নারীদের ফুটবল বিশ্বকাপ: মাঠ মাতাবেন যাঁরা
কাল থেকে ফ্রান্সে শুরু হচ্ছে নারী ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই৷ পায়ের জাদুতে কারা কাঁপন ধরাবেন বিপক্ষ শিবিরে? ৭ জুলাইয়ের আগে মিলছে না উত্তর! তবে ১২ নারী ফুটবলারকে বাছাই করেছে ডয়চে ভেলে৷ তাদের নিয়েই আজকের ছবিঘর...
লাইকে মার্তেন্স (নেদারল্যান্ডস)
দুই বছর আগে ঘরের মাটিতে ইউরো জয় করে নেদারল্যান্ডস৷ সেবার অসাধারণ নৈপুণ্যে ফুটবলপ্রেমীদের মুগ্ধ করেছেন মার্তেন্স৷ নিজেকে নিয়ে গেছেন বিশ্বসেরাদের কাতারে৷ ক্লাব ফুটবলে বার্সেলোনার জার্সি গায়ে মাঠে নামেন ২৬ বছরের এই ফরোয়ার্ড৷ পায়ের কারুকাজের দেখে মার্তেন্সকে আদর করে ডাকা হয়, মেসির ছোটো বোন বলে৷ দুর্দান্ত ড্রিবলিংয়ের সঙ্গে দারুণ ফিনিশিং তাকে আলাদা করেছে অন্যদের চেয়ে৷
ক্রিস্টিন সিনক্লেয়ার (ক্যানাডা)
বয়স যখন ১৯, তখনই অভিষেক হয় ক্রিস্টিন সিনক্লেয়ারের৷ তারপর টানা ১৭ বছর ধরে দলের আক্রমণভাগকে সামাল দিচ্ছেন৷ শুনে অবাক লাগলেও, এই খেলোয়ার ক্যানাডার হয়ে মাঠে নেছেন ২৮২ বার৷ আর গোলের সংখ্যাটা ১৮১৷ ক্যানাডার নারী ফুটবলকে দীর্ঘ সময় ধরে নেতৃত্ব দেয়া সিনক্লেয়ারের বয়স এখন ৩৬৷ তাতে কি? এখনও দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় তিনি৷
ওয়েন্ডি রেনার্ড (ফ্রান্স)
ফ্রান্স জাতীয় দল কিংবা অলিম্পিক লিওঁ—দুই জায়গাতে ওয়েন্ডি রেনার্ডকে বিবেচনা করা হয় দলের হৃৎপিণ্ড হিসেবে৷ রক্ষণভাগে প্রাচীর খ্যাত রেনার্ড লিওঁর হয়ে ফ্রেঞ্চ লীগ জিতেছেন ১৩ বার৷ আর চ্যাম্পিয়ন লীগ ট্রফিতে চুমু খেয়েছেন ছয়বার৷ রক্ষণভাগে বিশ্বসেরাদের একজন তিনি৷ ঘরের মাঠে বিশ্বসেরা হতে ফ্রান্সের যে লড়াই, সেখানে অগ্রণী সেনার দায়িত্ব রেনার্ডের কাঁধে৷
লুসি ব্রোঞ্জ (ইংল্যান্ড)
ইংলিশদের বিশ্বকাপ মিশনে লুসি ব্রোঞ্জই দলের মূল চালিকাশক্তি৷ বিশ্বসেরাদের সঙ্গে তার নাম উচ্চারিত হওয়ার খবরও নতুন কিছু নয়৷ ক্লাব পর্যায়ে তিনি জিতেছেন ‘হোস্ট অব অনার’ সম্মাননা৷ ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে তার জাদুতে তৃতীয় স্থান দখল করে ইংল্যান্ড৷ তবে ২০১৭ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে দলকে সেমিফাইনালে টেনে নিলেও শেষ হাসি হাসা হয়নি৷ তাই লিওঁর রক্ষণভাগের আস্থা লুসির লক্ষ্য, নিজের দেশকে বিশ্বসেরার মুকুট এনে দেয়া
ইরেন পারেদেস (স্পেন)
দ্রুততার সঙ্গে প্রতিপক্ষের আক্রমণভাগকে দুমড়ে মুচড়ে দিতে জুড়ি নেই পারেদেসের৷ ২০১৬ থেকে পিএসজির হয়ে রক্ষণভাগ সামাল দিচ্ছেন তিনি৷ এই কুশলী খেলোয়াড়ের মধ্যে আছে গোল ক্ষুধা৷ বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে স্পেনের হয়ে চারটি গোল করেছেন এই ডিফেন্ডার৷ সেখানে নিজ দলের পক্ষে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকাতে তার নাম ছিল শীর্ষে৷
মার্তা (ব্রাজিল)
‘পক্ষপাতিত্ব, সহযোগিতার অভাব, কিংবা স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়েও বলতে হবে, তুমি পারবে’—এভাবে নিজের একাগ্রতা সম্পর্কে দ্য প্লেয়ার্স ট্রিবিউনকে বলেছিলেন মার্তা ভিয়েইরা দা সিলভা৷ ব্রাজিলের আক্রমণভাগের মূল হাতিয়ার তিনি৷ ছয়বার জিতেছেন ফিফার বর্ষসেরা নারী ফুটবলারের খেতাব৷ অরলান্ডো প্রাইডের হয়ে খেলা ব্রাজিলিয়ান এই স্ট্রাইকারের বয়স এখন ৩৩৷ এখনই, নারী ফুটবলের কিংবদন্তী বলা হয় মার্তাকে৷
