নাইন ইলেভেনের এক যুগ
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৩স্মৃতিতে অম্লান নাইন ইলেভেন৷ এক যুগ পর আরো একবার পরম শ্রদ্ধায় দিনটি পালন করছে নিহতদের স্বজনরা এবং পুরো দেশ৷ যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ এখনও আল-কায়েদা, গণবিধ্বংসী অস্ত্র এবং নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে৷ অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার কথা ভাবছেন৷
সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের সম্ভাব্যতা অনেক মার্কিন অভিভাবকের মনে আশংকার জন্ম দিয়েছে, আবারো তাদের সন্তানদের ইরাক-আফগানিস্তানের মতো মধ্যপ্রাচ্যে মৃত্যুর সাথে লড়তে হবে কিনা৷ অন্যদিকে, অন্যরা মনে করছে, সিরিয়া এমন একটি দেশ যার সীমান্তে রয়েছে ইরান৷ তাই সিরিয়াকে কোনো কড়া জবাব না দিতে পারলে ইরানের কাছে তাদের জাতি হিসেবে দুর্বলতা প্রকাশ পাবে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যখন হোয়াইট হাউসের সাউথ লনে নীরবতা পালন করছিলেন, তখন হয়ত এ বিষয়গুলোই তাঁকে ভাবাচ্ছিল৷
কি হয়েছিল নাইন ইলেভেনে?
১২ বছর আগে এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারসহ এক যোগে চালানো চারটি আত্মঘাতি হামলায় নিহত হয় অন্তত ৩ হাজার মানুষ৷ ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় এই ঘটনা ঘটে৷ চারটি মার্কিন যাত্রিবাহী বিমান ছিনতাই করে এই হামলা চালানো হয়৷ দুটি বিমান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর ও দক্ষিণ টাওয়ারে আঘাত হানে৷ গুড়িয়ে ধসে পড়ে ভবন দুটি৷ অ্যামেরিকান এয়ারলাইন্সের ছিনতাই করা আর একটি বিমান নিয়ে হামলা চালানো হয় মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনে৷ তবে যাত্রীদের চেষ্টায় নির্ধারিত স্থানে হামলা চালাতে ব্যর্থ হয়ে পেনসিলভেনিয়ার আকাশে বিধ্বস্ত হয় চতুর্থ বিমানটি৷
হামলার সাথে সাথেই যুক্তরাষ্ট্রের সন্দেহ গিয়ে পড়ে ওসামা বিন লাদেনের উপর৷ শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান৷ লাদেনকে জীবন দিয়ে সেই অভিযানের মূল্য দিতে হয় ১০ বছর পর ২০১১ সালে৷ এই দিনটি মার্কিন নীতিতে আমূল পরিবর্তন এনেছে, সেইসাথে মোড় ঘুড়িয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির৷
আল-কায়েদা এখনও বড় হুমকি
নাইন ইলেভেনের পর থেকে ওসামা বিন লাদেনের আল-কায়েদা অ্যামেরিকার শত্রুতে পরিণত হয়েছিল৷ ঐ ঘটনার এক দশক পর লাদেনের মৃত্যুর পর ওবামা বলেছিলেন, আল-কায়েদার শক্তি ক্ষীণ হয়ে আসছে৷ এরপরও আফগানিস্তান, পাকিস্তান থেকে শুরু করে আরব দেশগুলো, উত্তর আফ্রিকা, এমনকি সিরিয়াতেও তাদের দৌরাত্ম্য কিন্তু এখনও কমেনি৷
সিরিয়ায় আল-কায়েদা সমর্থিত জিহাদি দলগুলোর কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্র এবং তার আইন প্রণেতাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এমনকি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে বলতে শোনা গেছে, ‘শত্রুর শত্রু তার বন্ধু' – এ কথা বলতে৷
সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস বা এপি-র এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৯৪ ভাগ অ্যামেরিকান মনে করেন, সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জয় হয়নি৷ মাত্র ১৪ ভাগ মনে করেন আগামী ১০ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধরে জয়ী হতে পারে৷
এসব অনুভূতির কথা মাথায় রেখেই হয়ত মঙ্গলবার জাতীয় জরুরি অবস্থা আরো এক বছর বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন ওবামা, ২০০১ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর যা ঘোষণা করা হয়েছিল৷ গত মাসে আল-কায়েদার হুমকিও এর পেছনে একটি কারণ হয়ে থাকতে পারে৷
এদিকে, ওবামা প্রশাসন যখন সিরিয়ায় হামলা করবে কিনা ভাবছে, তখন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লেবানন থেকে সব মার্কিন কূটনীতিকদের ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছে৷ ইরান সমর্থিত হেজবুল্লাহ গোষ্ঠীর উপস্থিতির কারণেই এ সিদ্ধান্ত বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ইরাক এবং আফগানিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র যখন অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলার জন্য সেনাবাহিনীর বাজেট কাট ছাট করতে ব্যস্ত, তখন আবার কোনো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টিকেই ভালোভাবে দেখছেন না বেশিরভাগ অ্যামেরিকান৷ বেশিরভাগ অ্যামেরিকানই চান যুদ্ধের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ হবে সীমিত এবং স্থলপথে তারা কোনো সামরিক অভিযান চালাবে না৷
এই ইরাক ও আফগান যুদ্ধই ওবামাকে নির্বাচনে জিততে সাহায্য করেছিল, কেননা বরাবরই তিনি ইরাক যুদ্ধ নিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশের সমালোচনা করেছিলেন৷ বরাবরই ওবামা ছিলেন যুদ্ধবাজ নীতির বিপক্ষে৷ কিন্তু হাউস এখন রিপাবলিকানদের দখলে থাকায় তারা সিরিয়ায় হামলার চালানোর পক্ষে রায় দেয় কিনা সেটা এখন দেখার বিষয়৷
গণবিধ্বংসী অস্ত্র
গণবিধ্বংসী অস্ত্রের জের ধরেই ইরাকে সামরিক অভিযান চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ এবারও সিরিয়া ইস্যুতে রায়ানিক অস্ত্র মূখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ তবে আসলেই আসাদ সরকার রাসায়নিক হামলা চালিয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে খোদ মার্কিন মহলেই৷ তবে এ সপ্তাহেই আসাদ সরকার স্বীকার করেছে, রাসায়নিক অস্ত্র তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে এবং শর্ত সাপেক্ষে তারা এগুলো ধ্বংস করতে প্রস্তুত৷
ওবামা হয়ত বুঝতে পেরেছেন সিরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে না আর তাই হয়ত তিনি পিছিয়ে দিলেন কংগ্রেস ভোট, সেই সাথে স্থগিত করলেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি৷
এপিবি/ডিজি (এপি)