নারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক আফগানিস্তান
২৫ আগস্ট ২০১১সম্প্রতি থমসন-রয়টার ফাউন্ডেশনের চালানো একটি আন্তর্জাতিক জরিপে দেখা গেছে যে, নারীদের জন্য আফগানিস্তান হচ্ছে সবচাইতে বিপজ্জনক স্থান৷ উচ্চ মাত্রার সহিংসতা, দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা এবং দারিদ্র্য – এই সব উপাদান একযোগ হয়ে আফগানিস্তানে এহেন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি৷ অর্থাৎ, দশ বছরের পশ্চিমা হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও আফগানিস্তানে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি৷ দেশটিতে ৮৭ শতাংশ নারী নিরক্ষর এবং ৭০ থেকে ৮০ ভাগ নারীকে নাকি ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া হয়৷ সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে প্রত্যেক ১১ জন মায়ের মধ্যে ১ জন মারা যাচ্ছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে৷
আফগানিস্তানের পর, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এবং পাকিস্তান৷ এরপর চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারত – যার মূল কারণ হলো ব্যাপক মাত্রার নারী পাচার এবং মেয়ে শিশু ভ্রুণহত্যার প্রবণতা৷ ভারতের পর আছে আফ্রিকা মহাদেশের আর একটি দেশ – সোমালিয়া৷ অর্থাৎ, তালিকার প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে তিনটি দেশই দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত৷
থমসন-রয়টার ফাউন্ডেশন জানায়, স্বাস্থ্য, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিকভাবে পুরুষের তুলনায় নারীরা কতোটা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে….এছাড়া যৌন নির্যাতন, সহিংসতা, পাচার – এই বিষয়গুলো বিবেচনা করেই তালিকাটা তৈরি করা হয়েছে৷
সত্যিই দুঃখের বিষয়৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ এবং বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ভারত৷ শুধু তাই নয়, ভারতের প্রেসিডেন্ট, স্পীকার এমনকি সরকারি দলের প্রধানও কিন্তু নারী৷ অথচ, বাল্যবিবাহ, ভ্রুণ হত্যা ও নারী পাচারের ঘটনা আজও ঘটছে ভারতে৷ গত শতাব্দীতে কমপক্ষে পাঁচ কোটি নারী ভ্রুণ হত্যা করা হয়েছে দেশটিতে৷ ধারণা করা হচ্ছে, ভারতের প্রায় ৩০ লক্ষ নারী জড়িত গণিকাবৃত্তির সঙ্গে, যার অন্তত ৪০ শতাংশ শিশু৷
পাকিস্তানে নারী-পুরুষের বৈষম্যের মূল কারণ সাংস্কৃতিক, জাতিগত এবং ধর্মীয় বলে দাবি করেছে টমসন-রয়টার ফাউন্ডেশন৷ জানা যায়, পাকিস্তানে অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রবল৷ আর পুরুষদের তুলনায় তাদের উপার্জন প্রায় ৮২ শতাংশ কম৷ শুধু তাই নয়, সামাজিক ও পারিবারিক সম্মান রক্ষার নামে বছরে প্রায় এক হাজারের মতো নারীকে হত্যা করা হয়ে থাকে পাকিস্তানে৷ এছাড়া, দেশটিতে অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে বহু নারী, ৯০ শতাংশ নারী হচ্ছে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার৷
অন্যদিকে, দ্বিতীয় স্থানে থাকা কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে নারীদের পিছিয়ে থাকার মূল কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে যৌন নির্যাতনকে৷ পঞ্চম স্থানে থাকা সোমালিয়ার চিত্রটাও অত্যন্ত করুণ৷ সেখানেও, মাতৃমৃত্যুর হার, ধর্ষণ, এমনকি মেয়েদের খতনা করার ঘটনা খুব বেশি৷ সমীক্ষাটি জানাচ্ছে, ৪ থেকে ১১ বছর বয়সের মধ্যে ৯৫ শতাংশ বাচ্চা মেয়ের যৌনাঙ্গ কেটে ফেলা হচ্ছে সোমালিয়ায়৷
উল্লেখ্য, ব্রিটিশভিত্তিক থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন নিজেরাই ১০টি দেশকে বেছে নিয়েছিল এ সমীক্ষার জন্য৷ একটু হলেও স্বস্তির খবর, ১০টি দেশকে নিয়ে এ সমীক্ষার সবশেষে রয়েছে বাংলাদেশ৷ আর বাকি চারটি দেশ হচ্ছে সুদান, হাইতি, সৌদি আরব এবং নাইজেরিয়া৷
প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ
সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী