নব্য নাৎসি হত্যাকাণ্ডের বিচার
৬ মে ২০১৩নিজেদের ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট আন্ডারগ্রাউন্ড বা নাৎসি গুপ্তপ্রতিরোধ নাম দিয়ে বিদেশি-বহিরাগতদের হত্যার তাণ্ডবে নেমেছিল দু'জন জার্মান তরুণ ও একজন জার্মান তরুণী৷ তারা ব্যাংক ডাকাতিও করতো৷ তিনজনে মিলে থাকতো জার্মানির পূর্বাঞ্চলে সুইকাউ শহরে, ফ্ল্যাট ভাড়া করে৷ ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে সেখানেই আত্মহত্যা করে উভে মুন্ডলোস ও উভে ব্যোনহার্ট৷ তারপর সেই বাড়িতে আগুন ধরিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায় বেয়াটে চেপে৷
বাড়ির ধ্বংসাবশেষে পুলিশ একটি আগ্নেয়াস্ত্র খুঁজে পায়, যে'টি দিয়ে ২০০৭ সালের এপ্রিলে হাইলব্রন শহরে এক মহিলা পুলিশকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল৷ এছাড়া স্বঘোষিত এনএসইউ গোষ্ঠীর একটি প্রচারণা ভিডিও পাওয়া যায়, যা'তে বিগত সাত বছরের হত্যাকাণ্ডগুলির স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে৷ বলতে কি, তথাকথিত ‘‘ড্যোনার'' হত্যাকাণ্ডগুলির সমাধানের সূত্র এখান থেকেই পাওয়া যায়৷
‘‘ড্যোনার'' বলতে জার্মানদের প্রিয় এক ধরনের তুর্কি খাবার৷ কিন্তু আটজন তুর্কি ও একজন গ্রিক বংশোদ্ভূতের হত্যাকাণ্ডের এরকম তাচ্ছিল্য ভরা, ব্যঙ্গাত্মক নামকরণই জার্মান সমাজে বহিরাগতদের প্রতি এক নিগূঢ় অবহেলার ইঙ্গিত দিচ্ছে৷ নব্য নাৎসি হত্যাকাণ্ডগুলির তদন্তে ফেডারাল গোয়েন্দা বিভাগ বা গুপ্তচর বিভাগ থেকে শুরু করে প্রাদেশিক পুলিশ অবধি সব নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানই যে ধরনের ভুলভ্রান্তি করেছে, সমন্বয়ের অভাব দেখিয়েছে, তা'তে এ'প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, জার্মান প্রশাসন, এমনকি বিচার বিভাগ কি চরম দক্ষিণপন্থি অপরাধের ক্ষেত্রে চোখে কম দেখে?
প্রশাসনিক উদাসীনতা
জার্মান গণমাধ্যমেই বারংবার সে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে৷ এবার বেয়াটে চেপে ও এনএসইউ গোষ্ঠীর চারজন সহযোগীর বিরুদ্ধে যে মামলার শুনানি শুরু হচ্ছে, তা থেকেও নিহতদের আত্মীয়স্বজনেরা প্রত্যাশা করছেন যে, জার্মান নিরাপত্তা বিভাগের এই ব্যর্থতা ও গাফিলতির কোনো একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে৷ এবং সে ব্যাখ্যা জার্মানিতে নব্য নাৎসি মনোবৃত্তির অস্তিত্বের পাশাপাশি এক আরো বিপজ্জনক প্রশাসনিক উদাসীনতার হদিশ দিতে পারে৷
মিউনিখের উচ্চ প্রাদেশিক আদালতের মুখপাত্র কিন্তু বলেছেন যে, চলতি মামলার খুঁটিনাটি প্রাঞ্জল করতে করতেই বহু সময় চলে যাবে৷ সাক্ষ্য গ্রহণ সমাপ্ত হতে হতে সাল গড়িয়ে যেতে পারে৷ আবার এ'ও সত্য যে, নব্য নাৎসি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ভুলভ্রান্তি নিয়ে সংসদীয় কমিটি বসেছে৷ বেয়াটে চেপে স্বয়ং নীরব৷ কাজেই তার বিরুদ্ধে মামলা খাড়া করাটাই সমস্যাকর হয়ে উঠতে পারে৷
যা কিছু ঠিক যতোটা সমস্যাকর হিসেবেই দেখা দিক না কেন, এই মামলায় বিশ্বের চোখ যে জার্মানির উপর, তা'তে কোনো সন্দেহ নেই৷ এবং সব কিছুর পটভূমিতে থাকছে জার্মানির অভিশপ্ত নাৎসি অতীত৷