নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে লড়বেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী?
৩ এপ্রিল ২০১৯ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্যের গুরুত্ব বোঝা য়ায় ৫ বছর অন্তর সাধারণ নির্বাচন এলেই৷ গোটা দেশে মোট ৫৪৩টি আসনের মধ্যে উত্তরপ্রদেশেই রয়েছে ৮০টি৷ স্বভাবতই শাসক-বিরোধী সব দলের বাড়তি নজর থাকে রাজ্যটির দিকে৷ অতীতে দেশকে ৭ জন প্রধানমন্ত্রী উপহার দিয়েছে গো-বলয়ের এই রাজ্য৷ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জয়ী হয়ে এসেছেন এই রাজ্যেরই বারাণসী থেকে৷
কিন্তু, আলোচনার বিষয়বস্তু তা নয়৷ এবার মোদীকে বেগ দিতে তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার লাইন লেগেছে৷ অথচ, প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এখনও আসনটি ফাঁকা রেখেছে৷ সম ভারের আর এক বিরোধী শিবির সমাজবাদী পার্টি-বহুজন সমাজ পার্টি-রাষ্ট্রীয় লোকদলের ‘মহাজোট' একই অবস্থান নিয়ে মজা দেখছে৷ আলোচনার বিষয় তা-ও নয়৷ এইসবের মধ্যে একটি প্রশ্ন বার বার উঠে আসছে৷ তা হলো, সদ্য কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজীব গান্ধী-তনয়া প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র কি এবার মোদীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হবেন?
দু-বার দুটি প্রশ্নের জবাবে জল্পনার আগুনে ঘি-ঢেলেছেন রাজীব-তনয়া৷ প্রথমে দাদা রাহুল গান্ধীর কেন্দ্রে প্রচার করার সময় তাঁকে সেখান থেকে প্রার্থী হওয়ার দাবি উঠতেই বলেছেন, ‘কেন, বারাণসী নয় কেন?' পরে তাঁর প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা কতটা জানতে চাইতে বলেছেন, ‘‘আমার দল চাইলে প্রার্থী হতে রাজি আছি৷''
শুধু এইটুকু ইঙ্গিতেই বদ্ধমূল ধারণা তৈরির জন্য যথেষ্ট নয় যে, প্রিয়াঙ্কা এবার নির্বাচনে লড়বেন এবং বরাণসী থেকে লড়বেন৷ এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও কিছু বিষয়৷ যেমন, বারাণসী কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ তাঁর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নাম লিখিয়েছেন ডজন খানেক নির্দল প্রার্থী৷ কিন্তু দুই প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস ও ‘মহাজোট' তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি৷ কংগ্রেসের প্রার্থী না হলেও ইতিমধ্যে প্রয়াগরাজ (এলাহাবাদ) থেকে বারাণসী পর্যন্ত নৌকা-সফর সেরেছেন প্রিয়াঙ্কা৷ গঙ্গার দু-ধারের মানুষদের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ দলীয় কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করেছেন৷
এখানেই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছে, প্রিয়াঙ্কাকে বারাণসী থেকে প্রার্থী করে শেষ বেলায় চমক দিতে চাইছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী৷ তেমনটা হলে প্রিয়াঙ্কা আদৌ জয়ী হতে পারবেন কিনা, তার চেয়ে ঢের বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মোদীকে নিজের নির্বাচনি কেন্দ্রে আটকে রাখা যাবে৷ মোদীর জন্য লড়াইটা মোটেই সহজ হবে না৷ তার ওপর যদি সপা-বসপা-আরএলডির ‘মহাজোট' প্রিয়াঙ্কার সমর্থনে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে লক্ষ্যণীয় হতে পারে মোদী-প্রিয়াঙ্কার লড়াই৷ সেক্ষেত্রে ২০১৯-এ বারাণসীর চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মোদী, ভারতীয় জনতা পার্টি এবং এনডিএ-র কাছে অন্য কিছু হবে না৷
যদিও ভারতীয় জনতা পারটির নেতারা প্রিয়াঙ্কার প্রার্থী হওয়ার বিষয়টিকে মোটেই গুরুত্ব দিতে নারাজ৷ দলের একাধিক প্রবীণ নেতা জানিয়েছেন, ‘‘প্রিয়াঙ্কার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা স্বল্প৷ শুধুমাত্র গান্ধী পরিবারের সদস্যা ছাড়া আর কোনো ইউএসপি নেই৷ তবে, গ্ল্যামারের কারণে ভিড় জমাচ্ছেন৷ ওঁকে দেখতে মানুষ ভিড় করলেও ভোটবাক্সে তার প্রভাব পড়বে না৷''
ওদিকে, ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাতকারে রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকার জানিয়েছেন, ‘‘প্রিয়াঙ্কা প্রার্থী হবেন কিনা তা তাঁর ও দলের ওয়ার্কিং কমিটির বিচার্য বিষয়৷ তবে, আমার ধারণা, বারাণসীতে প্রিয়াঙ্কা প্রার্থী হলে অন্য বিরোধী দল সেখানে প্রার্থী দেবে না৷ ওঁর (প্রিয়াঙ্কার) হার-জিত ঠিক করবেন সাধারণ মানুষ৷ তবে বিজেপিকে পরাস্ত করতে কংগ্রেস কতটা ঐকান্তিক প্রচেষ্টা করছে, তা আবার প্রমাণিত হবে৷'' তাঁর মতে, ২০০৪-এ ভারতের মানুষ দেশে এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন এনেছিল৷ এবার ২০১৯ সালেও একইরকম পরিবর্তনের সাক্ষী থাকবে দেশ৷
আগামী ১৯ মে, অর্থাৎ শেষ পর্যায়ে ভোটগ্রহণ হবে বারাণসীতে৷ অনেকটা সময় হাতে আছে৷ তাই বিরোধীরা ধীরে চলো নীতি নিয়ে এগোচ্ছে৷
অন্যদিকে, বারাণসী থেকে প্রার্থী হলে প্রিয়াঙ্কার রাজনৈতিক জীবনের প্রথম লড়াই হবে সেটি৷ প্রতিদ্বন্দ্বী নরেন্দ্র মোদী৷ জয় সহজ নয়৷ পরাজিত হলে কী হবে? ভারতে কংগ্রেস দলের ধারক ও বাহক গান্ধী পরিবারের কেউই প্রথমবার নির্বাচনি লড়াইয়ে পরাজিত হননি৷
কংগ্রেস সূত্র জানাচ্ছে, এজন্য বিকল্প রাস্তা খোলা রাখছে দল৷ বারাণসীতে যদি মোদীর কাছে প্রিয়াঙ্কা পরাজিত হন তাহলে অতীতে ইন্দিরা গান্ধী, সঞ্জয় গান্ধী, রাজীব গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী এবং বর্তমানে রাজীব গান্ধীর নির্বাচনি কেন্দ্র আমেথি আসনটি ছেড়ে দেওয়া হতে পারে প্রিয়াঙ্কাকে৷ সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী এবার আমেথি কেন্দ্রের পাশাপাশি দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের ওয়েনাড় কেন্দ্র থেকেও প্রার্থী হচ্ছেন রাহুল গান্ধী৷
তবে, এখনও পর্যন্ত সবটাই জল্পনা-কল্পনা৷ জল কোন দিকে গড়ায় তা জানা যাবে আরও কিছুদিন পর৷