1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নব্য, আদি, পরিযায়ী ঝামেলায় ভোট কমবে বিজেপি-র?

২৩ মার্চ ২০২১

নব্য, আদি আগেই ছিল। এবার যোগ হয়েছে পরিযায়ী। তাদের ঝামেলায় কি ভোট কমতে পারে বিজেপি-র?

https://p.dw.com/p/3qzP2
দলের ঘোষিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভ। ছবি: Payel Samanta/DW

মালদহে পা দিয়ে শব্দটা প্রথম শুনি। পরিযায়ী বিজেপি। এতদিন আমরা আদি ও নব্য বিজেপি-র কথা প্রচুর শুনেছি। আদি মানে যারা গোড়া থেকে বিজেপি করছেন, তাদের অনেকেই সঙ্ঘ পরিবারের প্রশিক্ষণ পাওয়া, নিয়মিত শাখায় গিয়েছেন। নব্য মানে তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএম থেকে যারা বিজেপি-তে এসেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন বা প্রার্থী হচ্ছেন। আর পরিযায়ী হলেন, যারা পশ্চিমবঙ্গের বাইরে থাকেন, ভোট এলে প্রার্থী হয়ে যান। ইংরেজবাজারের প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীকে দলের নেতা-কর্মীদের একাংশ বলছেন, তিনি পরিযায়ী বিজেপি। অভিযোগ, তিনি না কি প্রার্থী হলে মালদহে আসেন। লোকসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন। হেরে আর মালদহমুখো বিশেষ হননি।

এবার প্রার্থী হিসাবে তার নাম ইংরেজবাজারে আছে। নাম ঘোষণার এক সপ্তাহ পরেও তিনি এখনো আসেননি বা বলা ভালো, আসতে পারেননি। কারণ, তাকে প্রার্থী করা নিয়ে প্রবল প্রতিবাদ হচ্ছে সেখানে। পশ্চিমবঙ্গের অনেক জেলাতেই নব্যদের প্রার্থী করা নিয়ে গোলমাল কম হচ্ছে না। প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, দলের পদ ছাড়া, দল ছেড়ে দেয়া, বিজেপি অফিস ভাঙচুর, রাস্তায় টায়ার পোড়ানো সবকিছুই হয়েছে।

দমদমে একসময়ে দুইবার লোকসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন প্রয়াত বিজেপি নেতা তপন সিকদার। তার ওই এলাকায় ভালো প্রভাব ছিল। তার ভাইপো সৌরভ বিজেপি করেন। কিন্তু তিনি প্রার্থী হতে পারেননি। ক্ষোভে তিনি দলের সব পদ ছেড়ে দিয়েছেন। কয়েকজন নেতা তো দলই ছেড়ে দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।

মালদহে বিজেপি-তে আদি, নব্য, পরিযায়ীদের বিরোধ তীব্র হয়েছে। এই ঝামেলার জেরে শ্রীরূপা ইংরেজবাজারে পৌঁছতে পারেননি বলে দলের নেতাদের একাংশ জানিয়েছেন। বিজেপি সেখানে দেওয়াল দখল করে পদ্মফুল এঁকে রেখেছে, কিন্তু শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীর নামে দেওয়াল লিখন হয়নি বললেই চলে। বিজেপি-র জেলা সভাপতি গোবিন্দ মণ্ডল ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''মালদহে কিছু জায়গায় গোলমাল হয়েছে এটা ঠিক। তবে এখন আর হচ্ছে না। এই গোলমাল বিজেপি-র সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না। কর্মীরাও তা বুঝতে পেরেছেন।'' শ্রীরূপা কেন আসেননি? গোবিন্দ মণ্ডলের জবাব, ''তিনি যথাসময়ে আসবেন। বিজেপি কর্মীরা তাকে সবরকম সাহায্য করবে।''

কিন্তু নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আদি বিজেপি-র এক নেতা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ওটা মানা যাচ্ছে না। যারা প্রথম থেকে বিজেপি করছেন, তারা মার খেয়ে, যাবতীয় অত্যাচার সহ্য করে দল করবেন, আর প্রার্থী হওয়ার বেলায় নব্য বা পরিযায়ী নেতারা প্রাধান্য পাবেন, এটা হয় না। প্রার্থী বদল না হলে বিজেপি-র একাংশ অন্যদিকে ভোট দিতে পারেন, সেই হুমকিও তারা দিচ্ছেন। 

বিজেপি নেতা মানবেন্দ্র চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''যেভাবে প্রার্থী দেয়া হয়েছে, তা মেনে নেয়া যায় না। এর ফলে বিজেপি-র ভোট কমার সম্ভাবনা আছে।''

বোঝা যাচ্ছে, ক্ষোভ-বিক্ষোভ যথেষ্ট। এর জন্য ভোট কম হবে বলে বিজেপি নেতারাই মনে করছেন। এটা নিয়েও দুই রকম তত্ত্ব আছে। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, ক্ষোভ-বিক্ষোভ হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা মিটে যায়। ভোটে তার প্রভাব পড়ে না। লোকসভা নির্বাচনই তার প্রমাণ। তখনও প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ ছিল। কিন্তু তার প্রভাব ভোটে পড়েনি। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, লোকসভা ও বিধানসভার হিসাব আলাদা। বিধানসভায় একটু জনপ্রিয় নেতা অনেক হিসাব বদলে দিতে পারেন। আর বিজেপি হলো কর্মীনির্ভর দল। সেখানে কর্মীরা বসে গেলে, দল বিপাকে পড়তে বাধ্য।

আর এই ছবিটা শুধু মালদহে নয়, পশ্চিমবঙ্গের অনেক জেলাতেই দেখা যাচ্ছে।