নারীর বিরুদ্ধে এর্দোয়ানের লজ্জাজনক কাজ
৩১ মার্চ ২০২১ইউরোপের অন্যতম শীর্ষ মানবাধিকার সংস্থা কাউন্সিল অফ ইউরোপের তৈরি করা এই চুক্তিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ৪৫টি দেশ সই করেছিল৷ এর লক্ষ্য ছিল পারিবারিক সহিংসতা, বৈবাহিক ধর্ষণ, ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন বা নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদ ইত্যাদি বন্ধ করা৷
২০ মার্চ প্রথম দেশ হিসেবে তুরস্ককে এই চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার বিলে সই করেন প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যিপ এর্দোয়ান৷ অফিসিয়াল গেজেটে কোনো কারণ উল্লেখ না করলেও পরে এর্দোয়ান সরকারের যোগাযোগ পরিচালক এক বিবৃতিতে জানান, ইস্তাম্বুল কনভেনশন ‘সমকামিতাকে স্বাভাবিকীকরণ’ করার চেষ্টা করে৷ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয় দেশ বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, চেক প্রজাতন্ত্র, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও স্লোভাকিয়া এই চুক্তিতে সই করেনি৷ এছাড়া এলজিবিটি সম্প্রদায় জেন্ডার ইস্যুতে তাদের ভাবনা পুরো সমাজের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে, এই কারণ দেখিয়ে পোল্যান্ডও এই চুক্তি থেকে সরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়৷ উল্লেখ্য, গত জানুয়ারিতে পোল্যান্ডের ডানপন্থি পপুলিস্ট ও ইউরোপবিরোধী শাসক দল ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি গর্ভপাত ও সমলিঙ্গের বিয়ে নিষিদ্ধ করেছে৷ আর হাঙ্গেরিতে গতবছর গর্ভপাতবিরোধী আইন পাস হয়৷
তুর্কি সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, নারী অধিকার রক্ষায় দেশের আইন যথেষ্ট৷ তাই বাইরের কিছুর প্রয়োজন নেই৷ আর এর্দোয়ানের দলের রক্ষণশীল নেতারা মনে করেন, ইস্তাম্বুল কনভেনশন পারিবারিক ঐক্যের ক্ষতি করে এবং তালাককে উৎসাহিত করে৷ এছাড়া এই চুক্তির বিভিন্ন ধারায় যে সমতার কথা বলা হয়েছে সেটি ব্যবহার করে এলজিবিটি সম্প্রদায় সমাজে আরও বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবার দাবি করছে বলেও মনে করেন তারা৷
ইস্তাম্বুল কনভেনশন থেকে বের হয়ে আসার মাধ্যমে নারী বিদ্বেষ বিষয়ে এর্দোয়ান হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ডের ক্যাথলিক নেতাদের ছাড়িয়ে গেলেন৷ গতবছর এপ্রিলে করা তুরস্কের শীর্ষ মুসলিম নেতার একটি বক্তব্য পুনরায় উল্লেখ করেছেন এর্দোয়ান৷ ঐ ধর্মীয় নেতা করোনা মহামারির জন্য সমকামিতাকে দায়ী করেছিলেন৷
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বান, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান ও পোল্যান্ডের নেতারা বাইরের শক্তি দ্বারা প্রভাবিত হতে পছন্দ করেন না৷ তাই ইইউর সদস্য হওয়া সত্ত্বেও পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি ইইউর আইনের শাসন ব্যবস্থার বিরোধী৷
তুরস্ক ইইউর সদস্য না হলেও ইইউর মতোই মূল্যবোধসম্পন্ন আরেক সংস্থা ন্যাটোর সদস্য৷ ইস্তাম্বুল কনভেনশন থেকে তুরস্কের সরে যাওয়ার পর হোয়াইট হাউস যেভাবে সমালোচনা করেছে তাতে প্রমাণ হয় যে, মুক্তি বিশ্বের মানুষরা তুরস্কের সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছেন৷
আলেক্সান্ডার গ্যোরলাখ/জেডএইচ
আলেক্সান্ডার গ্যোরলাখ, কার্নেগি কাউন্সিল ফর এথিকস ইন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র ফেলো ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলিজিয়ন ও ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিস ইনস্টিটিউটের সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট৷
৫ ফেব্রুয়ারির ছবিঘরটি দেখুন...