখতে পেরেছে৷ পাশাপাশি বেকারত্বের হারও কমেছে গত বছর, এমনটি জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর৷ নতুন বছরের আগমুহূর্তে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘‘দুই জার্মানি এক হওয়ার পর এই বছর আমাদের বেকারত্বের হার ছিলো সবচেয়ে কম এবং কর্মসংস্থানের হার ছিলো সবচেয়ে বেশি৷ তার অর্থ হচ্ছে হাজার হাজার পরিবারের জন্য একটি সুনিশ্চিত ভবিষ্যত এবং স্বীকৃতি অর্জন৷ এর অর্থ হচ্ছে আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য নিরাপত্তা, প্রশিক্ষণের সুযোগ এবং কর্মসংস্থান, যার মাধ্যমে তারা তাদের জীবন ভালোভাবে শুরু করতে পারবে৷''
আর্থিক সামর্থ্য বজায় থাকার কারণে জার্মানি দিন দিন গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে চলেছে৷ বিদায়ী বছরটিতে জার্মানিতে বহুল আলোচিত বিষয় ছিলো আণবিক শক্তি৷ জাপানের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে জার্মানি তাদের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তার পরিবর্তে পরিবেশ সহায়ক সবুজ জ্বালানির পথে হাটবে তারা৷ বিজ্ঞান ও গবেষণা খাতে নতুন বছরে বিশেষ জোর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ এছাড়া প্রশিক্ষিত ও কর্মক্ষম অভিবাসীদের আরও বেশি করে জার্মানিতে নিয়ে আসাকে লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ঘোষণা করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশ হচ্ছে গবেষণার জন্য উপযুক্ত জায়গা৷ যখন আমরা এমন কিছু করতে সক্ষম হবো যা অন্যরা করতে পারে না তখন আমরা সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারবো৷ তাই আমরা প্রশিক্ষণ ও গবেষণা খাতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর অনেক বেশি বিনিয়োগ করবো৷ আমরা বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক জ্বালানি কেন্দ্র নির্মাণ করবো৷ নতুন বছরে আমরা আরও বেশি অভিবাসনকে স্বাগত জানাবো৷ আর এজন্য আমাদেরকে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে হবে৷ এটাও আমাদের ২০১৩ সালের লক্ষ্য৷''
জার্মান চ্যান্সেলর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কর্মরত সকল সেনা ও পুলিশ সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তাঁরা আমাদের নিরাপত্তার জন্য তাঁদের ব্যক্তিগত জীবন বিসর্জন দিচ্ছেন৷ উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে বর্তমানে কয়েক হাজার জার্মান সেনা কর্মরত রয়েছে৷