নির্বাচন কবে সে বিষয়ে রোডম্যাপ চেয়েছে বিএনপি
৫ অক্টোবর ২০২৪শনিবার যমুনায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে বসেন বিএনপির নেতাকর্মীরা৷ সংলাপ শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘আমরা নির্বাচন বিষয়ে কথা বলেছি৷ নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার বিষয়ে বলেছি৷ আমরা বলেছি, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন স্থগিত করে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে৷ নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন কবে হবে সে বিষয়ে রোডম্যাপ দিতে বলেছি৷'' জাতীয় পরিচয়পত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত যাতে অধ্যাদেশ দিয়ে বাতিল করা হয় সে বিষয়ে দাবি জানিয়েছে বিএনপি৷
এছাড়া মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছে চুক্তিভিত্তিক কয়েকটি নিয়োগ বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। তিনি বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যেও এমন অনেকে আছেন, যারা গণঅভ্যূত্থানের যে স্পিরিট সেটাকে ব্যাহত করছেন৷ তাদেরকে সরানোর কথা বলে এসেছি৷’’
সম্প্রতি সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করেছে সরকার৷ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘বিতর্কিত কোনো ব্যক্তি যেন নির্বাচন সংস্কার কমিটিতে না যায়, সেটা আমরা বলেছি৷ ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় ভুয়া ভোটের মাধ্যমে হওয়া সকল ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করতে বলেছি। সেইসঙ্গে ২০১৪, ১৮ ও ২৪ সালে নির্বাচনের সময় যারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার, কমিশনার ছিলেন তাদেরসহ ভুয়া ও পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন আয়োজনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি৷’’
এক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় দেয়ার জন্য সাবেক ‘নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার’ জন্য সাবেক প্রধান বিচারপতি এ. বি. এম. খায়রুল হকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানিয়েছে বিএনপি৷ ফখরুল বলেন, ‘‘নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার মূল হোতা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করার মূলনায়ক বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনের যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে তাদের দোসর হয়ে লুটপাট, অনাচার, অত্যাচার, গুম-খুন, গণহত্যায় সহায়তা করেছেন, তাদের বেশিরভাগই এখনো বহাল তবিয়তে স্ব স্ব জায়গায় আছেন৷ অবিলম্বে তাদের সরিয়ে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের আনার কথা আমরা বলেছি৷’’
সম্প্রতি জেলা প্রশাসক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে৷ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের নিয়োগ আমরা বাতিল করতে বলেছি৷ সেইসঙ্গে যোগ্য ব্যক্তিদের তালিকা করতে বলেছি৷’’
গত ১৫ বছর ধরে যেসব সরকারি কর্মকর্তা পদোন্নতিবঞ্চিত রয়েছেন, তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি নিশ্চিত করার কথাও বলেন তিনি৷
বিচার বিভাগ বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘হাইকোর্ট বিভাগে এখন পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন হয়নি৷ অথচ, হাইকোর্ট বিভাগের বেশিরভাগ নিয়োগই ছিল দলীয় ভিত্তিতে৷ সেখানে প্রায় ৩০ জন বিচারক বহাল তবিয়তে কাজ করছেন৷ তাদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আমরা বলেছি৷’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা লক্ষ্য করছি, যাদের দুর্নীতি-হত্যার মতো সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাদেরকে জামিন দেওয়া হচ্ছে৷ এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক৷ এটা আমরা দেখার জন্য বলেছি৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘২০০৭ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী শাসনামলে দায়ের করা সব মিথ্যা, গায়েবি, ভুয়া, সাজানো, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত ঘোষণা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি৷ কিছু আমলা, পুলিশ কর্মকর্তা, সাবেক মন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন৷ কীভাবে পালাচ্ছেন, কার সহযোগিতায় পালাচ্ছেন, সে বিষয়গুলো আমরা দেখার জন্য বলেছি৷’’
শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান নিয়ে দেশটির সাথে সরকারকে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব৷ বলেন, ‘‘আরেকটি বিষয় আমরা জোর দিয়ে বলেছি—শেখ হাসিনা ভারতে আছেন৷ তাকে কেন্দ্র করে, তার মাধ্যমে যেসব অপপ্রচার চলছে, সেটা হচ্ছে কারণ তিনি ভারতে আছেন৷ এই বিষয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য এবং তাকে ওই অবস্থান থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি৷’’
এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে সহিংসতা ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া, বিগত সরকারের সময়ে গুম-খুনের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও ব্যাবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপরধর্মীয় উপসনালয় ও সম্পত্তিতে হামলার কিছু ঘটনা ঘটেছে৷ এই বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আপনারা দেখছেন, পূজাকে কেন্দ্র করে সনাতনি ধর্মের কিছু মানুষ—সবাই না—অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে জনগণকে উস্কে দিচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে৷ তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে যে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার হচ্ছে, নির্যাতন হচ্ছে। যেটা সর্ব্যেব মিথ্যা। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে—এটা বলা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র। এই বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে বলেছি অন্তর্বর্তী সরকারকে৷’’
এফএস/জেডএ (দ্য ডেইলি স্টার)