কার্লি লয়ড (যুক্তরাষ্ট্র)
চাপের মুখেও সাবলীল খেলে যান লয়ড৷ আর এই যোগ্যতা তাকে নিয়ে গেছে বিশ্বসেরাদের আসনে৷ ২০০৮ এবং ২০১২ সালে অলিম্পিকে স্বর্ণ জিতেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এই দুই ফাইনালে গোল করেছেন তিনি৷ ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যাট্রিক করে জাপানকে একাই গুঁড়িয়ে দেন কার্লি৷ ২৭৩টি ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করে, গোল আদায় করেছন ১১০টি৷ ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে তাকে বর্ষসেরা নারী ফুটবলারের স্বীকৃতি দিয়েছে ফিফা৷
আসিসাত ওশোয়ালা (নাইজেরিয়া)
অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে নিজেকে চিনিয়েছেন ওশোয়ালা৷ ফাইনালে হেরে গিয়েও, তিনি হয়েছেন সেরা খেলোয়াড়৷ পেয়েছেন গোল্ডন বল৷ আর সাত গোলে সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে জিতে নেন গোল্ডেন বুট৷ বার্সার এই ফরোয়ার্ডের নৈপুণ্যে দুবার আফ্রিকান কাপ অব নেশন্স জিতেছে নাইজেরিয়া৷ আর ওই মহাদেশের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন তিনবার৷
জেনিফার মারোজান (জার্মানি)
জার্মানির হয়ে ১০ নম্বর জার্সি চাপিয়ে মাঠে নামেন জেনিফার৷ শক্তিশালী ড্রিবলিং, গোলবারে সামনে ভয়ঙ্কররূপে হাজির হওয়া, আর সেট পিসে অসাধারণ দক্ষতা—তাকে বানিয়েছে ‘পারফেক্ট প্লেমেকার’৷ মাত্র ২৭ বছর বয়সেই চারবার জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লীগের শিরোপা৷ ২০১৩ সালে ইউরো জয়ের দুই বছর পর অলিম্পিকে স্বর্ণপদকও নিয়েছেন নিজেদের দখলে৷ নিজের অভিজ্ঞতার ঝোলাটাও হয়েছে সমৃদ্ধ৷ তাই এবার বিশ্বকাপটা জিততে মরিয়া হয়ে আছেন জেনিফার৷
আমাঁদিন অঁরি (ফ্রান্স)
ডান দিক থেকে ক্ষিপ্র গতিতে আক্রমণে আসেন মধ্যমাঠের এই খেলোয়াড়৷ অলিম্পিক লিওঁ কিংবা ফ্রান্স—যে দলের হয়েই মাঠে নামেন, অঁরির ক্ষুরধার আক্রমণে কোনো ভুল হয় না৷ প্রতিপক্ষ থেকে বল কেড়ে নিয়ে দ্রুত আক্রমণে যেতে বেশ পারদর্শী অঁরি৷ তার দক্ষতা তাকে বিশ্বের সেরাদের একজন বানিয়েছে৷
সামান্থা কের (অস্ট্রেলিয়া)
ন্যাশনাল উইমেন সকার লীগে (যুক্তরাষ্ট্র) ৫০ গোল করে রেকর্ড বইয়ে নাম লিখিয়েছেন সামান্থা৷ মাত্র ১৫ বছর বয়সে জাতীয় দলে অভিষেক হয় তার৷ সামান্থার নৈপুণ্যে ‘মাটিলডারা’ ফিফা ব়্যাঙ্কিংয়ে উঠে এসেছে ছয়ে৷ আর প্রতিটি গোল উদযাপনে আছে, বিশেষ কায়দার ডিগবাজি ৷ বিশ্বকাপের মাঠে প্রিয় তারকার এই কসরত দেখতে মুখিয়ে আছেন সমর্থকেরা৷
সাকি কুমাগাই (জাপান)
অলিম্পিক লিওঁর হয়ে ছয়বার ফ্রেঞ্চলীগ আর চারবার চ্যাম্পিয়ন লীগ জেতার অভিজ্ঞতা আছে সাকির৷ ২০১৮ সালে এশিয়া কাপে তার নেতৃত্বেই চ্যাম্পিয়ন হয় জাপান৷ ওই বছর থেকে দলের নেতৃত্ব নিলেও, ২০১১ থেকে কিন্তু দেশের জন্য খেলে যাচ্ছেন তিনি৷ সেবার, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রক্ষণভাগের এই খেলোয়াড় পেনাল্টি থেকে জয়সূচক গোলটি করেন৷ ২৮ বছরে জাপানের হয়ে মাঠে নামার সেঞ্চুরিও করে ফেলেছেন সাকি৷