নারী মুক্তিযোদ্ধা
২৭ ডিসেম্বর ২০১২২০১১ সালের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকা পালনকারী নারীদের নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু হয়৷ এই উদ্যোগের শুরুতে শুধুমাত্র হাতে গোনা কিছু প্রখ্যাত নারী মুক্তিযোদ্ধাদেরই তথ্য-উপাত্ত সহজলভ্য ছিল৷ তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা রহমান এবং বীর প্রতীক তারামন বিবি৷ বর্তমানে অসুস্থ তারামন বিবি মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর জোর দাবি জানান৷
আর বর্তমানে অ্যামেরিকায় বসবাসকারী অপর বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা রহমান ডয়চে ভেলের সাথে সাক্ষাৎকারে জানান, বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা ও প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীন বাংলাদেশকে নিয়ে তিনি খুব অপমানিত বোধ করেন৷ কারণ তাঁর মতে, গত ৪১ বছরে বাংলাদেশে কিছু রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি হয়েছে৷ কিন্তু নৈতিকতা বলতে কিছু নেই৷ রয়েছে শুধু দলাদলি এবং অন্যের ক্ষতি করার প্রচেষ্টা, হিংসা ও বিদ্বেষ৷ তবে এখন বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বের নানা প্রান্তে পৌঁছে গেছে এবং নানা খাতে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে - এমন ঘটনা জেনে তিনি স্বস্তি পান এবং মনে করেন, বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে তো এটা সম্ভব ছিল না৷
দীর্ঘ নয় মাসে পাক সেনাদের অকথ্য নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাক্ষী বীর বঙ্গমাতাদের অধিকাংশই ডয়চে ভেলের সাথে আলাপচারিতায় যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচার এবং শাস্তি কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন৷ যেমন চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া যেন দ্রুত সম্পন্ন হয় এবং যুদ্ধাপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি হয় সেটিই বড় চাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলা দাসের৷
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. লুৎফুন নেসা বলেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক, তা আমি একান্তভাবে চাই৷ কারণ আমি দেখেছি ওরা কীভাবে যুদ্ধের সময় মা-বোনদের ইজ্জত লুটেছে৷ আমি যেখানে ছিলাম মুন্সীগঞ্জে সেখানে আমি দেখেছি, অনেক বাঙালি যারা মুসলিম লিগ করতো তারা এ কাজে জড়িত ছিল৷ পাকিস্তানিরা তো কিছু চিনতো না৷ কিন্তু এই বাঙালিরা নারীদেরকে নিয়ে গিয়ে পাকিস্তানিদের ভোগ দিতো৷ এটার যে একটা বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ এটা সফল হোক সেটা আমি চাই মনে-প্রাণে৷''
প্রায় একই ভাষায় দেশের কলঙ্ক ঘুচানোর দাবি জানান রাজশাহীর মুক্তিযোদ্ধা সাবিত্রী বিশ্বাস৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা আর কীভাবে ভালো থাকলাম, আমাদের আর কতটুকুই বা মূল্যায়ন হলো? তবে দেশের কলঙ্ক রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলে আমরা শান্তি পাবো৷''
বীর সাহসী মুক্তিযোদ্ধা শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বাংলাদেশের অর্জন ও অগ্রগতির মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন, ‘‘আমাদের প্রিয় দেশ শত্রুমুক্ত হয়েছে সেটিই আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন৷ তবে এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনও হয়নি৷ এছাড়া এতো কষ্টের এবং ত্যাগের বিনিময়ে এই দেশটিকে স্বাধীন করলাম অথচ এখন পর্যন্ত জাতির প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে কেন স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত নেই সেজন্য খুব আফসোস হয়৷''
নারী মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই দাবি জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধে নারীদের সাহসী ভূমিকার নিয়ে পৃথক জাদুঘর, সংগ্রহশালা এবং বিদ্যমান দলিল-পত্র ও সামগ্রীর যথাযথ সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণের৷ এছাড়া নারীদের বীরত্বের কাহিনী নিয়ে ঐতিহাসিক দলিল আকারে বিশেষ প্রকাশনারও দাবি তুলেছেন অনেকে৷
আর দুই বছর ধরে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান করার শেষে আমাদের মনে হয়েছে, বাংলাদেশে এখনও অনেক নারী রয়েছেন যাদের বীরত্বের কাহিনী এখনও গোটা জাতির সম্মুখে উন্মোচিত হয়নি কিংবা সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি৷ তাই এক্ষেত্রে আরো সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালাতে হবে৷