1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে নির্ভরতা করতে প্রযুক্তি প্রয়োজন’

সুলাইমান নিলয়
১৮ জুলাই ২০১৭

বাংলাদেশ দিনে দিনে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ভালো করলেও জ্বালানি নির্ভরতায় এটাকে প্রধান খাত করতে নতুন প্রযুক্তি দরকার হবে বলে মন্তব্য করেছেন টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য সিদ্দিক জোবায়ের৷

https://p.dw.com/p/2gb9U
Bangladesch Cox’s Bazar - Zwei Inseln
ছবি: DW/M. Mamun

ডয়চে ভেলে: টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কেন হয়েছিল?

সিদ্দিক জোবায়ের: ২০০৮ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন নীতিমালায় ২০১৫ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের ৫ শতাংশ এবং ২০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়া আছে৷ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায়ও এ সম্পর্কে বলা আছে৷ আইন প্রণয়ন থেকে শুরু করে এই খাতে সরকারের পক্ষ থেকে কাজ করার জন্য এই কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে৷

বর্তমানে এই কর্তৃপক্ষ কী কী কাজ করছে?

এই কর্তৃপক্ষের দুটি টার্গেট৷ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিষয়ে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করা এবং জ্বালানি দক্ষতা বাড়ানো৷ ২০২০ সালের মধ্যে আমাদের ১০ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা তার পরিমাণ প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট৷ আমরা যদি দেখি, নবায়নযোগ্য জ্বালানির যেসব প্রযুক্তি আমাদের কাছে আছে, তার মধ্যে সৌর বিদ্যুৎ আমাদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী৷ ২০১৮ সাল নাগাদ আমরা বায়ু সম্পদ মূল্যায়ণ প্রতিবেদন পাবো, তখন জানতে পারবো, এখান থেকে কত বিদ্যুৎ আসবে৷

এখন সৌর শক্তির উপরই অধিক গুরুত্ব দিচ্ছি৷ মেগাওয়াট স্কেলে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বড় প্রকল্প করার চেষ্টা করছি৷ ইতোমধ্যে ৩০২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন চারটি বেসরকারি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাথে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের  ‘পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট' স্বাক্ষরিত হয়েছে৷ আরো প্রায় ৫২৮ মেগাওয়াটের নয়টি প্রকল্পের জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চুক্তি স্বাক্ষর হবে৷ 

সিদ্দিক জোবায়ের

২০২০ সালের মধ্যে ১ হাজার মেগাওয়াট এখান থেকে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি৷ ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডিজেলচালিত সেচ পাম্পগুলোকে সৌর বিদ্যুৎ চালিত সেচপাম্পে রূপান্তরের কাজ করছি৷ আমাদের শ্যালোচালিত নৌকা চলে ডিজেলে৷ এগুলোকে সোলার দিয়ে স্থলাভিষিক্ত করতে চাই৷

নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে এখন কী পরিমাণ বিদ্যুৎ পাই?

এই মুহূর্তে আমরা ৪৪৪ মেগাওয়াটের মতো পাচ্ছি৷

২০২০ সালের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব?

আমরা খুবই আশাবাদী, যদিও এটা চ্যালেঞ্জিং হবে৷ আরেকটা খাত নিয়ে আমরা আশাবাদী, সেটা হচ্ছে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল রুফটপ৷ এমনও রুফটপ আছে, যেখানে ৩-৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে৷ শিল্পগুলোও এতে আগ্রহ দেখাচ্ছে৷ আমরাও কাজ করছি৷

এর কারণ আমাদের ছোট্ট দেশ৷ এখানে সোলারের জন্য জমি পাওয়া খুবই চ্যালেঞ্জিং৷ তাই এটাকে ব্যবহার করতে পারলে আমাদের হিসাব অনুসারে প্রায় সাড়ে চারশ' মেগাওয়াট রুফটপ থেকে আনতে পারি৷

অনেকে মনে করেন, নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে খরচ বেশি পড়ে৷ তাই এটা বাংলাদেশের জন্য উপযোগী না৷ আপনারা কী মনে করেন?

আমার মনে হয়, এটা আজ থেকে ৩ বছর আগে পুরোপুরি সত্য ছিল৷ ২০১৭ সালের দ্বিতীয়ার্ধে এসে এটা মোটেই সত্য না৷ শিল্পে বর্তমানে বিদ্যুতের যে ট্যারিফ আছে, আমাদের ধারণা এটা এখানে থাকবে না৷ ভ্যাটসহ তাদের বর্তমানে পার কিলোওয়াট আওয়ার ৯ টাকার মতো পড়ে৷ এটা আরও বাড়বে৷ আমাদের গ্যাস কম৷ তাই এলএনজি আমদানি করতে হবে৷ তখন আমার ধারণা আরও কিছুটা বৃদ্ধি পাবে৷ না বাড়লেও সোলার রুফটপ ভালো বিকল্প৷ আমরা সমীক্ষা করেছি, সোলার কোনোভাবেই ৯ টাকার বেশি হবে না৷ অনগ্রিড এরিয়া হওয়ায় এখানে আমরা ব্যাটারির চিন্তা করছি না৷ তবে অফগ্রিড এরিয়ায় আবার খরচটা একটু বেশি হবে৷

বাংলাদেশে সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রই দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে যায়...

