অপুষ্টিতে ভোগা রোহিঙ্গা শিশুরা
১০ নভেম্বর ২০১৭এ বছরের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে থাকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা, যা আজও পুরোপুরি থামেনি৷ প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসতে থাকা রোহিঙ্গাদের অনেকেই দিনের পর দিন না খেয়ে কাটাতে বাধ্য হন৷ যার মারাত্নক প্রভাব পড়ে গর্ভবতী নারী ও শিশুদের মধ্যে৷ হাসনা বেগম তাদেরই একজন৷ মিয়ানমারে স্বামী নিহত হবার পর দুই ছেলেকে নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন তিনি৷ যাত্রা পথে প্রায় সাতদিন তারা কিছুই খাননি৷ অস্থিচর্মসার দেড় বছরের শিশু সোহেলকে দেখিয়ে তিনি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, গরম, ঠান্ডা আর বৃষ্টির মধ্যে ছেলেদের জ্বর আর ডায়রিয়া হয়ে গেছে৷
বালুখালি ক্যাম্পের শিশু বিশেষজ্ঞ সুমি আখতার বলেন, ‘‘এ সব শিশুদের বেশিরভাগের অবস্থা খুব মারাত্নক৷ এমনকি তাদের বাবা-মায়েরাও সমস্যাটার গুরুত্ব বুঝতে পারছে না৷’’ যদিও রোহিঙ্গা শিশুদের মধ্যে ‘বিশেষ পুষ্টিযুক্ত শিশুখাদ্য’ খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে, তবুও পরিস্থিতির ব্যাপকতায় তা খুব সামান্যই ভূমিকা রাখতে পারছে৷
ইউনিসেফ-এর তথ্য মতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত অন্তত ২৫ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে, যা এ সমস্ত শিশুদের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে৷ ইউনিসেফ-এর কান্ট্রি হেড এডওয়ার্ড বাইগবেডার বলেন, ‘‘পুরোপুরি প্রতিরোধ ও চিকিৎসাযোগ্য রোগেও অপুষ্টির শিকার এ সব শিশু মারা যেতে পারে৷ তাই এদের এখনই সাহায্যের প্রয়োজন৷’’
ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গারা বেঁচে আছে ত্রাণ সহায়তার উপর নির্ভর করে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে সংগ্রহ করতে হয় খাবার৷ এমনিতেই এ সব ত্রাণ পর্যাপ্ত নয়, তার ওপর পরিস্থিতি আরো খারাপ হয় যখন এই ত্রাণ তারা স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করে দেয়৷ উখিয়ার কাছে এক দোকানি এএফপিকে জানায়, ‘‘আমরা প্রতিদিনই উদ্বাস্তুদের কাছ থেকে জিনিসপত্র কিনি৷ চাল, ডাল, চিনি, লবন, তেল, গুড়া দুধ, শিশুখাদ্য – এ সমস্ত দিয়ে তারা আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়৷’’
রোহিঙ্গারাও এ কথা স্বীকার করেন৷ ক্যাম্পের বাসিন্দা করিম মাঝি বলেন, ‘‘খাবার বিক্রি করে দেয়া ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই৷’’ বাংলাদেশে তাদের কাজের অনুমতি না থাকায় প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে অনেক রোহিঙ্গায় বিক্রি করে দেয় খাদ্য সহায়তা৷
এদিকে, ম্যানিলায় আসিয়ান ও ভিয়েতনামে অ্যাপেক সম্মেলনের প্রাক্কালে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের ঘিরে তৈরি হওয়া মানবিক সংকট নিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে আলোচনার তাগিদ দেয়া হয়৷ প্রতিষ্ঠানটির এশিয়া অঞ্চলের প্রধান ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে একমত হওয়া এবং স্বাধীন পর্যবেক্ষক ও ত্রাণ সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানগুলি যাতে দেশটিতে প্রবেশ করতে পারে, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন৷ একমাত্র তবেই তাঁদের এ ধরনের সম্মেলন থেকে নিজ দেশে ফেরা উচিত, তার আগে নয়৷’’
এ প্রস্তাবে আসিয়ান ও অ্যাপেক-এর সদস্য দেশগুলো, বিশেষ করে মিয়ানমার নাখোশ হতে পারে৷ তবে পশ্চিমা নেতারা চাইলে সম্মেলনের বাইরেও এ বিষয় নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালাতে পারেন, বলেন ব্র্যাড অ্যাডামস৷
আরএন/ডিজি (এপি, এএফপি)