নবীনের পাশাপাশি প্রবীণরাও মেতে বিশ্বকাপে
১৭ ডিসেম্বর ২০২২কলকাতা বলতে একসময় বোঝাতো হলুদ-সবুজের শহর৷ ব্রাজিলের ফুটবলে সম্মোহিত ছিল বাঙালি৷ ১৯৮৬ সালে প্রথম দূরদর্শনে সরাসরি দেখা গিয়েছিল বিশ্বকাপ৷ সে বছরই আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন৷ ব্রাজিলের একাধিপত্যে ভাগ বসায় নীল-সাদা ব্রিগেড৷ তারপর আর্জেন্টিনা আর বিশ্বকাপ জেতেনি৷ তাই আরো একবার ম্যারাডোনার উত্তরসূরিরা ফাইনালে নামার আগে কলকাতায় উত্তেজনা তুঙ্গে৷
নবীনরা বিশ্বকাপ শুরুর আগেই মেসির দেশের পতাকায় মুড়ে দিয়েছেন পাড়া৷ দেওয়ালে আঁকা হয়েছে ছবি৷ কালো পিচ রাস্তা থেকে বাসস্ট্যান্ড, বিভিন্ন জায়গায় মারাদোনা ও মেসিকে পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে৷ সেখানে ব্রাজিলের পতাকা এখনো ঝুলছে, কিছুটা যেন বিষণ্ণ হলুদ রং!
নবীন থেকে প্রবীণ, যাদের চুলে পাক ধরেছে, যারা পেলে ও মারাদোনাকে কলকাতার মাঠে খেলতে দেখেছেন, তারাও এখন মেসি ভক্ত৷ কেষ্টপুরের একটি বৃদ্ধাশ্রমে হইহই করে আর্জেন্টিনার অধিনায়কের প্রতি শুভেচ্ছায় কেক কাটা হয়েছে৷
জাগরণী ফাউন্ডেশন-এর ‘নতুন ঘর' বৃদ্ধ আবাসে থাকেন ভবঘুরে বৃদ্ধারা৷ তারা পরে নিয়েছেন নীল-সাদা জার্সি৷ খুকুমণি পাল, মাধবী বন্দ্যোপাধ্যায়, পদ্ম রায়, মালতী ঘোষ, অর্চনা রায়ের কাছে সুদূর আর্জেন্টিনার তারকা লিওনেল মেসি ‘ঘরের ছেলে'৷ কেক কাটা, মিষ্টিমুখের পর আবাসিক বীণা বারুলি বলেন, ‘‘মেসি যে বিশ্বের সেরা ফুটবলার, তা নিয়ে সন্দেহ নেই৷ আমরা রোববার জয়ের অপেক্ষায় আছি৷ মেসির হাতে কাপ দেখতে চাই৷''
এই বৃদ্ধাশ্রমের সম্পাদক অসীম রায়চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অল ইন্ডিয়া হিউম্যান রাইটস সংস্থা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল৷ তারা এখানে এসে আবাসিকদের সঙ্গে বিশ্বকাপের আনন্দ ভাগ করে নিয়েছে৷''
দমদমের ‘স্বপ্ননীড়' বৃদ্ধাবাসের আবাসিকরা মাসভর ফুটবল দেখছেন৷ এখানকার কর্ণধার সঞ্জয় শূর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুরুষদের পাশাপাশি মহিলা আবাসিকরাও উৎসাহী৷ সব ঘরে টিভির ব্যবস্থা রয়েছে৷ কেউ কেউ মাঝরাত পর্যন্ত খেলা দেখছেন৷ ওরা চাইছেন মেসির হাতে উঠুক বিশ্বকাপ৷''
আর্জেন্টিনার সমর্থকরা যখন ফাইনালের আগেই খুশিতে ভাসছেন, তখন চির প্রতিদ্বন্দ্বীর শিবিরে হতাশা৷ তিন দশক ধরে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের গ্যালারিতে লজেন্স বিক্রি করেন যমুনা দাস৷ ৬০ ছুঁইছুঁই যমুনা লাল-হলুদ সমর্থকদের কাছে ‘লজেন্স দিদি'৷ ব্রাজিলের বিদায়ের পর বিশ্বকাপ দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি৷ যমুনার কথায়, ‘মনটাই ভেঙে গিয়েছে এবার৷ ব্রাজিল না থাকায় খেলা দেখার উৎসাহ পাচ্ছি না৷ তবে আমি মেসিকে কলকাতায় দেখেছি, ভাল লেগেছিল৷ কিন্তু আমি ব্রাজিলেরই সমর্থক৷''
আর এক মহাতারকা রোনাল্ডোও বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছেন৷ এ বার রাস্তাঘাটে পর্তুগালের পতাকার সঙ্গে রোনাল্ডোর ছবিও কিছু দেখা গিয়েছে৷ যদিও আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের আবেগের পাশে তা নগণ্য৷ আর ফ্রান্স? না, দূরবিন দিয়েও কেউ ফরাসি পতাকা বা এমবাপে-গ্রিজম্যানদের ছবি দেখাতে পারবেন না৷
কলকাতা থেকে ৫০ কিমি দূরের এক শহরে গেলে অবশ্য ছবিটা পাল্টে যায়৷ হুগলি নদীর পাড়ে চন্দননগর একসময় ফরাসিদের উপনিবেশ ছিল৷ সেখানকার একটা বড় অংশের মানুষ রোববারের ফাইনালে ছবি ও কবিতার দেশের জয় চাইছেন৷ ফ্রান্সের পতাকার রঙে সেজেছে শহর৷
চন্দননগরের আমজনতার সঙ্গে এক ইউরোপীয় বধূও ফ্রান্সের জয়ের জন্য মুখিয়ে আছেন৷ ইউনেস্কোর কাজে ফ্রান্স থেকে চন্দননগর এসে ঘর বেঁধেছেন নেলিনা মণ্ডল৷ স্বামী প্রশান্তের সঙ্গে এখানেই আলাপ৷ নেলিনা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি বেলজিয়ামের মেয়ে৷ নেদারল্যান্ডসে বড় হয়েছি৷ ১৯৮২-৮৮ সালে উচ্চশিক্ষা ও চাকরি প্যারিসে৷ রবিবার জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখব৷ আমি কেন, গোটা চন্দননগর ফ্রান্সের জয় চাইছে৷''
বীণা না নেলিনা, কার মুখে হাসি ফুটবে? শুরু হয়ে গিয়েছে কাউন্টডাউন৷