আমাদের এই প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে এই আশঙ্কা একটু কম৷ কারণ, আমাদের এই প্রকল্পগুলো মূলত বাস্তবায়িত হবে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে৷ আমরা যদি একটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে পারি, তাহলে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা সময় বেশি নেয় না৷ 

আমরাও অনেক সময় নিয়েছি৷ ২০০৮ সালে আমাদের নীতিমালা হয়েছে৷ ২০০৯ সাল থেকে ধরলেও ২০১৭ পর্যন্ত আট বছর সময় নিয়ে ফেলেছি৷ আমরা মনে করি, যথেষ্ট সময় নিয়েছি৷

অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যে ধরণের তথ্য-উপাত্ত, কারিগরি জ্ঞান সেগুলো দেশে এরই মধ্যে হয়ে গেছে৷ তাই ২০২০ সাল পর্যন্ত মন্থর গতি আর থাকবে না৷ আমরা যখন ২০০৩ সালে সোলার হোম সিস্টেম চালু করি, তখন থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ে আমাদের প্রতি মাসে যে পরিমাণ সিস্টেম বিক্রি হতো, ২০০৯-২০১৫ সালে প্রতিদিনে সে পরিমাণ সিস্টেম বিক্রি হয়েছে৷ সোলার ইরিগেশনেও একই অবস্থা৷ ২০১১ সাল থেকে এখানে কাজ শুরু করি৷ ২০১৬ পর্যন্ত বসাতে পেরেছি মাত্র ৫০টা ইরিগেশন সিস্টেম৷ এরপর এ পর্যন্ত ৬০০টা বসে গেছে৷

এটা নতুন প্রযুক্তি, তাই শুরুর দিকে আমাদের কারিগরি জ্ঞানের অভাব ছিল৷ এখানে বিনিয়োগ করবে কিনা, তা নিয়ে আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দ্বিধা ছিল৷ আমরা আশা করি, ২ হাজার মেগাওয়াটের লক্ষ্য অতিক্রমও করে যেতে পারি৷ 

ডেনমার্কের অর্থায়নে কক্সবাজারে ৬০ মেগাওয়াটের একটা বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়ার কথা শুনেছি, যেটি ২০১৭ সালে উৎপাদনে যাওয়ার কথা৷ সেটার কী অবস্থা?

এটা ডেনমার্কের অর্থায়নে না৷ মার্কিন অর্থায়ন এবং ডেনমার্কের প্রযুক্তিতে হওয়ার কথা৷

বায়ু বিদ্যুতে আমরা (সংস্থার পক্ষ থেকে) এখন কাজ করছি না৷ এটা আমরা করবো ২০১৮ সালে গিয়ে৷ সেই প্রকল্প ছিল একটা আনসলিসিটেড অফার যে, তারা ওখানে সমীক্ষা করে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে৷ ওই প্রকল্পের কিছু সমস্যা ছিল, একটা হচ্ছে, সেখানে কোনো ‘উইন্ড রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট' করা নাই৷ এটা করা না থাকলে ওখানে বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প করা যাবে কিনা, কারিগরিভাবে সেটা জানার উপায় নাই৷ আর সেটা না থাকলে কেউ সেখানে অর্থায়নও করবে না৷ গত বছর তারা এই সমীক্ষা করা শুরু করেছে৷ সেপ্টেম্বরে হয়ত রিপোর্ট দিতে পারবে৷ তারপর বলা যাবে কখন এটা করা সম্ভব হবে৷

২০১৭ সালে হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই৷ আমরা শ্রেডা থেকে এখন বায়ুভিত্তিক কোনো প্রকল্প করার পক্ষে না৷ ফেনীর মুহুরীতে একটি প্রকল্পে আমরা সহায়তা দিচ্ছি, কারণ, যারা করছে, তারা এরই মধ্যে আড়াই বছরের ডাটা সংগ্রহ করেছে৷ এটা (চালু করা সম্ভব) হবে৷ 

নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত বাংলাদেশের জ্বালানির প্রধান উৎস হতে কতদিন সময় লাগবে বা এ বিষয়ে আপনাদের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

নিকট ভবিষ্যতে এটা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখি না৷ তবে আপনি বলবেন, আমি কি আশাবাদী না? আমি বলবো, আমি আশাবাদী৷ তবে এর জন্য টেকনোলজিক্যাল ‘ব্রেক থ্রু' লাগবে৷ নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রযুক্তির বিষয়ে বিশ্বজুড়েই অনেক গবেষণা হচ্ছে৷ বাংলাদেশের জন্য সোলারই সবচেয়ে উপযোগী৷ কিন্তু এখানে এক মেগাওয়াটের জন্য ৪ একর জায়গার প্রয়োজন হয়৷ বাংলাদেশ ছোট ভূখণ্ডের দেশ৷ সব জায়গায় আমাদের জনবসতি আছে৷ প্রতি একর জায়গাই চাষের আওতায়৷ সেখানে আমাদেরকে ফসল ফলাতে হয়৷ আমাদের খাদ্য নিরাপত্তাকে সেক্রিফাইস করে এটা করতে পারবো না৷

বর্তমানে সোলার প্যানেলের ‘জ্বালানি দক্ষতা' ১৬-১৭ শতাংশ৷ কেউ বলে ২১-২২ শতাংশ৷ এটা যদি বেড়ে হাফ একরে এক মেগাওয়াট হয়, তাহলে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ মূল বিদ্যুৎ হয়ে যেতে পারে৷

উন্নত অর্থনীতির দেশের জন্য এটা খুব সহজ৷ কারণ, তাদের অর্থনীতি এরই  মধ্যে উন্নত হয়ে গেছে৷ তাদের প্রবৃদ্ধি অনেক কম৷ কিন্তু  আমাদের প্রবৃদ্ধি অনেক৷ এই অবস্থায় আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা দিনদিন প্রচুর বৃদ্ধি পাচ্ছে৷

বিপুল পরিমাণ জ্বালানি চাহিদা বর্তমান প্রযুক্তি দিয়ে শতভাগে যাওয়া নিকট ভবিষ্যতে সম্ভব হবে না৷ সুদূর ভবিষ্যতে এটা সম্ভব হবে৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