1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রাণহানির নতুন রেকর্ড

সমীর কুমার দে, ঢাকা৬ জানুয়ারি ২০১৪

নির্বাচন বর্জন করে তা প্রতিহতের ঘোষণা আগেই দিয়েছিল বিএনপিসহ ১৮ দল৷ কার্যত নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন প্রতিহতে মাঠে নামে তারা৷ তবে তাদের ঠেকাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল সরকারও৷ কিন্তু তারপরও প্রাণহানি থামানো যায়নি৷

https://p.dw.com/p/1AlZz
Bangladesch Parlamentswahlen
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images

গত বছরের ২৫ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন থেকে শনিবার পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধীদলীয় জোট ছয় দফায় ২৬ দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে৷ এই সময় সারা দেশে প্রাণ হারিয়েছেন ১২৩ জন৷ আর রবিবার নির্বাচনের দিন বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে৷ এতে নিহত কমপক্ষে ১৮ জন৷ সব মিলিয়ে এই নির্বাচনের জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে কমপক্ষে ১৪১ জনকে৷

এত প্রাণহানি আগে ঘটেনি

১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা শুরুর পর রবিবার পর্যন্ত ছয়টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ তবে এবারের মতো এতো প্রাণহানির ঘটনা এর আগে আর কোনো নির্বাচনে ঘটেনি৷ ১৯৯৬ সালে প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়েই নির্বাচন করে বিএনপি৷ ওই বছর নির্বাচন ঘিরে প্রাণ হারান ৪১ জন৷ আর ২০০১ সালের নির্বাচন ঘিরে নিহত হয়েছিল ৩৮ জন৷ সবশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে কোনো ধরনের সহিংসতাই হয়নি৷ কোনো প্রাণহানির খবরও পাওয়া যায়নি৷ এই নির্বাচনটি সেনা সমর্থিত সরকারের অধীনে হয়েছে৷

নির্বাচনে এত প্রাণহানির পরও পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ৷'' তাহলে এত প্রাণহানি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সবকিছু নির্বাচনের সঙ্গে মিলিয়ে ফেললে হবে না৷ শুধু নির্বাচন নয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে৷ এর জন্যও একটি মহল সন্ত্রাস করছে৷ এতেও বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটছে৷'' তবে সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে বলে দাবি করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক৷

সর্বোচ্চ প্রাণহানি গত বছর

নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার পাশাপাশি গেল বছর রাজনৈতিক সহিংসতায় সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে৷ মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে, গেল বছর জুড়ে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায় এবং বছরের শেষদিকে একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ও বিরোধী জোটের অবরোধ কর্মসূচির মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সারা বছরে ৫০৭ জন মারা গেছেন৷ আর আহত হয়েছেন ২২ হাজার ৪০৭ জন৷

Bangladesch Parlamentswahlen Gewalt in Dhaka
রবিবার নির্বাচনের দিন বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক সহিংসতায় প্রাণ হারান কমপক্ষে ১৮ জনছবি: STRINGER/AFP/Getty Images

তবে প্রাণহানি নতুন নয়

২০০১ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও তার আগে সহিংসতার ঘটনা ঘটে৷ ওই বছরের পহেলা অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগের এক সপ্তাহে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় ৩৮ জন প্রাণ হারান, আহত হন কমপক্ষে এক হাজার ৬৭২ জন৷ নির্বাচনি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, পেশিশক্তি প্রদর্শনসহ নানা করলে এই সহিংসতার ঘটনা ঘটে৷ এছাড়া ওই বছরজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতাও ছিল অনেক৷

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একতরফা নির্বাচন করে বিএনপি৷ ওই বছরের ৭ জানুয়ারি থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত ২১ দিন হরতাল করেছে আওয়ামী লীগ৷ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ৮ ও ৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকলেও তা উপেক্ষা করেই মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার কাজ শেষ করে বিএনপি৷ এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ও নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ৷ তারপরও নির্বাচন করে বিএনপি৷ এরপর শুরু হয় অসহযোগ৷ টানা অসহযোগের পর ১৯৯৬ সালের ২৬ মার্চ খালেদা জিয়া সংসদে নির্দলীয় সরকারের বিল পাসের পর অসহযোগ আন্দোলন শেষ হয়৷ টানা এ আন্দোলন চললেও ১৯৯৬ সালে রাজনৈতিক সহিংসতা এত ভয়াবহ ছিল না৷ ওই এক বছরে রাজনৈতিক সহিংসতায় মারা যান ৪৯ জন৷ এর মধ্যে তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় মারা গেছেন মোট ৪১ জন৷

Bangladesch Parlamentswahlen
১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা শুরুর পর রবিবার পর্যন্ত ছয়টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও এবারের মতো এতো প্রাণহানির ঘটনা আগে আর ঘটেনিছবি: DW/M. Mamun

‘নির্বাচনের আগে প্রাণহানি ঘটে'

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশের প্রতিটি সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণহানি ঘটে৷ কিন্তু এটা খুব স্পষ্ট যে এবারের নির্বাচনের আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-প্রক্রিয়া বানচালের জন্য জামায়াত-শিবির উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সারা দেশে বোমাবাজি ও পরিকল্পিত হত্যার মতো সহিংসতার ঘটনা ঘটাচ্ছে৷ এর সবকিছুকে রাজনৈতিক সহিংসতা বললে ঠিক বলা হবে না৷ তবে নির্বাচনের দিন এত বেশি প্রাণহানি অবশ্যই আমাদের উদ্বিগ্ন করে৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আরো বেশি সতর্ক হওয়া উচিত ছিল৷ তাতে প্রাণহানি অনেক কমানো যেত৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য