নাজমার বার্লিন জয়
১২ অক্টোবর ২০১৩বৃহস্পতিবার বার্লিনে ‘আস্ত্রাইয়া ফিমেল লিডার অফ দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০১৩'-এর ট্রফি হাতে তুলে নেয়ার পর একটা সময় পর্যন্ত কথা বলতেই কষ্ট হচ্ছিল নাজমা আক্তারের৷ আনুষ্ঠানিক বক্তব্যকে ছাপিয়ে উঠে আসছিল ১১ বছর বয়সে মায়ের হাত ধরে পোশাক শিল্পশ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করার স্মৃতি৷ মাস শেষে মাত্র ২৫০ টাকা পাওয়ার জন্য অস্বাস্থ্যকর, অনিরাপদ পরিবেশে হাড়ভাঙা খাটুনি এখনো অবশ্য স্মৃতি হয়ে যায়নি৷ সেই কষ্ট এখনো আছে প্রতিটি শ্রমিকের জীবনে৷
নাজমার বয়স বেড়েছে, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এগিয়েছে অনেক, কারখানা বেড়েছে অনেক, রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়েছে শ্রমিকের রক্ত-ঘাম-জীবনের বিনিময়ে পাওয়া লক্ষ লক্ষ বৈদেশিক মুদ্রা, কিন্তু শ্রমিকদের সব চাহিদার ‘ন্যূনতম' দাবিগুলো এখনো তো পূরণ হয়নি! বার্লিনের বিএমডব্লিউ কার্যালয়ের নীচতলায় সেই কথাগুলোই বলেছেন নাজমা আক্তার৷ বলতে বলতে কেঁদেছেন, জার্মানির বড় বড় তারকাদেরও ছুঁয়ে গেছে তাঁর আবেগ৷ আস্ত্রাইয়ার পরিচালনা পর্ষদের অন্যতম সদস্য ইয়ুটা ক্লাইনশ্মিট, জার্মানির নারী বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘ইমোশন'-এর চিফ এডিটর ডরোটে ব়্যোরিশ এবং পুরস্কারের স্পন্সর বিএমডব্লিউ বার্লিনের বিপণন বিভাগের পরিচালক হান্স রাইনার শ্র্যোডার-এর বক্তব্যেও তাই একটু বেশি জোরালো হয়েছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত মজুরি, নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যসম্মত কর্ম পরিবেশের দাবি৷
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুপরিচিত জার্মানির বেশ কয়েকজন মডেল, অভিনেত্রী, ক্রীড়াবিদ এবং টেলিভিশন উপস্থাপিকার উপস্থিতিতে উজ্জ্বল এ অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিলেন নাজমা আক্তার৷ মিলনমেলায় যখন বিদায়ের সুর বাজছে তখন তিনি বসেছিলেন বাংলাদেশের সব পোশাক শিল্প শ্রমিকের হয়ে ডয়চে ভেলেকে কিছু বলতে৷ সাক্ষাৎকারে বিশ্বের সব দেশের নারীকে নেতৃত্বের পর্যায়ে তুলে আনতে বদ্ধপরিকর আস্ত্রাইয়ার কথা এসেছে৷ সরকার, পোশাক শিল্প মালিক এবং বিদেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর করণীয় সম্পর্কেও নাজমা আক্তার কথা বলেছেন সহজ ভাষায়৷ তাঁর আশা, এসব বিষয়ে সবার শিগগিরই টনক নড়বে এবং পোশাক শিল্পের শ্রমিকেরা সুদিনের দেখা পাবেন৷
প্রতিবেদন ও সাক্ষাৎকার: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন