ভারতে নির্বাচনের আগে
৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩কংগ্রেস নয় বছর ধরে ক্ষমতায় থাকায় এবার প্রাতিষ্ঠানিক-বিরোধী হাওয়া উঠেছে৷ পাশাপাশি, বিজেপির ভেতরে রয়েছে গুরুতর অভ্যন্তরীণ কোন্দল৷ তাহলে এই প্রেক্ষিতে, ফেডারেল ফ্রন্ট গঠনের সম্ভাবনা কতটা?
২০০৪ সালে মনে হয়েছিল কংগ্রেস জোট সরকার শরিক দলগুলির সঙ্গে পারস্পরিক সমঝোতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে সরকার চালাবে৷ এই বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই প্রথম ইউপিএ সরকার (কংগ্রেস-জোট ) বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি হাতে নিয়ে পথ চলা শুরু করেছিল৷ যেমন, মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ রোজগার গ্যারান্টি প্রকল্প৷ কিন্তু দেখা গেল, প্রচুর অর্থ ব্যয় করেও তাতে সামাজিক সম্পদ তৈরি হয়নি৷ দ্বিতীয়, ইউপিএ সরকার ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে খাদ্য সুরক্ষা আইন এবং শিল্পায়নের জন্য জমি অধিগ্রহণের মতো জনমোহিনী আইন প্রণয়ন করছে৷
তাতে আমজনতা ধরে নিয়েছে, এটা শাসকদলের ভোট কেনার একটা কৌশলমাত্র৷ ক্ষমতাসীন দলকে নির্বাচনে জেতানো ছাড়া সরকারের আর কোনো দায়বদ্ধতাই নেই৷ তা নাহলে গত নয় বছরের শাসনকালে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পালনে সরকার ব্যর্থ কেন? একের পর এক দুর্নীতিতে যখন দেশের নাভিশ্বাস, তখন অক্সিজেন দিয়ে তাকে বাঁচানো যায় না৷ তা-সে টু-জি মোবাইল স্পেকট্রাম বণ্টন হোক, কয়লাখনি বণ্টনে অনিয়ম হোক বা ভেঙে পড়া আর্থিক পরিস্থিতি হোক –সব কিছুর আড়ালে লুকিয়ে আছে সরকারের অপশাসন এবং অপদার্থতা৷
দেশের মানুষ তাই আবারো চাইছে নেতৃত্বের পরিবর্তন৷ কেন বিজেপি আরেক বার নয়? এই প্রেক্ষাপটে উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর দাবিদার হিসেবে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাম৷ সাম্প্রদায়িকতার তকমা ঝেড়ে ফেলে তিনি হিন্দু রাষ্ট্রের বদলে এখন চাইছেন সুশাসিত ভারত৷ মোদীর উত্থানকে ঘিরে বিজেপির পায়ের তলার মাটিও পিচ্ছিল হয়ে উঠেছে দলের ভেতরের অন্তর্কলহের কারণে৷ দলের ভেতরে তৈরি হয়েছে প্রবীণ নেতা এল.কে আডবানির নেতৃত্বে মোদী বিরোধী এক গোষ্ঠী৷ বিজেপি-জোট এনডিএ সরকারের সব থেকে পুরানো শরিক সংযুক্ত জনতা দল মোদীকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ করার প্রতিবাদে জোট ছেড়ে বেরিয়ে গেছে৷
একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কোনো দলই কেন্দ্রে সরকার গঠন করার মতো অবস্থায় নেই৷ তাই আঞ্চলিক দলগুলি নিয়ে ফেডারেল ফ্রন্ট গঠনের চিন্তা ভাবনা চলছে৷ অন্যভাবে বলতে গেলে সেটা হবে কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে এক গোষ্ঠী, যার মধ্যে থাকবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়, বিহারের মুখ্যমন্ত্র নীতীশ কুমার, ওড়িষার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক এবং তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা৷ এর মূল লক্ষ্য হবে রাজ্য সরকারগুলিকে স্বশাসনের আরো বেশি ক্ষমতা দেয়া, বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিকে৷ কেন্দ্রে যাদের কণ্ঠস্বর পৌঁছায় না, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক দিক থেকে যারা অবহেলিত৷ তবে ব্যক্তিত্বের সংঘাত এড়াতে এবং জোটধর্ম পালনে এহেন যুক্তরাষ্ট্রীয় ফ্রন্ট কতটা সফল হবে, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা৷